সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘হিংসা ছড়াবেন না। ছড়াতে দেবেনও না।’ কেরলের সবরীমালা মন্দিরে দুই ৫০ অনূর্ধ্ব মহিলার প্রবেশ এবং তৎ-পরবর্তী বিতর্কের জেরে তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে এই মতই ব্যক্ত করলেন আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশংকরের। একদিকে যেমন তিনি রিভিউ পিটিশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আসা পর্যন্ত বাদী-বিবাদী, দু’পক্ষকেই ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিলেন, তেমনই অন্যদিকে কেরলবাসীকে প্রাচীন এই মন্দিরের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পক্ষেও করলেন জোরদার সওয়াল। যদিও ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে হিংসায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ৩,১৮৭-এ। দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ১,২৮৬।
[সবরীমালা ইস্যুতে ফুঁসছে কেরল, সিপিএম নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা]
এক বিবৃতিতে রবিশংকর জানিয়েছেন, “এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক, যে রাজ্য উন্নয়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য গোটা দেশে পরিচিত, তা এখন জ্বলছে। আমি সকলের কাছে আহ্বান করছি, দয়া করে শান্তি বজায় রাখুন। হিংসা ছড়াবেন না। ছড়াতে দেবেনও না। এমন কিছু করবেন না, যাতে শান্তি নষ্ট হয়। আমার মতে, মন্দিরের ঐতিহ্যকে সকলের সম্মান করা উচিত। তবে রিভিউ পিটিশন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত দয়া করে ধৈর্য্য ধরুন।”
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিন্দু কী ভাবছেন? সেই বিন্দু, কট্টরপন্থী সংগঠনের সদস্য এবং বিক্ষোভকারীদের প্রবল প্রতিবাদ এবং আপত্তি এড়িয়ে গত বুধবার যিনি মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকেছিলেন এবং আয়াপ্পাদেবের ‘দর্শন’ করে সৃষ্ট করেছিলেন ইতিহাস? ইতিমধ্যেই কিন্তু দক্ষিণপন্থী একাধিক সংগঠনের তরফ থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে তাঁর উপর আক্রমণের সম্ভাবনা। তবে অকুতোভয় বিন্দু তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৪২ বছরের এই মহিলা কলেজ লেকচারার জানিয়েছেন, “আমার কোনও ভয় নেই। আমি লিঙ্গ বৈষম্যের ঘোরতর বিরোধী। আর লিঙ্গ-সাম্যের বার্তা দিতেই সবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেছিলাম। আমি আর কনকদুর্গা, ডিসেম্বরেই চেষ্টা করেছিলাম মন্দিরে প্রবেশের। কিন্তু পুলিশ তখন আমাদের বাধা দিয়েছিল। এবার অবশ্য ওরা আমাদের খুব সহযোগিতা করেছে।”
[সবরীমালায় প্রবেশ তৃতীয় মহিলার, গন্ডগোল এড়াতে তৎপর প্রশাসন]
এদিকে সবরীমালায় মহিলা প্রবেশের ঘটনায় এবার বোমার লড়াই শুরু করল সিপিএম ও বিজেপি। শুক্রবার রাতে কেরলের বাম-বিধায়ক এ এন শামসেরের বাড়িতে বোমা পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বোমা ছোড়া হল বিজেপি সাংসদ ভি মুরলীধরনের বাড়িতে। তবে কেউই আহত হননি। যদিও শুক্রবার রাতে বিজেপি-সিপিএমের সংঘর্ষের বলি হয়েছেন শাসক দল সিপিআইএম-এর এক কর্মী। সবরীমালায় গত বুধবার দুই ৫০ অনূর্ধ্ব মহিলার প্রবেশ ঘিরেই এই বিক্ষোভ। শনিবার সকালেও জারি ছিল হিংসা। কন্নর-এ আরএসএস-এর পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। হিংসা আরও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোঝিকোড়ের পেরামব্রা থেকেও বিস্ফোরণের খবর মিলেছে। শনিবার ভোর রাতে বিজেপি সাংসদের বাড়িতে যখন বোমা ছোড়া হয় তখন তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। অন্যদিকে সিপিএম বিধায়কের বাড়িতে যখন হামলা হয়, তখন তিনি কন্নরের একটি সভায় ছিলেন। এই বোমা-হামলার পিছনে আরএসএসের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনার প্রেক্ষিতে ১১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার কেরল যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিচার করে তাঁর সফর সূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
[সবরীমালা বিক্ষোভে আক্রান্ত হয়েও কর্তব্যে অনড় মহিলা চিত্রসাংবাদিক, ভাইরাল ছবি]
অন্যদিকে, মন্দিরে দুই ৫০ অনূর্ধ্ব মহিলার প্রবেশের পর শুদ্ধিকরণ করিয়েছিলেন মন্দিরের যে ‘তান্ত্রী’ (প্রধান পুরোহিত), তাঁর কড়া সমালোচনা করলেন কেরলেরই এক মন্ত্রী। রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী তথা বাম নেতা জি সুধাকরণের ‘তান্ত্রী’-কে ‘ব্রাহ্মণকুলের দৈত্য’ বলে কটাক্ষ করেছেন। সুধাকরণের বক্তব্য, “যে ব্যক্তি নিজের বোনের মতো কাউকে অশুচি, অশুদ্ধ ভাবেন, তাঁকে কীভাবে মানুষ বলা যায়? তিনি আর তখন ‘শুদ্ধ’ (খাঁটি) ব্রাহ্মণ থাকেন না। ব্রাহ্মণকুলের দৈত্য বনে যান, যে কাউকে ভালবাসতে, স্নেহ করতে জানে না। এমনকী আয়াপ্পাদেবের প্রতিও তাঁর কোনও ভালবাসা বা শ্রদ্ধা থাকতে পারে না!’’