সুপর্ণা মজুমদার: টলিউডে কাস্টিং কাউচ বিতর্ক, যৌন হেনস্তা রুখতে সম্প্রতি ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে 'সুরক্ষা বন্ধু' কমিটি তৈরি করা হয়েছে। অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে এই কমিটি। যেখানে লিখিতভাবে বা ইমেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন ইন্ডাস্ট্রির সদস্যরা। সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই উদ্যোগের ঘোষণা করেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। এবার সেই 'সুরক্ষা বন্ধু' কমিটি নিয়েই মহামিছিল থেকে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন সোহিনী সরকার এবং স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়রা।
কারও নামোল্লেখ না করেই সোহিনী সরকারের মন্তব্য, "কোনও রাজনৈতিক দলের কেউ যদি বলেন আমাদের সুরক্ষিত রাখবেন, আমরা মেনে নেব না। আমরা মহিলা অভিনেত্রীরা যাঁরা আছি, আমাদের নিজেদের সুরক্ষা আমরা নিজেরা ঠিক করব। আর সারা পশ্চিমবঙ্গের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে সরকারের তরফ থেকে বলতে হবে। আর আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ক্ষোভের কথা যদি বলি, আমরা অভিনেত্রীরা নিয়ম বানিয়ে নেব। শাসকদলের কেউ এসে আমাদের নিয়ম বানিয়ে দেবে না।" পাশাপাশি অভিনেত্রীর সংযোজন, "সব রাজ্যের মহিলারা আওয়াজ তুলুন, তাদের সরকারের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যখন একজোট হয়, তখন অনেক সরকার, প্রশাসন নড়ে গিয়েছে।"
সেই একই সুরে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, "আর জি কর ঘটনার পর কেন সিনেজগতের মহিলাদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হচ্ছে? এতদিন কেন বাবা হয়নি? রাস্তায় আউটডোরে শুটিং করতে গেলে, রাস্তাঘাটে আমাদের শৌচকর্ম করতে হয়। মহিলাদের শৌচকর্ম করার মতো ভালো কোনও জায়গা নেই আমাদের রাজ্য তথা দেশে। আমাদের মতো একই অবস্থা আর পাঁচজন মহিলারও। ধাবার শৌচালয়গুলো এত নোংরা যে সেটা ব্যবহার করলে যৌনরোগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আর হাসপাতালে ভর্তি হলে ধর্ষণের শিকার হতে হবে।" স্বস্তিকার অভিযোগ, "কেন প্রেস কনফারেন্সে 'সুরক্ষা বন্ধু' ঘোষণা করার আগে টলিউডের সকল মহিলা শিল্পীদের সঙ্গে সুবিধে-অসুবিধে নিয়ে আলোচনা করা হল না?"
এদিন মহামিছিলে তিলোত্তমার ন্যায়বিচারের দাবিতে শামিল হয়েছিলেন লগ্নজিতা চক্রবর্তীও। তাঁর মন্তব্য, "যতদিন যাচ্ছে আশা কমছে। তাই বলে বাড়িতে বসে থাকতে পারছি না। আন্দোলন চালিয়ে যাব। অপরাধীরা এতদিন ভাবত, শাসকদলে যেই থাকুক ছাড় পেয়ে যাব, বাঙালিরা মেনে নেবে। সেলিব্রিটি মানেই চটিচাটা নয়। যতদিন পারব আমরা প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলাব।" এরপরই গায়িকার সংযোজন, "যে ছেলেটির সঙ্গে ওর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, আমি তার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছি যদিও।"
[আরও পড়ুন: বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মতলায় ধরনায় বসলেন শোভন, সোহিনীর হুঙ্কার, ‘আন্দোলন চলবে’]
সাহেব চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন ছুঁড়লেন, প্রথম দিন প্রমাণ লোপাট হল কেন? এই প্রশ্নটা সবার আগে আসে। কেন ভাঙচুর হল? কেন অন্যায়ভাবে এই অরাজকতা হল? এর নেপথ্যে কী কারণ? প্রথমদিন থেকেই বলছি। 'অশ্বত্থামা হত ইতি গজ'- বললে হবে না, সত্যিটা মানুষ জানতে চায়। এখন রাজনৈতিক দলাদলি করে, বিভিন্ন টপিকে মানুষকে ঘুরিয়ে, এসব করে আর কোনও লাভ নেই। সুপ্রিম কোর্টের বিচারের দিকে চেয়ে রয়েছি। আমি এখনও আশাবাদী। শুধু একজন অভয়া নয়, সব অভয়ার বিচার চাই। যাদের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হয়েছিল। সবার বিচার চাই।"
লোকনাথ দে বলছেন, "সঠিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠ বিচার চাই। সেটা যত দ্রুত সম্ভব। আমার মনে হয়, এটা একজনের কাজ নয়। এটা সামগ্রিক চক্রান্ত। সেই চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করতে হবে।" দেবলীনা দত্তর কথায়, "শুধু একজনকে ধরেই ক্ষান্ত হলেই হবে না। প্রত্যেককে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সিবিআই, সুপ্রিম কোর্টের যতটা সময় লাগবে লাগুক। কিন্তু ফলাফল অবধি এই আন্দোলন চালিয়ে যাবই আমরা। ঘটনার প্রথম দিন থেকেই ময়নাতদন্ত, দাহ করা সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গোটা সিস্টেম নিয়ে আমরা ভীত। অতঃপর যতক্ষণ না যড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি হচ্ছে, ততদিন আমরা পথে নামবই।"