সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনা ড্রাগনের সঙ্গে ভারতের হাতির যাতে বোঝাপড়ায় কোনও ফাটল না ধরে, চিনের রেড পান্ডার সঙ্গে ভারতের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের যাতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মজবুত থাকে সেজন্য চিনেরই উদ্যোগে শুরু হয়েছিল অভিনব কূটনীতি। সেই কূটনীতির পোশাকি নাম ছিল, ‘ইনফরমাল সামিট’। বছর দেড়েক আগে চিনের ইউহান শহরের নয়নাভিরাম রিসর্টে আদতে যা ছিল দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ঘরোয়া পরিবেশে বৈঠকী আড্ডা। অর্থাৎ এর মধ্যে ছিল না করমর্দন, ফোটো সেশন, কেজো কথা, খটমট বিবৃতি এবং যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের মতো চিরপরিচিত দৃশ্যগুলো। কূটনৈতিক প্রথা ভাঙার সেই ‘উপভোগ্য প্রথা’ শুক্রবারও বজায় রাখল নরেন্দ্র মোদির ভারতও। ভারত-চিন সম্পর্ক মজবুত করার যে চিনা উদ্যোগ শুরু হয়েছিল চিনের ইউহানে, সেই রেশ জিইয়ে থাকল তামিলনাড়ুর মামাল্লাপুরমেও।
[আরও পড়ুন: জিনপিংকে স্বাগত জানাতে মহাবলীপুরমে তৈরি হল ১৮ রকমের ফল ও সবজির গেট]
শুক্রবার অপরাহ্নে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিমান চেন্নাইয়ে পৌঁছনো মাত্র তাঁকে বর্ণাঢ্য ও রাজকীয় কায়দায় অভ্যর্থনা জানানো হয়। লাল কার্পেট পেতে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বানোয়ারিলাল পুরোহিত এবং মুখ্যমন্ত্রী এডাপাড্ডি পালানস্বামী। সেখানেই একপ্রস্থ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নানা ধরনের রঙিন পোশাক পরা শতাধিক নৃত্যশিল্পী ঢাক, ছোল, মাদল বাজিয়ে গান গেয়ে, নেচে জিনপিংয়ের মন জয় করেন। তাঁদের হাত নেড়ে হাসিমুখে অভিনন্দন জানান জিনপিং। ঠিক এই সময়েই প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইটারে তাঁকে ‘মিস্টার জিনপিং, আপনাকে ভারতে স্বাগত, অনেক অভিনন্দন’ লিখে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক গুচ্ছ বার্তা শেয়ার করেন।
চেন্নাই থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের ধারে সপ্তম শতকে পল্লব রাজা দ্বিতীয় নরসিংহ বর্মনের তৈরি ইউনেস্কোর অন্যতম হেরিটেজ মন্দির শহর মামাল্লাপুরমে পায়ে হেঁটে গল্প করতে করতে পায়চারি করেন দুই দেশের প্রধান। দু’জনের মধ্যে কয়েক প্রস্থ কথা হয় মন্দির দর্শন চলাকালীনই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে পঞ্চরথ, অর্জুন মন্দির, কৃষ্ণমন্দির ঘুরিয়ে দেখান। নিয়ে যান সমুদ্র তীরবর্তী মন্দিরেও। বেশ কয়েকবার করমর্দন করতে দেখা যায় তাঁদের। ডাবের জলও খেতে দেখা
যায় তাঁদের।
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, কাশ্মীর, আকসাই চিন, অরুণাচল সীমান্ত, ডোকলাম, তিব্বত, দক্ষিণ চিন সাগর, জিনজিয়াং, উইঘুর, তাইওয়ান, হংকং সহ সাম্প্রতিককালের সবগুলি আলোচিত,দমন ইত্যাদি ইস্যুগুলি নিয়ে বেশি জোর দেবেন এবং আলোচনা করবেন। সেখানে হয়তো তাল কাটতে পারে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে। কারণ চিন পাকিস্তানের স্বার্থে কাশ্মীর ইস্যু তুলতে পারে। পালটা মোদিও হয়তো চিনের জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, পাকিস্তানের সন্ত্রাস ইত্যাদি প্রসঙ্গ তুলতে পারেন। তবে অস্বস্তি এড়াতে মূল ফোকাস থাকবে বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনাতেই। এর মদ্যেই সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা হল, মোদি ও জিনপিংয়ের মধ্যে সন্ধে সাতটায় শুরু হওয়া নৈশভোজ ও আড্ডা চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। সরকারি নিয়ম মেনে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। জানা গিয়েছে, মনোরম পরিবেশে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে ড্রাগন সম্রাটের অনেক কথাই হয়েছে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে। মাঝে মাঝে হালকা রসিকতায় এবং হাসিতে মেতে উঠেছেন দু’জনেই।
ভারত-চিন বন্ধুত্বের বার্তা দিতে মোদীর জন্য কিছু উপহারও সঙ্গে এনেছেন জিনপিং। যদিও উপহার হিসেবে কী দেওয়া হবে তা খোলসা করেনি চিনা বিদেশমন্ত্রক। তবে জিনপিংয়ের জন্য মোদির উপহারের ডালি প্রকাশ করেছে চিন সরকার। এই উপহারের মধ্যেই ধরা পড়েছে দক্ষিণ ভারতীয় হস্তশিল্পের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ঝলক। জিনপিংকে দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত নাচিয়ারকোলি ব্রাঞ্চড আন্নাম ল্যাম্প এবং তাঞ্জাভুর পেইন্টিং সরস্বতী মূর্তি তুলে দিয়েছেন মোদি। তামিলনাড়ু হস্তশিল্প উন্নয়ন নিগমের নাচিয়ারকোলির উৎপাদন কেন্দ্রে ৮ জন প্রথিতযশা হস্তশিল্পি এই ল্যাম্পটি তৈরি করেছেন। ছ’ফুট লম্বা বোঞ্জ এবং গোল্ড কোটেড এই ল্যাম্পটির ওজন ১০৮ কিলোগ্রাম। এটি তৈরি করতে ১২ দিন সময় লেগেছে। অন্য়দিকে, তাঞ্জাভুর পেইন্টিং ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্পকলা। পুরস্কার বিজয়ী শিল্পী পি লোগামাথন এই ৪ ফুটের ৪০ কিলো ওজনের মূর্তিটি তৈরি করেছেন। এ জন্য সময় লেগেছে ৪৫ দিন। উপহার পেয়ে খুশি জিনপিং।
[আরও পড়ুন: ৭৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ মুছে ফেলল স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া]
The post জিনপিংয়ের মন জয় মোদির, তবে কাশ্মীর কাঁটায় বিদ্ধ হতে পারে ‘ইনফরমাল সামিট’ appeared first on Sangbad Pratidin.