সুলয়া সিংহ ও কিশোর ঘোষ: শহর কলকাতার বারোয়ারি দুর্গাপুজো(Kolkata Durga Puja 2023) আজ আর কেবল সাধারণ ঠাকুর দেখায় আটকে নেই। বরং তা পক্ষান্তরে চারু ও কারু শিল্প দর্শন। উত্তর ও দক্ষিণের বিখ্যাত পুজোগুলো প্রতিবারই থিম বা পুজো ভাবনায় চমকে দিচ্ছেন রুচিশীল দর্শককে। যেহেতু অধিকাংশ পুজোর নেপথ্যে কারিগর কোনও শিল্পী। উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জ্জী পার্ক (Jagat Mukherjee Park) পুজো কমিটি এবার সেইসব শিল্পীদের নেপথ্য অনুপ্রেরণাকে সামাজিক এবং আন্তরিক স্বীকৃতি দিল। তাদের এবারের থিম ‘ফুলদি’। কে এই ফুলদি?
ফুলদি হলেন ফুলকুমারী দাশ ওরফে সোমা দাশ। এই ফুলদিরা আছেন বলেই শিল্পের গাছ আর্ট কলেজে নতুন ফল ধরে, জন্মায় তরুণ প্রতিভাবন শিল্পী। যাঁদের জগতজোড়া নামে গর্বিত হয় দেশ-কাল-সমাজ। সোজা বাংলায় ফুলদি হলেন আর্ট কলেজের মডেল। যাঁকে ও যাঁদের স্টাডি করেই রং, লাইন, আলো-ছায়া গভীরতা শেখেন তরুণ শিল্পীরা। যদিও এই পেশার মানুষের মনে বার বার প্রশ্ন জেগেছে, শৈল্পিক প্রয়োজনে শরীর অনাবৃত করায় ঠিক কোথায় দোষ রয়েছে? কেন সমাজ মেনে নিতে পারে না? ন্যুড স্টাডির নিন্দা কেন?
[আরও পড়ুন: পুজোর ছুটিতে রিল্যাক্স করুন ঝান্ডি ইকো হাইটস-এ, রইল সুলুক সন্ধান]
জগৎ মুখার্জ্জী পার্ক এবার তাদের থিম ভাবনায় সমাজের এই প্রান্তিক মানুষেরই গল্প শোনাবে। যাঁর নেতৃত্বে রয়েছেন শিল্পী পরিমল পাল। তাঁর কথায়, শুধু ফ্রেমবন্দি ক্যানভাস বা ভাস্কর্য নন, এবার ওঁরা (মডেলরা) দীর্ঘদিনের অবহেলা কাটিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াবেন। দশভুজার আরাধোনায় সরাসরি সম্মান জানানো হচ্ছে পেশাদার মডেল ফুলদি ওরফে সোমা দাশকে। তিনিই এবার এই পুজোর ‘মাতৃশক্তি’।
[আরও পড়ুন: প্রবীণদের আশীর্বাদেই শারদ সূচনা, বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের জন্য অভিনব উদ্যোগ এই পুজোর]
শিল্পের অনুপ্রেরণা যেহেতু মডেল, তাই রং-বেরংয়ের ক্যানভাসে সেজে উঠছে মণ্ডপ। প্রবেশদ্বারে থাকছে একটি রঙের ধারা। এছাড়াও থাকছে ইলুইশন পেন্টিং। দেখানো হয়েছে সেই ষোলো বছর বয়স থেকে ফুলদির জার্নি- গ্রাম থেকে শহর। মণ্ডপের সামনেও থাকছে ফুলদির পোর্ট্রেট। থাকছে একটি ভাস্কর্য। এছাড়াও রঙ, তুলি, পোর্ট্রেট দিয়েই সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ। এইসঙ্গে রাজা রবি বর্মা, হেমেন মজুমদার, অমৃত শেরগিলদের মতো বিখ্যাত শিল্পীদের পোর্ট্রেটের রেপ্লিকায় বিষণ্ণ-রঙিন হবে জগৎ মুখার্জ্জী পার্কের অন্দরসজ্জা। উল্লেখ্য, কলকাতার অন্যতম সেরা পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন যাঁকে নিয়ে থিম, সেই ফুলদি। এর চেয়ে বড় সামাজিক বার্তা হতে পারে না।