সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘বাংলার গর্ব মমতা’। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রশান্ত কিশোরের মাস্টারস্ট্রোক! রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের ১ লক্ষ কর্মী এবার এই প্রকল্পের প্রচারে নেমে পড়বেন। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নেতাকর্মীদের প্রাথমিক পাঠও দিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
কর্মসূচির নাম শুনলেই বোঝা যাচ্ছে, একুশের ভোট বৈতরণী পার হতে পুরোপুরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তির উপর নির্ভর করে এগোতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বলা ভাল প্রশান্ত কিশোর। কারণ নির্বাচন কৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, পরোক্ষে পিকেই এখন তৃণমূলের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তাঁর মস্তিষ্ক থেকেই বেরিয়েছে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচি। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের বৈঠকে যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পিকের টিম তৃণমূল নেতাদের ভাবগতিক পর্যবেক্ষণ করল, আর প্রশান্ত নিজে যেভাবে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন, তা দেখে অন্তত সেটাই মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তির উপর বাজি ধরে প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) কোনও ভুল করলেন না তো? প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও এই মমতার ভাবমূর্তিকে সামনে রেখেই লড়াইয়ে নেমেছিল তৃণমূল। দলনেত্রী নিজেই লোকসভার লড়াইটাকে মোদি বনাম মমতার লড়াই হিসেবে দেখতে চাইছিলেন। স্লোগান তোলা হয়েছিল, বিয়াল্লিশে ৪২ চাই। বলা বাহুল্য, সেই প্রচেষ্টায় আশনুরূপ ফল পায়নি এরাজ্যের শাসকদল। দুই থেকে বিজেপি উঠে এসেছে আঠারোই। আর তৃণমূল ৩৪ থেকে নেমে এসেছে ২২-এ।
[আরও পড়ুন: ‘এটা বাংলা, দিল্লি নয়’, গোলি মারো বিতর্কে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি মমতার]
লোকসভার ফলাফলেই অশনি সংকেত মিলেছে। মমতা বনাম মোদির লড়াইয়ে তৃণমূলনেত্রী কিন্তু খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি। তাছাড়া, মমতার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিরোধীরাও কসুর করছে না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মূল যে অভিযোগ, সেটি হল সংখ্যালঘু তোষণ। লোকসভায় মূলত এই অস্ত্রে ভর করেই সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। তারপরও সংখ্যালঘু তোষণ অস্ত্রে সমানে শান দেওয়া চলছে। মমতার গায়ে ‘দেশবিরোধী’, ‘দেশদ্রোহী’ তকমা সেঁটে দেওয়ার চেষ্টাও কম হয়নি। এবং তাতে অনেকাংশে সাফল্যও পেয়েছে বিজেপির ট্রোল আর্মি। সেই সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ‘সততার প্রতীক’ ভাবমূর্তি নষ্ট করতেও যথেচ্ছ চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে হাতিয়ার কাটমানি, সারদা, নারদের মতো ইস্যু। বিরোধীদের অভিযোগ, দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের আড়াল করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন: ‘এটা বাংলা, দিল্লি নয়’, গোলি মারো বিতর্কে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি মমতার়়]
সব মিলিয়ে, বিজেপি তথা বিরোধী শিবির আপাতত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৎ, এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্রেফ মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে হাতিয়ার করে একুশের কঠিন লড়াইয়ে নামাটা যে ঝুঁকিপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। এক্ষেত্রেও প্রশান্ত কিশোর চাইছেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো মমতাকেও উন্নয়নের কাণ্ডারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে একুশে বাজিমাত করতে। কিন্তু লড়াইটা যদি মোদি বনাম মমতা হয় সেক্ষেত্রে প্রশান্তের এই পদক্ষেপ, কতটা কার্যকর হবে, তা দেখার মতো বিষয় হতে চলেছে।
The post বাজি মমতার ভাবমূর্তি, একুশের আগে বড়সড় ঝুঁকি নিলেন প্রশান্ত কিশোর! appeared first on Sangbad Pratidin.