অর্ণব আইচ: রেশন বন্টন দুর্নীতিতে (Ration scam) ফের ডায়েরি রহস্য! বাকিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর গমকল থেকে পাচার হওয়া চোরাই চাল ও আটা কীভাবে ডিস্ট্রিবিউটর ও রেশন ডিলারদের কাছে পাচার হয়েছে, সেই তথ্য উঠে এসেছে ওই ডায়েরিতে। রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick) প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাসের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মেরুন রঙের ডায়েরিতে টাকার লেনদেন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED)। এছাড়া ওই ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও তিনটি ডায়েরি। সেখান থেকে আরও বেশ কিছু তথ্য মিলেছে বলে খবর। এবার রেশন বন্টন দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরি থেকেও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। ইডির সূত্র জানিয়েছে, ডায়েরি (Diary) থেকে পাওয়া তথ্যগুলির ভিত্তিতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও জেরা করা হচ্ছে।
শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় (Bongaon) দুই চালকল ও গমকল ব্যবসায়ীর মিলে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল সংখ্যক নথি উদ্ধার করেছে ইডি। রবিবার সকাল থেকেই ওই নথিগুলি সামনে রেখে ইডি হেফাজতে থাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জেরা করেন তদন্তকারীরা। ইডির অভিযোগ, বাকিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের গমকলে গম ভাঙানোর পর সেগুলির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত আটা বাইরে পাচার করা হত। সেই আটা পৌঁছত বাকিবুরের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের প্যাকেজিং সংস্থায়। সেই আটাই প্যাকেটবন্দি হয়ে চলে যেত সারা রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে।
[আরও পড়ুন: প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে ২০ বছর পর নতুন করে সম্পর্ক, বেড়াতে গিয়ে ভয়ংকর পরিণতি মহিলার!]
এখনও পর্যন্ত একটি প্যাকেজিং (Packaging) সংস্থার সন্ধান মিললেও ইডির গোয়েন্দাদের মতে, আরও কয়েকটি প্যাকেজিং সংস্থার মাধ্যমে গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ আটা বেআইনিভাবে বাজারে ছেয়ে গিয়েছে। ওই প্যাকেজিং সংস্থাগুলির সন্ধান চালাচ্ছেন ইডির গোয়েন্দারা। বিভিন্ন জেলায় বাকিবুর ঘনিষ্ঠ গমকল ও চালকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্যাকেজিং সংস্থার ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট যোগও সামনে এসেছে বলে দাবি ইডির। এই ব্যাপারে আরও তথ্য জানতেও এদিন ইডি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জেরা করে।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, জেলার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে চোরাপথে চাল, আটার মতো কত পরিমাণ রেশন দ্রব্য কত টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে, সেসব হিসাব রয়েছে। সঙ্গে কোন কোন ব্যবসায়ীর কাছে ওই আটা ও চাল পাঠানো হয়েছে, তা-ও জানানো হয়েছে। ডায়েরিতে ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টাকার লেনদেনেরও হিসাব রয়েছে। ওই ডায়েরির সূত্র ধরেই ইডি বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছে। তাঁদের মতে, ওই তালিকায় রয়েছে প্যাকেজিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের নাম। ওই ডায়েরি দেখেই আরও কয়েকজন প্যাকেজিং ব্যবসায়ীর সন্ধান চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা।
[আরও পড়ুন: জল্পনাই সত্যি, সিপিএমের দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক বদল, নতুন দায়িত্বে শমীক লাহিড়ি]
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁর কাছ থেকে ডায়েরিটি উদ্ধার হয়েছে, সেই ব্যবসায়ী জেরার মুখে জানিয়েছেন যে, গত দশ বছর ধরে তিনি বেআইনিভাবে রেশনদ্রব্য কেনাবেচা করছেন। তাঁর কাছে রেশনের চাল বা গম কেনাবেচার লাইসেন্সও নেই। তিনি বেআইনিভাবেই রেশন ডিলারদের মাধ্যমে চাল ও গম কিনে বাইরের বাজারে ব্যবসায়ীদের বিক্রি করতেন। তাঁদের মধ্যে প্যাকেজিং ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন বলে সন্দেহ ইডির গোয়েন্দাদের। ওই ব্যক্তিকে জেরা করে বেশ কয়েকজন রেশন ডিলারের নামও উদ্ধার হয়েছে। ওই রেশন ডিলারদের কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টায় রয়েছেন ইডি আধিকারিকরা।