সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্র বলছে ‘পরাক্রম দিবস’। আপত্তি জানিয়ে শনিবার ‘নেতাজি জয়ন্তী’র (Netaji 125th Birth Day) দিন রাজ্য সরকার পালন করবে ‘দেশনায়ক দিবস’। আর এই দুই নামেই আপত্তি জানিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক তথা বামপন্থীদের দাবি, এই দিনটি পালন করা হোক ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে।
বিধানসভা ভোটের মুখে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে উত্তপ্ত বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চ। শনিবার নেতাজি সুভাষের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দু’টি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। এর মধ্যে একটি অনুষ্ঠান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মঞ্চে তাঁর সঙ্গে থাকার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও (Mamata Banerjee)। যদিও সেই অনুষ্ঠানের আগে কেন্দ্রের ‘পরাক্রম দিবস’ নামকরণের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে পালটা ‘দেশনায়ক দিবস’ পালন করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, এদিন দুপুর ১২টায় শ্যামবাজার নেতাজিমূর্তির সামনে থেকে ‘দেশনায়ক দিবস’ উপলক্ষে পদযাত্রা হবে। তিনি নিজে হাঁটবেন। মিছিল আসবে ধর্মতলার নেতাজিমূর্তি পর্যন্ত। দুপুর ১২টায় নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাইরেন বাজার কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন : কোভিড বিধির গেরো, বাংলায় নির্বাচনী বুথ বাড়ছে অনেকটাই, জানাল কমিশন]
বিধানসভা ভোটের মুখে নেতাজি নিয়ে বাঙালির চিরন্তন আবেগ বিরোধী তৃণমূলকে যাতে হ্যাইজ্যাক করতে না পারে, সেজন্য কোমর বেঁধেছে বিজেপিও। মমতার মোকাবিলায় রণক্ষেত্রে নামছেন মোদি। কলকাতায় বিকেলে পা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে আলিপুরের জাতীয় গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠান। সেখানে আর্টিস্ট ক্যাম্প দেখে নেতাজি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ভাষণ শেষে চলে যাবেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। যেখানে একই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা থাকায় নজর সবার। থাকবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের পর নেতাজির লেখা চিঠিপত্রের একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মানিত করবেন চার আজাদ হিন্দ সেনানীকে। নিজের ভাষণ শেষে রিমোটের সাহায্যে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মোদি।
আর পাঁচজন বাঙালির মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতাজি আবেগ প্রথম দিন থেকেই প্রবল। প্রতি বছর এই ২৩ জানুয়ারি দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করেন তিনি। এতদিন এই দিনটি দার্জিলিংয়ে পালন করতেন মমতা। কিন্তু এবছর ১২৫তম জন্মজয়ন্তীর কারণে তিনি পালন করছেন কলকাতায়। অন্যদিকে বাঙালির নেতাজি আবেগ যে কত প্রবল, প্রথম থেকেই তা নিয়ে সম্যক অবগত মোদি। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে নেতাজিকে যথাযথ মর্যাদা না দেওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ আমবাঙালির হৃদয়ে। ক্ষমতায় আসার পর সেই ক্ষোভ উপশম করে বাঙালির হৃদয় জিততে সরকারি মহাফেজখানা থেকে নেতাজি বিষয়ক ১০০টি গোপন ফাইল প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। চলতি বছর নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এই দিনটিকে ‘পরাক্রম দিবস’ নামকরণ করার পাশাপাশি বা কালকা মেলের নাম পাল্টে ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিজেও উড়ে আসছেন কলকাতায়।
[আরও পড়ুন : বিধানসভা ভোটের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার কীভাবে? বাংলায় এসে ক্লাস নেবেন শাহ]
জমি ছাড়ছেন না মমতাও। নেতাজিকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার পাশাপাশি দলগতভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীকে যথাযথ সম্মান দিতে কসুর করেননি। নেতাজির ভ্রাতুষ্পুত্র শিশির বসুর সঙ্গে প্রথমদিন থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি শিশিরবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণা বসু ও পুত্র সুগত বসুকে সাংসদ করেছিলেন তিনি। কেন্দ্রের পরাক্রম দিবস নামকরণের বিরোধিতা করে এই দিনটিকে ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন। পথে নেমে মিছিল করছেন। দাবি করেছেন ২৩ জানুয়ারিকে জাতীয় ছুটি ঘোষণার।