জীবনের ওঠানামা, ভাঙন, অতিমারীর অনিশ্চয়তাও থামিয়ে দিতে পারেনি প্রিয়াঙ্কা সরকারকে (Priyanka Sarkar)। তাঁকে মোবাইলে ধরলেন শম্পালী মৌলিক।
প্রশ্ন: এই করোনার দিনগুলো সহজকে নিয়ে একা পার করা কতটা কঠিন?
উত্তর: কঠিন তো বটেই। প্রথমত, আমার কোনও কাজ হচ্ছিল না মাঝখানে। বাড়িতে এতদিন আটকে। কোনও ক্লু ছিল না যে, কবে থেকে আবার কাজগুলো শুরু হবে। একটা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন ছিল। সেই মার্চ থেকে লকডাউন। সহজ নতুন স্কুল জয়েন করেছে ক্লাস ওয়ানে, কিন্তু এখনও একদিনও স্কুল যায়নি। ফলে ও তো নিজের বয়সি কারও সঙ্গে মিশতে পারছে না।
প্রশ্ন: আপনি একটা টেলিভিশন শোও তো করছিলেন।
উত্তর: সেটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। কারণ ট্র্যাভেলিং শো ছিল। পাড়ায় পাড়ায় যাওয়াটাই ইউনিক ব্যাপার ছিল, ওই শোয়ে। এখন সেটা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: মনখারাপ গ্রাস করেনি?
উত্তর: অবভিয়াসলি। আমার জন্য এটা ডিপ্রেসিং ছিল। তাছাড়া ‘সুরিন্দর ফিল্মস’-এর ছবিটা, যেটা যশ-এর সঙ্গে করছিলাম, সেটার সামান্য শুটিং বাকি আছে। বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। আটকে গেল। তারপর দেশে কোথাও আউটডোর করার ভাবনা চলছিল। কিন্তু সেটাও আটকে গেল। সোহমের সঙ্গেও আমার একটা ছবি রেডি হয়ে আছে। কিন্তু রিলিজের প্ল্যান আটকে গেল। সবমিলিয়ে খুবই ডিপ্রেসিং। তবুও এখন একটু বেটার।
প্রশ্ন: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের কথা চলছে?
উত্তর: হ্যাঁ, ‘এসকে মুভিজ’-এর ছবি। খুব ভাল প্রোজেক্ট। সম্ভবত ওটাই আমার পরের কাজ হতে চলেছে। আর ‘হইচই’-এর ‘হ্যালো সিজন থ্রি’ হওয়ার কথাও রয়েছে।
প্রশ্ন: আর ব্যক্তিগত জীবন? রাহুলের সঙ্গে বিচ্ছেদের মামলা কি মিটেছে?
উত্তর: না, কারণ কোর্টের কাজকর্ম বন্ধ। আমাদের মতো করে আমরা ঠিকই আছি, বাকিটা লিগাল প্রসিডিওর। সহজের দিদা অর্থাৎ আমার মা এসে থাকে মাঝে মাঝে। মাসে একদিন রাহুলের সঙ্গে সহজ দেখা করে। আমি রাহুলের বাড়িতে সহজকে নিয়ে গিয়েছি গত দু’-তিনমাস ধরে। ও তো বাচ্চা, ওর যাতে মনটা ভাল থাকে।
প্রশ্ন: এই দীর্ঘ লকডাউন কী শেখাল?
উত্তর: ভীষণভাবে শেখাল যে, কেয়ারিং হতে হবে। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হল। স্কুলের বন্ধুদের গ্রুপ তৈরি হল মোবাইলে। যাদের সঙ্গে বহুদিন যোগাযোগ নেই, তাদের মেসেজ করলাম। হয়তো এমনি সময় করতাম না। লকডাউন বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কারা সত্যিই আমার প্রতি কনসার্নড। বলছি না, খোঁজ না নিলেই কনসার্নড নয়। তবে প্রায়োরিটিগুলো চোখের সামনে চলে এসেছে।
প্রশ্ন: শোনা গিয়েছে, আপনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন তথাগতর সঙ্গে আপনার ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছে। ঠিক?
উত্তর: তথাগতর সঙ্গে ব্রেক-আপ-এর আগে তো কিছু হতে হবে। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। নিশ্চয়ই দূরত্ব তৈরি হয়েছে ওর আর আমার মধ্যে, এটা লকডাউনের জন্যই। কথাবার্তা অনেক কম হচ্ছে। বেরনো, আড্ডা দেওয়ার নর্মাল রুটিন তো আর নেই, সেখান থেকেই দূরত্ব। বাট উই আর গুড ফ্রেন্ডস। তবে এটা ঠিক, কিছু বদল হয়েছে। আমরা যখন যে অ্যাসোসিয়েশনে থাকি, সেখানেই ফুল টাইম থাকি। কাজের জায়গা ঠিক আছে কিন্তু বন্ধুত্বের যোগাযোগটা কমে গিয়েছে।
প্রশ্ন: আগে প্রিয়াঙ্কার সব ছবিই তথাগত তুলতেন। এখন অন্য দু’জনের নামও পাচ্ছি।
উত্তর: একেবারেই নয়। আনলক ফেজে তথাগতর সঙ্গে একটা শুট করেছি। আর সৌরভ আগেও আমার ছবি তুলেছে, এসভিএফ-এর প্রোমোশনের অনেক কাজ ও করে। শিলাদিত্যর সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলাম, ভাল লেগেছে কাজ করে। ইনফ্যাক্ট তথাগতর সঙ্গেও একটা কাজ সেভেন্টি পার্সেন্ট হয়ে আছে, এই অবস্থায় আটকে গেল।
প্রশ্ন: এই অতিমারীর দিনে প্রিয়াঙ্কার একটা অন্য রূপও দেখা গিয়েছে, যিনি সংসার-বাচ্চা সামলেও ফুটপাতবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যে ত্রিপলও বিলি করেছেন।
উত্তর: আমি কয়েকটা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বহু বছর ধরেই। কিন্তু খুব একটা বলি না। কারণ, এটা আমার ভাল লাগা। স্পেশ্যালি বাচ্চাদের জন্য করতে ভাল লাগে। তবে হ্যাঁ, আমাকে দেখে যদি আরও চারটে মানুষ এগিয়ে আসে তাহলে খুব ভাল হয়। সেই সময় লকডাউন আর ডিপ্রেশনে ডুবে আমি, তখন দেখেছি কত মানুষ বিপর্যস্তদের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমফানের সময় সেটা। আমি ফুটপাতবাসী বাচ্চাদের পড়াশোনা দেখেছি, ওরা কিন্তু দারুণ চেষ্টা করে। কয়েকটা বাস রয়েছে ‘স্কুল অন হুইল’ বলে। তারা ঘুরে ঘুরে ছোটদের ক্লাস করায়। আমি তাদের সঙ্গে অনেক বছর ধরে যুক্ত। এখন সেই বাসগুলোও বন্ধ। কারণ কাজটা করা যাচ্ছে না এই প্যানডেমিকে। বেশ কয়েকজন আছে যারা নিজেরা স্টুডেন্ট, তারা ওই সব জায়গায়, বস্তিতে গিয়ে পড়াচ্ছে বাচ্চাদের। পড়াশোনা করলে গিফ্ট পাওয়া যায়- এই মোটিভেশনটুকু দিতে আমি ওদের পাশে দাঁড়িয়েছি জাস্ট। আমারও মন ভাল থাকে ওদের সঙ্গে সময়
কাটালে (হাসি)।
The post ফের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে ব্রেক-আপ? Exclusive সাক্ষাৎকারে অকপট প্রিয়াঙ্কা appeared first on Sangbad Pratidin.