অভিরূপ দাস: কেউ থুতু ফেলছেন গালে। কেউ জুতো পরে মাড়িয়ে দিচ্ছেন ত্রিনয়ন। রাস্তায় আঁকা মা দুর্গার এই অসম্মান মানতে পারছেন না সমাজের নানান ক্ষেত্রের মানুষ। এমন দৃশ্য কল্পনাও করতে পারছেন না পুরোহিত-পুজোপ্রেমীরা। কল্পনা তো নয়। এমনটা হয়েছে বাস্তবেই।
সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে মুহুর্মুহু মিছিল। প্রতিবাদে কলকাতার রাস্তায় নানা ধরণের গ্রাফিতি আঁকা হচ্ছে। বিচার চেয়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ রাজপথে মা দুর্গার ছবি এঁকেছেন। স্লোগান-অবরোধ শেষে আন্দোলনকারীরা যে যাঁর কাজে। এদিকে রাস্তায় আঁকা দুর্গার ছবির উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে জুতো পরা পা, নোংরা গাড়ির চাকা। রাস্তায় আঁকা দশভুজার উপর এসে পড়ছে সিগারেটের টুকরো!
শাস্ত্রজ্ঞ জয়ন্ত কুশারি জানিয়েছেন, “যা হচ্ছে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।" তাঁর কথায়, হাতে আঁকা দুর্গা জুতো পায়ে মাড়িয়ে নিহত ওই তরুণী চিকিৎসককেও অসম্মান করছেন আন্দোলনকারীরা। অপমান করছেন বাংলার প্রতিটি মা-কে। প্রাচ্য বিদ্যা আকাদেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারির বক্তব্য, "বিশ্বের প্রতিটি মায়ের অবয়বেই দুর্গা বর্তমান। যে কারণে আমরা মন্ত্রোচ্চারণের সময় বলি, ইয়া দেবী সর্বভুতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা। প্রত্যেকটা মায়ের মধ্যেই তিনি প্রকট। দুর্গাকে অপমান করা মানে সমস্ত মায়েদের অপমান করা।"
ঈশ্বর নিয়ে আন্দোলনকারীদের এহেন ছেলেখেলায় ক্ষুব্ধ শহরের পুজো আয়োজকরা। শহর কলকাতার দুর্গা পুজোর আয়োজকদের সবচেয়ে বড় সংস্থা ফোরাম ফর দুর্গোৎসব। শহর কলকাতার ৪০০টি বড় ক্লাব এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, তিলোত্তমা বিচার পাক। কিন্তু রাস্তায় মা দুর্গার ছবি এঁকে যেটা হল, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। শাশ্বত বসুর বক্তব্য, “আমরা যাঁরা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে তাঁদের কাছে মা দুর্গা নিজের মায়ের মতোই। রাস্তায় মা-কে ফেলে তাঁর গায়ে কেউ মাড়িয়ে চলে যাবেন এটা আমাদের কাছে কল্পনাতীত।" আন্দোলনের এই ভাষায় রুষ্ট পুরোহিত নিতাই চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, "দশভুজাকে নিয়ে যা হচ্ছে তা অত্যন্ত অযৌক্তিক। আমরাও চাই বিচার পাক নিহত তরুণী। কিন্তু রাস্তায় ঠাকুর এঁকে কেউ কেউ আন্দোলন করে চলে গেলেন। তার পর মায়ের মুখের ওপর দিয়ে জুতো পরে সবাই হেঁটে যাচ্ছে! এটা মানা যায় না।"
উল্লেখ্য, আর জি কর কাণ্ডের পরেই বামপন্থীদের একাংশ আওয়াজ তুলেছিল, "এবছর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো বন্ধ করা হোক।" ঠিক তার পরে পরেই রাস্তায় এই হলুদ রঙ দিয়ে দশভুজা আঁকা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে শ্যামল সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বামপন্থীরা পুজো মানে না। এদিকে পুজোর চারদিন মণ্ডপ প্রাঙ্গণে বইয়ের স্টল দেয়। এঁদের দ্বিচারিতা সাঙ্ঘাতিক। এরাই এখন রাস্তায় দুর্গার ছবি এঁকে মা-কে অপমান করছে।