সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আঁতুড়ঘরের বাইরে কান খাড়া করে অপেক্ষা করছিল একটা জটলা৷ বর্ষবরণের রাত৷ কিন্তু, কোথাও তেমন আলো জ্বলছে না৷ কান পাতলে শোনা যায় শুধু গোঙানির শব্দ৷ হঠাত্ সেটাও থেমে গেল৷ কানে এল একটা মিহি গলার চিৎকার৷ সদ্যোজাতের কান্না৷ অমনই নড়েচড়ে উঠল ভিড়টা৷ ঘরের ভিতরে ঢুকল একজন৷ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়েও এল৷ হাতে কাপড়ে মোড়া একটি শিশু৷ হাত পা নাড়ছে৷ চেঁচাচ্ছে৷ ভিড় থেকে আরেকজন এগিয়ে এসে মুখের ভিতর কাপড় গুঁজে দিল শিশুটির৷ পাশেই মাঠ, সেখানে মাটি কুপিয়ে গর্ত খুঁড়ে অপেক্ষা করছিল একজন৷ জটলাটা সেখানে এল৷ শিশুটিকে গর্তে শুইয়ে চাপা দিল মাটি৷ তারপর সন্তর্পণে ফিরে এল ঘরে…৷
(লেকটাউনে ধর্ষিতা নাবালিকা ভিক্ষুক)
ঘটনা মধ্যপ্রদেশের৷ ঘটনাক্রম কাল্পনিক৷ তবে পুলিশের ধারণা, এভাবেই ১৩ বছরের এক আদিবাসী মায়ের সন্তানকে আঁতুড়ঘর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জীবন্ত কবর দিয়েছে মেয়েটির পরিজনরা৷ পারিবারিক ‘সম্মান রক্ষার্থে’৷ যুক্তি অকাট্য – “বাপের ঠিক নেই৷ মায়ের শরীরটাকে জোর করে ভোগ করেছিল কয়েকটা পিশাচ৷ এমন সন্তান পৃথিবীর আলো দেখলে তো ডুবে মরতে হবে পরিবারকে৷ তাই যা হয়েছে ভালর জন্যই হয়েছে৷ বড় হলে এর জন্য বাবা-মাকে ধন্যবাদ দেবে মেয়ে৷” কুর্কীর্তি ফাঁস হওয়ার পর হাবেভাবে এমনটাই বুঝিয়েছে পরিবার৷ কৃতকর্মের জন্য লজ্জা নেই তাদের৷ কেনই বা হবে? লজ্জা ঢাকতেই তো এমন কাজ৷
শেষ পর্যন্ত অবশ্য এত গোপনীয়তা মাঠে মারা গিয়েছে৷ শুক্রবার মধ্যপ্রদেশের খান্ডালগ-আমুর গ্রাম থেকে ওই সদ্যোজাতের দেহ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ৷ প্রকাশ্যে এসেছে গোটা ঘটনাটিও৷ আর তারপরেই সামনে এসেছে একের পর এক প্রশ্ন৷ ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছে শিক্ষিত সমাজ৷
প্রশ্ন তুলেছে কেন সমাজের দোহাই দিয়ে এই নির্মম হত্যা? এভাবে সদ্যোজাতকে জীবন্ত কবর না দিয়ে কেন গর্ভপাত করানো হয়নি ১৩ বছরের আদিবাসী কিশোরীর? নির্দিষ্ট সময়সীমা (২০ সপ্তাহ)-র মধ্যে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ৷ ১৩ বছরের কিশোরী যে পরিস্থিতির সাপেক্ষে মা হয়েছে, তাতে আগেই গর্ভপাত করানো যেত৷ তবু কিশোরীর পরিবার সেই চেষ্টা করেনি৷
(মডেলিংয়ের মোহে ভোপালে ধর্ষিতা বাঙালি বধূ)
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে, ধর্ষণকারীরা কি এব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করেছিল পরিবারটির উপর? আদিবাসী ওই কিশোরী মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলার একটি আবাসিক স্কুলে থেকে পড়াশোনা করত৷ পুলিশ জেনেছে শিশুটিকে কবর দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছিল কিশোরীর স্কুলের কিছু কর্মীও৷ স্বাভাবিক বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ জেগেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি স্কুলের ক্যাম্পাসেই ধর্ষণ করা হয়েছে ওই কিশোরীকে৷ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷ ধর্ষণের কোনও রিপোর্ট দায়ের করা হয়েছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, সদ্যোজতের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে৷ ঘটনার জন্য কারা দায়ী তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে৷
(চিত্র প্রতীকী)