সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্রাবণ মাস মানেই শিবের মাস, এই মতে বিশ্বাস করেন অনেকে। সংসারের মঙ্গল কামনায় মাসের প্রত্যেকটি সোমবার নিয়ম মেনে নিষ্ঠা সহকারে মহাদেবের ব্রত পালন করা হয়। এই মাসেই কানোয়ার যাত্রা (Kanwar Yatra) করেন শিবভক্তরা।
কী এই প্রথা?
প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে সারা দেশের হাজার হাজার ভক্ত উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) পাড়ি দেন। হরিদ্বার, গোমুখ, গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গার জল সংগ্রহ করেন। অনেকে বিহারের সুলতানগঞ্জ দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গার জলও সংগ্রহ করেন। ঠিক যেমন করে বাঁকে করে তারকেশ্বরে জল নিয়ে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রেও অনেকটা সেভাবেই গঙ্গার জল বহন করা হয়। একটি বাঁশের দু’পাশে কলসি জাতীয় পাত্র বেঁধে নেওয়া হয়। তাতে করেই জল বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকে আবার এটি সাজাতেও পছন্দ করেন। যাওয়া-আসার সময় ভোলেনাথের নামও ভক্তি সহকারে উচ্চারণ করা হয়। তারপর সেই জল নিয়ে গিয়ে শিবের মাথায় ঢালা হয়। যাঁর যে মন্দিরের প্রতি টান, তিনি সেই মন্দিরে গিয়ে এই জল ঢালেন। মনে করা হয়, এতে শিব সন্তুষ্ট হন। আর তাঁর আশীবার্দেই পরিবারের মঙ্গল হয়। সংসারে শান্তি বজায় থাকে। সন্তানরাও বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
[আরও পড়ুন: রথে নয়, গাড়িতে চড়ে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ, সিদ্ধান্ত কলকাতার ISKCON কর্তৃপক্ষের]
কীভাবে এই প্রথার সূত্রপাত?
কথিত আছে, সমুদ্রমন্থনের (Samudra Manthan) সময় অমৃতের আগে বিষ নির্গত হয়েছিল। তা দেবাদিদেব মহাদেব অর্থাৎ শিব (Shiva) নিজের কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। এভাবেই তিনি বিশ্বকে রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু বিষের তীব্র জ্বালা তাঁর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই জ্বালা শান্ত করতেই নাকি গঙ্গার জল ঢালা হয়। আরও একটি মত অনুযায়ী, ত্রেতা যুগে লঙ্কাপতি রাবণ নাকি কানোয়ারের জল বয়ে নিয়ে গিয়ে নিজের আরাধ্য দেবতা শিবের মাথায় ঢেলেছিলেন।
নেটদুনিয়া থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, আটের দশকে কানোয়ার যাত্রা বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তার আগে অল্প সংখ্যক মানুষ এবং সন্ন্যাসী এই যাত্রায় যেতেন। কিন্তু আটের দশকের পর থেকে সারা ভারত থেকে শিবভক্তরা গঙ্গা জল সংগ্রহের জন্য প্রতি বছর এই যাত্রা করে থাকেন। কিন্তু করোনার (Corona Virus) কোপে গত বছর থেকেই তা বন্ধ রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশা সরকার আগেই এ বছরের কানোয়ার যাত্রা বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার দ্বিধায় ছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনায় কাজ হয়। একপ্রকার চাপে পড়েই এবারের কানোয়ার যাত্রা বাতিলের নির্দেশ দেয় যোগী সরকার।