সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়: বেশ ভালরকমই চলছে শেয়ার মার্কেট। আনন্দের বিষয় যে মিডক্যাপ ইনডেক্স দুশো দিনের মুভিং অ্যাভারেজের ওপর হঠাৎই চলতে আরম্ভ করেছে। এটা প্রয়োজন ছিল। এতদিন বুল মার্কেট হাতে গোনা কয়েকটি শেয়ারের জন্য তৈরি হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে সবাই যোগ দেয়নি। এখন সরকারের উপর বাজার কনফিডেন্স ফিরে পাচ্ছে। না হলে মিডক্যাপ ইনডেক্স দুশো দিনের উপর যেত না।
[আরও পড়ুন: জনমতের জোয়ারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি]
আগামী ৬ জুন রিজার্ভ ব্যাংকের Monetary Policy বৈঠক। অনুমান, সুদের হার কমানো হবে। এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব প্রয়োজন। এবার কাজ আরও দ্রুতগতিতে হবে বলে বাজার মনে করছে। এসব যে বাজারের চিন্তা সেটা বাজারের খেলোয়াড়দের সব মিলিত চিন্তা থেকেই তৈরি হয়। এতে দেশি লগ্নিকারী সংস্থাও যেমন আছে তেমনই আছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাও। এই মুহূর্তে ভারতের রিয়েল এস্টেট, অটো, কৃষি, পরিকাঠামো, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ভাবনাচিন্তার মধ্যে থাকবে। মজা হল, একটা ঠিক হলে আর একটা ঠিক হয়। দেখার বিষয়, কোন ব্যাপারটা আগে ঠিক করার চেষ্টা করে নতুন সরকার। আছে তো অনেক বিষয়। সব তো আর একসাথে করা যাবে না। তাই বাজার বাজেট অবধি অপেক্ষা করবে। আর তারই জন্য Hope Rally চলবে। আশার র্যালিতে আশাহত হওয়ার সুযোগ কম। আপনার হয়তো পছন্দ হবে না। বাজার কিন্তু সেইসব বিষয় অন্য চোখে দেখবে।
টেকনিক্যাল আলোচনায় আসা যাক। নিফটি কোথায় বন্ধ হল বা হল না সেটা বিষয় নয়। ২৩ মে নিফটি ঐতিহাসিক উচ্চতা তৈরি করে। তার দাম ১২০৭০। এটা কিন্তু রেজিস্টেন্স নয়। এই দাম তৈরি হয় Short Quiz-এর জন্য। অর্থাৎ যাঁরা মনে করেছিলেন বিজেপি ফিরবে না এবং তার প্রেক্ষিতে বেচে রেখেছিলেন তাঁরা কিনে নিতে বাধ্য হন। আর যাঁরা মনে করেছিলেন বিজেপি আসবে তাঁরা যা কিছু কিনে রেখেছিলেন তা বেচে দেন। সুতরাং এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে চলতি বাজারে এই দাম তৈরি হয়নি। এবার বাজার চলছে। সুতরাং এই দাম পার করার সুযোগ এবং প্রবণতা খুব বেশি থাকবে। তর্কের খাতিরে যদি মনে করি দাম পার হয়ে যাবে তাহলে প্রশ্ন থাকবে যে কী দাম হতে পারে? একটা দাম তো দেখতে পাচ্ছি ১২২২৫। আর একটা দাম ১২৫৭০। এখন আমরা যেখানেই থাকি এই দামের ওপর কল কেনা বা কল রাইটিং দুটোই হবে। যেটা মাঝখানে হবে সেটা বাজার overbought হবে এবং হালকা কারেকশন হবে। তার একটা কারণ হচ্ছে যে RSI বা Relative Strength Index অতটা শক্তিশালী নয়, যতটা নিফটি শক্তিশালী। এটা চিন্তার বিষয় নয়। কারণ কখনও কখনও late catchup হয় টেকনিক্যাল বিচারে। তবে এটা যদি সত্যি হয় আর বাজার যদি সংশোধন করে তাহলে দেখতে হবে fund flowটা কী পর্যায়ে আছে সেই মুহূর্তে।
আপাতত ফান্ড ফ্লো-র হিসেব হচ্ছে মে মাসে বিদেশি লগ্নিকারীরা বিক্রি করেছে ৪৪৭০ কোটি টাকার এবং দেশি মিউচুয়াল ফান্ডগুলো কিনেছে ৬১১৮ কোটি টাকার। বিদেশি লগ্নিকারীরা ২৩ মে থেকে ৩৮০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। অর্থাৎ ওরা যেটা বেচেছিল ভোটের ফলের প্রেক্ষিতে সেটা গুটিয়ে নিচ্ছে। এই ফলে সবচেয়ে বেশি খুশি FII, অর্থাৎ বিদেশি লগ্নিকারীরা। সুতরাং ভাবা যেতেই পারে তারা আগামিদিনে কিনতেই আসবে। এর একটা বড় কারণ যে এই কোয়ার্টারে যেসব ফলাফল এসেছে সেগুলো অতটা খারাপ নয়। এবং কিছুক্ষেত্রে বেশ ভালই। আর এমন সময়ে এসেছে যখন আমরা অর্থনীতি নিয়ে হাহাকার করছি। সুতরাং অপেক্ষা করতে হবে জুন মাসের ফলাফলের জন্য। যা গ্রোথ দেখা যাচ্ছে তাতে বিদেশি লগ্নিকারীরা খুশি হলে হতে পারে। সেটা অবশ্যই দেখার বিষয়। এরই মধ্যে কিছু শেয়ার চলবে, আবার কিছু শেয়ার আটকে যাবে। সেটা তো শেয়ার বাজারে হয়েই থাকে। তবে অনেকগুলো শেয়ার প্রচুর শোরগোল করবে তার যথেষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং আপনাকে কল নিয়ে কাজ করতে হবে। ঝুঁকি কমানোর প্রেক্ষিতে। তেজি যদি হয় সেটা মিস করার কোনও মানেই হয় না। এই চিন্তাভাবনা নিয়ে শেয়ার বাজারে আপাতত কাজ করা উচিত। সংশোধন হলে কেনা, আর না হলেও কেনা।
[আরও পড়ুন: ‘মমতা হিরণ্যকশিপুর বংশধর’, মুখ্যমন্ত্রীকে কুরুচিকর আক্রমণ সাক্ষী মহারাজের]
The post বাজেটের দিকে তাকিয়ে শেয়ার বাজার, কমতে পারে সুদের হার appeared first on Sangbad Pratidin.