বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি : এবারের লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন হবে সাত দফায়। উল্লেখযোগ্যভাবে তিন রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশেও নির্বাচন হবে সাত দফাতেই। জম্মু-কাশ্মীরের মতো উপদ্রুত রাজ্যে পাঁচ দফায় ভোট অথচ এই তিন রাজ্যে সাত দফায় দীর্ঘ ভোট পর্ব নিয়ে ভ্রু কুঁচকেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
[অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কমিশনের]
উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে বড় রাজ্য, ৮০টি আসনের যুক্তি খাটলেও বাংলা ও বিহারের মতো যথাক্রমে ৪২ ও ৪০টি আসনের রাজ্যে সাত দফায় ভোট গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই দুই রাজ্যে যেখানে সাত দফায় ভোট সেখানে এর কাছাকাছি ৩৯টি আসন রয়েছে তামিলনাডুতে। অথচ সেখানে এক দফাতেই ভোট পর্ব মিটে যাবে। এই তিন রাজ্যই এবারের লোকসভা নির্বাচনের ভরকেন্দ্র বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। দেশের এই তিন রাজ্যের ফলের উপরই যে কেন্দ্রে মসনদ দখলের হিসেব নিকেশ অনেকটা নির্ভর করে রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কথায় বলে, উত্তরপ্রদেশ যার দিল্লি তারই। গতবার লোকসভা নির্বাচনেও এই অঙ্কেই ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। আবার পূর্ব ভারতের রাজ্য বাংলা, বিহারের সম্মিলিত আসন সংখ্যা উত্তরপ্রদেশের থেকেও বেশি। তিন রাজ্যের সম্মিলিত আসন সংখ্যা ১৬২, যা লোকসভার ৫৪৩ টি আসনের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১৮১ থেকে গোটা কুড়ি কম। স্বাভাবিকভাবেই এই বিপুল সংখ্যক আসনের অধিকাংশ যাদের ঘরে যাবে তারাই যে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে তা সকলের জানা। তবে কি রাজনৈতিক কারণেই এই তিন রাজ্যে সাত দফায় ‘কড়া নিরাপত্তায়’ ভোট পর্ব মেটানোর ব্যবস্থা হয়েছে, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
তিন রাজ্যে সাত দফায় নির্বাচন নিয়ে শুধু রাজনৈতিক মহলেই প্রশ্ন উঠেছে তা নয়, রবিবার দিল্লির বিজ্ঞানভবনে নির্বাচন কমিশনের সাংবাদিক বৈঠকেও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। অবশ্য এর পিছনে যে অন্য কোনও কারণ আছে, তা অবশ্য মানতে চাননি তিনি। জানিয়েছেন, “নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে সারা দেশের নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের সময় কোথাও পরীক্ষা আছে কি না, তা জানতে বিভিন্ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। উৎসব, অনুষ্ঠানের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়েছে কমিশনকে।” অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানের আগে ও পরে যেভাবে ভোটের দিনক্ষণ রাখা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, “শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের বিষয়টিই নয়, অন্য কারণের উপরও নজর রাখতে হয়েছে,” বলেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। দফা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অরোরা। তিনি বলেন, “দেশের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে একসঙ্গে ভোট করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। বাহিনী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছানোর মতো কারণও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।” দফা নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির জনঘনত্বের উপরও নজর দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। কোন রাজ্যে কত দফায় ভোট হবে, তা ঠিক করার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির রিপোর্টও গুরুত্বপূর্ণ বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। তিনি বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনের টিম বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছে। সেখানকার স্টেট মেশিনারি থেকেও রিপোর্ট নিয়েছে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
[ মহিলা ক্ষমতায়নে জোর, লোকসভায় ৩৩% প্রার্থী ঘোষণা বিজেডির]
The post তিন রাজ্যে কেন সাত দফায় ভোট? ব্যাখ্যা দিল নির্বাচন কমিশন appeared first on Sangbad Pratidin.