বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: জন্মসূত্রে রাশিয়ার বাসিন্দা। সেই সংস্কৃতির আবহেই বেড়ে ওঠা। কিন্তু ভালবাসার টান গত ৮ বছরে তাঁকে প্রায় পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে মিশে গিয়ে একাতেরিনা শিখে ফেলেছেন বাঙালি আচারও। বাঙালি ঘরের রাশিয়ান গৃহবধূ হয়ে সন্তানের হাতেখড়ির জন্য শ্বশুরবাড়িতে নিজেই করলেন সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja) আয়োজন। লাল ছাপা হলুদ শাড়ি পরে, শঙ্খ বাজিয়ে দিলেন অঞ্জলি। পুরোহিতকে দিয়ে বাংলা ভাষাতেই ছেলেকে দেওয়ালেন হাতেখড়ি। আর বাংলাতেই জানিয়ে দিলেন, “বাঙালি আচার-অনুষ্ঠান আমার ভীষণ ভাল লাগে।”
আগে ছিলেন রাশিয়ার (Russia) একাতেরিনা। এখন হয়েছেন বাংলার গৃহবধূ একাতেরিনা দাস। বাপের বাড়ি এখনও রাশিয়ার কিরোভে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। নদিয়ার গাংনাপুরের বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা যুবক দেবাশিস দাসের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হয়েছিল পরিচয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম হতে বেশি সময় লাগেনি। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস দাসের সঙ্গে প্রায় ৩ বছর ধরে চলে এই প্রেমপর্ব। তারই মধ্যে দেবাশিসের কাছ থেকে অল্পবিস্তর বাংলা বলা শিখে নিয়েছিলেন একাতেরিনা। তারপর বিয়ের প্রস্তাব। দেবাশিসের এককথায় বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন রুশ যুবতী একাতেরিনা।
[আরও পড়ুন: মণ্ডপে তারস্বরে বাজছে গান ‘খেলা হবে’! সরস্বতী পুজোতেই ভোটের দামামা কুলটিতে]
৮ বছর আগে মূলত ভালবাসার টানেই একাতেরিনা চলে এসেছিলেন ভারতে। চলে আসেন গাংনাপুরের বিবেকানন্দপল্লির শ্বশুরবাড়িতে। স্বামী এবং শাশুড়িকে নিয়ে শুরু হয় সংসার জীবন। ধীরে ধীরে বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান শিখতে শুরু করেন। এক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন শাশুড়ি রীতা দাস। ৩ বছরের মাথায় পুত্র সন্তানের জন্ম দেন একাতেরিনা। চলতি বছরেই ছেলে দত্তাত্রেয়র ৫ বছর পূর্ণ হল। আর তাই নিজেই উদ্যোগ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে প্রথম সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেন। মঙ্গলবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, রান্নাবান্না সেরে শুরু করেছিলেন পুজোর কাজ। এরপর ছেলেকে পাশে বসিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে দিয়েছেন পুষ্পাঞ্জলি। বাংলা ভাষাতেই হয়েছে দত্তাত্রেয়র হাতেখড়ি।
বিয়ের পর একবারই রাশিয়ায় গিয়েছিলেন একাতেরিনা। বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা দেখতে। তারপর আর বাংলার ঘর-সংসার ফেলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। একাতেরিনা অবশ্য বাংলায় কথা বলতে পারলেও বাংলায় লেখা এখনও শিখে উঠতে পারেননি। তাঁর কথায়, “বাঙালি আচার-অনুষ্ঠান আমার খুব ভাল লাগে। আমি শাশুড়ির কাছ থেকে অনেকটাই শিখেছি। বাকিটাও শিখতে চাই। কারণ, আগামী দিনে আমাকেই তো সব কিছু সামাল দিতে হবে।”