প্রকল্প ভট্টাচার্য: সেই ১৯৮২ সাল থেকেই শুনে আসছি চেন্নাইতে রেন নাই। বাকি দেশে যখন বর্ষাকাল, তখন তামিলনাড়ুতে বৃষ্টি হয় না। অক্টোবর-নভেম্বরে মৌসুমী বায়ু ফেরত যাওয়ার সময় কৃপা করে যা জল ঢালেন, তা দিয়েই গোটা রাজ্যে বছর কাবার করতে হয়। খুব আশ্চর্য লাগতো রেড হিলসের পুণ্ডি রিসার্ভার দেখে। এইরকম চারটে রিসার্ভারের জল দিয়ে একটা শহরের সমস্ত জলের প্রয়োজন মেটানো যাবে কি! পানীয় জলের হালত চিরকালই খারাপ এখানে, সেটা আমরা কিনেই খাই সারাবছর, অথবা বাড়িতে ফিলটার বসিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শ্রীমতী জয়ললিতা প্রত্যেক বাড়িতে রেনওয়াটার হার্ভেস্টিং বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত তিন বছর যে ভাল করে বৃষ্টিই হয়নি!
ফলে বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। ২০১৫ সালে চেন্নাইতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। অপুরণীয় ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও অনেকে ভেবেছিল, যাই হোক আগামী কয়েক বছর শহরটার জলসংকট থাকবে না। কিন্তু কে জানত, তারপর থেকেই বরুণদেব মুখ ঘুরিয়ে নেবেন! নভেম্বরে যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছিল, তাও কমে এল। ফলে মাটির তলার জল চলে গেল আরও নিচে। বড় বড় অফিস এবং ফ্ল্যাটের শক্তিশালী মোটর টেনে নিতে লাগলো যেটুকু জল পাওয়া যাচ্ছিল, আর সাধারণ মানুষের শুরু হল আকাল। জল নেই, একেবারেই। সরকারি জলের গাড়ি এক একটা এলাকায় জল সাপ্লাই দিলেও, সারিসারি ঘড়া এবং বালতির লাইনে তা ফুরিয়ে যায় শীঘ্রই! ছোট এবং মাঝারি হোটেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, স্কুলে দেওয়া হচ্ছে হাফ ছুটি, এমনকি বেশ কিছু অফিসে জোর করেই বাধ্য করা হচ্ছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে। কারণ একটাই, জল নেই!
গ্রীষ্মের ছুটিতে অনেকেই বাধ্য হয়ে চলে গেলেন নিজেদের গ্রামে। দক্ষিণ তামিলনাডুতে তবু মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, নদীনালা আছে, তাই তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কতদিনই বা আর নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে জলের অভাবে পালিয়ে বেড়ানো যায়! যাঁরা টাকা দিয়ে কিনতে পারছেন, আকাশছোঁয়া দামে জল কিনে সারাদিনে ঘণ্টা খানেকের মতো জল পাচ্ছেন। আর বেশিরভাগ মানুষ যাঁরা কিনতে পারছেন না? আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন যদি বৃষ্টি নামে। দু’দিন অল্প বৃষ্টি হল কিন্তু মাটিতে পড়েই সব জল মুহূর্তের মধ্যে শুষে গেল। হিসাবমতো বর্ষা আসতে এখনও তিনমাস বাকি। ততদিন যে কীভাবে চলবে…
মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ১৮ বছর আগে যেমন হত, তেমনভাবে রেলের বগিতে জল সরবরাহের ব্যবস্থা শুরু হবে শীঘ্রই। কিন্তু, এইভাবে গোটা তামিলনাড়ু জল পাবে কি? দু’হাজার বছরেরও আগে ভুয়োদর্শী কবি তিরুভল্লুভর তাঁর এক কুরল-এ লিখেছিলেন, “নীরিন্রু অমৈয়াদু উলকনিন য়ারইয়ারক্কুম ভানিন্রু অমৈয়াদু ওড়ুক্কু।” অর্থাৎ, জল ব্যতীত কোনও ব্যক্তিই যেমন দৈনন্দিন কার্যনির্বাহ করতে পারেন না, তেমনই বৃষ্টি ব্যতীত জলধারা বইতেও পারে না।” এ লেখা আজও কত প্রাসঙ্গিক, এবং নিষ্টুরভাবে সত্য!
The post চেন্নাই ‘রেন নাই’! appeared first on Sangbad Pratidin.