সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: কংগ্রেস (Congress) গড়ে বড় ধাক্কা দিয়ে একুশের আগে বড় অস্ত্র হাতে পেল তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে শাসকদলে যোগ দিলেন বাদুড়িয়ার অতি পরিচিত, জনপ্রিয় বিধায়ক কাজি আবদুর রহিম। শনিবার তৃণমূল (TMC) ভবনে এসে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে তিনি হাতে তুলে নিলেন তৃণমূলের দলীয় পতাকা। তাঁর দলত্যাগে উত্তর ২৪ পরগনায় কংগ্রেসের সংগঠন প্রায় সাফ হয়ে গেল বলেই হিসেব রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এই জেলায় তিন কংগ্রেস বিধায়কের আর একজনও রইলেন না। ফলে লড়াইয়ের জন্য সৈনিকই নেই অধীরদের হাতে।
প্রয়াত সোমেন মিত্রর পর অধীর চৌধুরি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনে রদবদল করেছিলেন। জেলাস্তরের অনেক দায়িত্বপ্রাপ্তদের সরিয়ে নতুন মুখ আনা হয়েছিল। দলের অন্দরে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল তখন থেকেই। উত্তর ২৪ পরগনা গ্রামীণের জেলা সভাপতি পদে ছিলেন দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় বিধায়ক কাজি আবদুর রহিম। সোমেন মিত্রের একদা রাজনৈতিক ‘গুরু’ গফফর সাহেবের ছেলে দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে ওই এলাকায় গড় রক্ষা করে গিয়েছেন। কিন্তু অধীর চৌধুরি জেলাস্তরে রদবদল করতে গিয়ে তাঁকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদে বসান। তাতেই তাঁর বিরাগভাজন হন বলে অন্দরের খবর।
[আরও পড়ুন: ‘মিথ্যার ঝুড়ি নিয়ে রাজ্যে এসেছেন’,অমিত শাহর সফর নিয়ে তীব্র কটাক্ষ তৃণমূলের]
এরপর ধীরে ধীরে দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই দলবদলের ভাবনা আবদুর রহিমের। এবং সুযোগ বুঝে এমন জনপ্রিয়, অভিজ্ঞ বিধায়ককে দলে টানতে বিশেষ সময় নেয়নি তৃণমূলও। শেষপর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাসফুল শিবিরে নাম লেখালেন তিনি। দীর্ঘদিনের দল ছেড়ে নতুন রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আবদুর রহিমের প্রতিক্রিয়া, বিজেপি বিরোধী লড়াই আরও জোরদার করতে তৃণমূলই সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই তাদের লড়াইয়ের শরিক হলেন।
[আরও পড়ুন: আলু–পিঁয়াজের কালোবাজারি রুখতে শহরের একাধিক বাজারে অভিযান কলকাতা পুলিশের]
উত্তর ২৪ পরগনার তিন বিধানসভা কেন্দ্রে ‘হাত’ শক্ত ছিল। কিন্তু আবদুর রহিম তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় আর একজনও কংগ্রেস বিধায়ক রইল না। ফলে একুশে সিপিএমের সঙ্গে জোট বাঁধলেও এই জেলায় লড়াইয়ের জন্য যোগ্য সৈনিক নেই অধীরদের হাতে। এ নিয়ে অধীর চৌধুরির প্রতিক্রিয়া, ”বাদুড়িয়ার কংগ্রেস বিধায়ক গত ছ’মাস ধরে তৃণমূলে যোগদান করবেন কি করবেন না সেই ভাবনায় ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের কাছে খবর ছিল। বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যে আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় বসিরহাটের গান্ধী গফফর সাহেবের ছেলের, কংগ্রেস দল ছেড়ে ধান্দার জন্য পলায়ন অনৈতিক হবে। যাই হোক ওনার মনে হয়েছে তৃণমূল পার্টির এই পড়ন্ত বেলায় যোগদান করলে কিছু লাভ হতে পারে। বাংলার ‘দিদি’ , আপনি মনে করতে পারেন কংগ্রেস দল ভাঙালাম, বিরাট কিছু করে ফেললাম। কিন্তু মনে রাখবেন, সাপুড়েকে সাপের কামড়েই মরতে হয়। খুব তাড়াতাড়িই আপনি দেখবেন, তাসের ঘরের মত আপনার পার্টি ভোটের আগেই কেমন ভেঙে পড়ছে, মিলিয়ে নেবেন ‘দিদি’। যে দল ভাঙানোর খেলা আপনি বাংলায় শুরু করেছিলেন সে খেলাতেই তৃণমূল পার্টি খতম হবে।”
এদিন তৃণমূলের শক্তি বাড়িয়ে আরও দুজন যোগ দিয়েছেন। বিজেপি মহিলা মোর্চা নেত্রী মৌমিতা বসু এবং আরেক বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোর ভাইপো সিদ্ধার্থ মাহাতো।
ছবি: পিণ্টু প্রধান।