অভিরূপ দাস: টুক করে গিলে ফেলেছিলেন ব্লেড। নিজেকে নিজে খুন করার চেষ্টায়। দুর্গোৎসবের আগেই অন্ধকার নেমে আসত বাড়িতে। এলাকায়। সাদা অ্যাপ্রন পরে সে আঁধার আটকালেন চিকিৎসকরা। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে প্রাণ বাঁচল বছর ত্রিশের প্রবীর পালের (নাম পরিবর্তিত)। হুলস্থুল যাঁকে নিয়ে, সেই প্রবীর পাল (নাম পরিবর্তিত) উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অসুখে আক্রান্ত। ওষুধ খেতেন না নিয়মিত। এমন বিষয়কে মারাত্মক বলছেন মনোবিদরা। মানসিক অবসাদ বাড়তে বাড়তে জন্ম নেয় আত্মহত্যার ইচ্ছা। যেমনটা হয়েছিল প্রবীরবাবুরও। একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আগেও। এবার খেয়ে নিয়েছিলেন আস্ত একটা ব্লেড। ভুলবশত এমন জিনিস গিলে ফেললে কিছু না খাওয়াই শ্রেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে হয়েছিল উল্টোটা। ব্লেড খেয়ে এক থালা ভাত খেয়েছিলেন প্রবীর। তাতে চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল আরও। প্রথমে বারাসত হাসপাতাল যান তিনি। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় আরজিকর হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খাবারের চাপে খাদ্যনালিতে গেঁথে গিয়েছিল ব্লেডটা।
[আরও পড়ুন: অভিষেকের অফিসের বাইরে থালা বাজিয়ে বিক্ষোভ, আটক মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের প্রার্থীরা]
গলার চারপাশ গিয়েছিল ফুলে। ছোট কয়েন কিম্বা ভোঁতা কোনও জিনিস বের করা সহজ। ব্লেড যেহেতু ধারালো তা বের করার সময় আশপাশের নরম অংশ ছিন্নভিন্ন হতে পারে। হাসপাতালে আইসিএউ, সিসিইউ তৈরি ছিল। আরজিকর হাসপাতালে রোগী আসার পর দেরি করেননি কান, নাক, গলা বিভাগের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়। অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন ডা. দেবব্রত দাস, ডা. ইন্দ্রনাথ কুণ্ডু। ডা. দেবব্রত দাসের কথায়, খাদ্যনালি থেকে ব্লেড বের করা সহজ বিষয় নয়। ধারালো ধাতব বস্তু হওয়ায় তা বের করতে হয় অত্যন্ত সন্তর্পণে। নয়তো খাদ্যনালির আশপাশের এলাকা ছিন্নভিন্ন হতে পারে।
হাইপোফ্যারিঙ্গোস্কোপির মাধ্যমে বের করা হয় ব্লেডটা। সময় লাগে প্রায় চল্লিশ মিনিট। যেহেতু মানসিক অবসাদের রোগী তাই ব্লেড বের করার পরও তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। কাউন্সেলিং করেন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের চিকিৎসকরা। মনোবিদরা জানিয়েছেন, মনের অসুখের মধ্যে আছে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, ইটিং ডিজঅর্ডার, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনের অসুখের উপসর্গ হিসাবে চুপচাপ বসে থাকা, চিৎকার-চেঁচামেচি, জিনিসপত্র ভাঙচুর, মারধর, আত্মহত্যার কথা বলা ও চেষ্টা করা ইত্যাদি দেখা যায়। এ রকম হলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।