সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হীরক রাজা তিনি। তাঁর ব্র্যান্ডের গয়নার দাম শুরু হয় ৫ লাখ টাকা থেকে। বহুমূল্য গয়নার ব্যবসায় যার সূচক শুধু ঊর্ধ্বমুখীই থেকেছে সেই নীরব মোদির ব্র্যান্ড এখন ইডির স্ক্যানারে। সিবিআই দুটি মামলা রুজু করেছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুক্রবারই কোটি কোটি টাকার জালিয়াতি ও ঋণখেলাপির অভিযোগে নীরব মোদি, তাঁর স্ত্রী এমি, ভাই নিশাল ও মামা মেহুল চোখসির বিরুদ্ধেও ‘ডিফিউশন নোটিস’ জারি করল ইন্টারপোল। প্রশ্ন উঠেছে, যদি সত্যিই ইন্টারপোল নোটিস জারি করে তাহলে কেন এখনও নিউ ইয়র্কের বিলাসবহুল হোটেলে ব্যক্তিগত বাংলোয় সপরিবারে বহাল তবিয়তে থাকা নীরব মোদিকে গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে না পুলিশ? তবে কী পুরোটাই গট-আপ, না বিরোধীদের চাপে পড়ে লোক দেখাতে নীরব মোদির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করা হল? যদিও এদিন দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার বা সিবিআইয়ের তরফে কোনও বিবৃতি জারি হয়নি। এদিকে, নীরব মোদি কেলেঙ্কারির জেরে ফের ৮ জনকে সাসপেন্ড করল পিএনবি। আগেই ১০ জন সাসপেন্ড হয়েছিল। নিয়মবহির্ভূতভাবে নীরব মোদিকে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ তাদের সাসপেন্ড করা হয়। এখনও পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে সাসপেন্ড করল পিএনবি।
[নজরে পড়ার আগেই দেশ ছেড়ে চম্পট মোদির, বাজেয়াপ্ত ৫১০০ কোটির সম্পত্তি]
পাঞ্জাব ন্যাশন্যাল ব্যাংকের সঙ্গে (পিএনবি) প্রায় ১১,৩৬০ হাজার কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন নীরব। হীরে, গয়না, সোনা-সহ তাঁর ৫,১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাতে কী, নিউ ইয়র্কে বিলাসবহুল জে ডব্লু ম্যারিয়টের এসেক্স হাউসে বিলাসবহুলভাবেই ছুটি কাটাচ্ছেন তিনি। ১৬০ সেন্ট্রাল পার্ক সাউথে হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্ট দুই’ই রয়েছে। সেখানেই দিব্যি রয়েছেন নীরব। ম্যানহাটনে সবচেয়ে ‘প্রিমিয়ার লোকেশন’-এ বৃহস্পতিবার রাতেও নীরবকে দেখা গিয়েছে। শুক্রবারেও গুজরাটের ছ’টি কর্মশালা, রাজধানীর ডিফেন্স কলোনি, চাণক্যপুরীর হীরের বুটিকে তল্লাশি চালিয়ে চোখ কপালে উঠছে গোয়েন্দাদের। মিলেছে রাশি রাশি হীরের গয়না ও সোনার বাটও। এদিনও তল্লাশি হয়েছে মুম্বই, সুরাট ও দিল্লির শোরুম, ওয়াকর্শপ-সহ ১৩টি জায়গায়। তল্লাশি হয়েছে মুম্বইয়ের কালা ঘোড়ার হীরের বুটিকেও। বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সে ভারত ডায়মন্ড বউরসের ফায়ারস্টার ডায়মন্ড প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসে হানা দেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। সেখান থেকেও মেলে একাধিক গয়না ও সোনা-রুপোর বাট। কুরলার পশ্চিমে মোদির নিজস্ব অফিসে, দক্ষিণ মুম্বইয়ের আইটিটিএস হাউস, লোয়ার প্যারেলের পেনিনসুলা বিজনেস পার্কেও চলে তল্লাশি। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব জুড়েই এবার নীরবের সম্পত্তির দিকে চোখ রাখছেন গোয়েন্দারা। তল্লাশি চলছে হংকং, লন্ডন ও মার্কিন মুলুকের শো-রুমেও।
[বৃহত্তম ব্যাংক কেলেঙ্কারির নাটের গুরু, কে এই ‘হীরক রাজা’ নীরব মোদি?]
বৃহস্পতিবার সিবিআই তাঁর নামে ‘লুক আউট’ নোটিস জারি করেছে। এদিনই ইডি তাঁর ছ’টি প্রপার্টি সিল করে দিয়েছে। এদিকে, একাধিক ব্যাংককর্মীর সঙ্গে মিলে হীরক ব্যবসায়ী নীরব কীভাবে পিএনবি-সহ একাধিক ব্যাঙ্কের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন, তা ধীরে ধীরে জানা যাচ্ছে। পিএনবির মতো প্রতারণার কারসাজি যদি অন্য ব্যাংকে ব্যবহার করা হয়, তাহলে আরও বিপুল অঙ্কের অর্থ জালিয়াতি ধরা পড়বে। তদন্তকারীদের ধারণা, এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য ব্যাংকের ‘বায়ারস ক্রেডিট’ মিটিয়ে দিত মোদির সংস্থাগুলি। প্রায় ১৫০টি জাল এলওইউ ইস্যু করা হয়েছে। প্রথম এলওইউ ইস্যু করা হয় ২০১১ সালে। সাধারণ, সমঝোতা পত্র (এলওইউ)গুলির ৯০ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে মেয়াদ শেষ হলেও, এক্ষেত্রে সেগুলো ফের ব্যবহার করা হয়েছে। তাই জন্যে জালিয়াতি ধরা পড়েনি গত সাত বছরে। দেশ-বিদেশে খ্যাত তাঁর গয়নার ব্র্যান্ড। বলিউড থেকে হলিউড তাবড় সেলিব্রিটিরা নিজেদের সাজিয়ে তোলেন নীরব মোদির ডিজাইনার গয়নায়। ২০১০ সালে নিজের নামে ব্রান্ডেড গয়নার ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। মাত্র ৪৬ বছর বয়সেই ফায়ারস্টার ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন।
The post নিউ ইয়র্কের হোটেলে বহাল তবিয়তে নীরব মোদি, ধনকুবেরকে নোটিস ইন্টারপোলের appeared first on Sangbad Pratidin.