যুগের পর যুগ সাপের সঙ্গে সহাবস্থান, রীতি মেনে জ্যান্ত কেউটের পুজোয় মাতলেন বর্ধমানবাসীরা

10:06 PM Jul 25, 2021 |
Advertisement

This browser does not support the video element.

ধীমান রায়, কাটোয়া: সাধারণত সাপ থেকে কয়েক হাত দূরেই থাকেন সকলে। তবে পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) মঙ্গলকোট ও ভাতারের ছবিটা অন্য। বিষধর কেউটে প্রজাতির সাপের সঙ্গে যুগের পর যুগ সহাবস্থান করে আসছেন গ্রামবাসীরা। শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, সেগুলি সাপ (Snake) নয়, সাক্ষাৎ দেবী মনসা! একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা দেবী হিসাবে মানেন কেউটের প্রজাতি ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশ্বরীকে। রবিবার কেউটে প্রজাতির সেই সাপের পুজোয় মাতলেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে পুজো হয় ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী দেবীর। ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা, মুশারু এবং নিগন-সহ সাতটি গ্রামে ঝাঁকলাই পুজো হয়। একসময় সাতটি গ্রামেই দেখা মিলত ওই সাপের। তবে বর্তমানে শুধুমাত্র বড়পোশলা, ছোটপোশলা, মুশারু এবং পলসোনা এই চার গ্রামে দেখা মেলে। পথ-ঘাট থেকে গৃহস্থের বাড়ির রান্নাঘর, শোবারঘর সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ।

[আরও পড়ুন: ‘বহিরাগত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’, বিতর্কিত মন্তব্য KLO সুপ্রিমোর, UAPA ধারায় মামলা দায়ের]

গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, ঝাঁকলাই কাউকে কামড়ায় না। আর কোনও কারণে ছোবল দিলে দেবীর মন্দিরের মাটি লেপে দিলেই বিষমুক্ত হয়ে যান রোগী। এই বিশ্বাসেই ঝাঁকলাই নিয়ে ঘর করেন চার গ্রামের বাসিন্দারা। এই সাপ নিয়ে রয়েছে অনেক গল্পকথা। পলসোনা গ্রামের প্রবীণ এক পুরোহিত তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “মা ঝাঁকলাই আসলে কালনাগিনী। লখিন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করার পর পালানোর সময় বেহুলা কাজললতা ছুঁড়ে মেরেছিলেন কালনাগিনীকে। কাজললতার আঘাতে কালনাগিনীর লেজ কেটে যায়। এখানে ঝাঁকলাইয়ের লেজ কাটা।” তাপসবাবু আরও বলেন, “কালনাগিনী বেহুলার শাপে মর্তে আসে। তারপর আমাদের এই এলাকায় বসবাস করতে শুরু করে। অনেককাল আগে এক গ্রামবাসীকে কালনাগিনী স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলে আমাকে নিয়ে গিয়ে পুজো কর। সেই থেকেই ঝাঁকলাইয়ের পুজো হয়ে আসছে।”

Advertising
Advertising

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যেসব গ্রামে ঝাঁকলাই রয়েছে সেখানে আর কোনও বিষধর সাপ ঘেঁষতে পারে না। ঝাঁকলাই রাতে বের হয় না। রবিবার ঝাঁকলাই পুজোর দিন দেখা যায় সাপকে ধরেই ভক্তিভরে পুজো করছেন গ্রামবাসীরা। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “এটা মানুষ এবং প্রাণীর সহাবস্থানের ফল। তাছাড়া বিষয়টি প্রাকৃতিকভাবেও ঘটেছে। সাপ এমনিতেই ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী। কোনও কারণ ছাড়া সে কামড়ায় না। তাছাড়া ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে এখানকার মানুষেরা সাপকে বিরক্ত করেন না। তাই এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা।” চন্দ্রনাথ বাবু জানান, “তবে এই সাপের বিষ রয়েছে। কামড়ালে হাসপাতালে যাওয়া উচিত। তবে এখানে সাপের কামড়ের ঘটনা খুবই কম।”

[আরও পড়ুন: তুমুল বিক্ষোভের জেরে পুনর্মূল্যায়ন, আরামবাগের স্কুলে HS’এর নম্বর বাড়ল ১৩৭ পড়ুয়ার!]

This browser does not support the video element.

Advertisement
Next