অমিতাভ বচ্চন: আমার কাছে শচীন আদতে বিশ্বমঞ্চে ভারতের হীরকদ্যুতি। ইন্ডিয়া শাইনিং। বিশ্বমঞ্চে ভারতকে গর্বিত করেছে শচীন। আমাদের দেশের ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি অতুলনীয়। আর অবশ্যই মেধার দিক থেকে আমাদের দেশ উচ্চবিত্ত। শচীন সেই বিত্ত-ঐতিহ্যকে আরও বাড়িয়েছে, নিজ অবদানের গুণাবলিতে। যত বার পৃথিবীতে ক্রিকেট নিয়ে কথা ওঠে, আমরা ভারত নিয়ে বলি, বলি একরাশ সম্মান-সহ। আর সেটা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে শচীনের জন্য। যে কি না আন্তর্জাতিক মঞ্চে সফল হয়ে ভারতকে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে বসিয়েছে, চব্বিশ বছর ধরে নিজের সমস্ত মহাকীর্তি দিয়ে। আর একজন পারফর্মার যখন নানাবিধ বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে সেটা করে, দেশের কৌলিন্য বাড়ে, ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। আর শচীন সেটাই করে এসেছে দু’দশক ধরে।
ব্যক্তি শচীন আর ক্রিকেটার শচীন সম্পূর্ণ ভিন্ন, পুরো উল্টো। পারফর্মার শচীন মাঠে শাসন করতে পছন্দ করে, সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের যা গুণ। কিন্তু ব্যক্তি শচীন হল অসম্ভব নম্র, ভদ্র, অভিজাত একজন মানুষ। যে নিজের শিকড়কে ভোলেনি। আর সেটাই শচীনকে এত স্বতন্ত্র করে তুলেছে। শচীন এমন একজন চরিত্র, যে কি না সাফল্যকে কখনও মাথায় চড়তে দেয়নি। ব্যক্তি শচীনকে বদলে দেওয়ার সুযোগ, সাফল্যকে দেয়নি শচীন। যা দেখে আমার বিমুগ্ধ লাগে। এটা আপনারা বুঝতে পারবেন আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় শচীনের অভিব্যক্তি দেখলে। আপনি ওর মুখাবয়ব দেখে বুঝতে পারবেন না ও অল্প রানে আউট হয়ে ফিরছে, না কি সেঞ্চুরি করে ফিরছে। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ক্রিকেটের সেই সত্তাকে পরম যত্নে লালন-পালন করে শচীন। আজকালকার দিনে সেই মূল্যবোধ ক্রিকেটারদের মধ্যে আর দেখি কোথায়? শচীন সেটা করতে পেরেছে নিজের ভিতের কারণে। যে ভিত তৈরি হয়েছিল বেড়ে ওঠার সময়, মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে।
[আরও পড়ুন:‘চাপ সামলানোর ক্ষমতা ছিল ঐশ্বরিক’, ৫০ তম জন্মদিনে শচীনকে নিয়ে আবেগপ্রবণ সানিয়া]
অনেকেই মেয়াদের ভিত্তিতে আমার আর শচীনের কেরিয়ারে মিল পান। কিন্তু শচীনের কেরিয়ারের সঙ্গে আমার কেরিয়ার তুলনা করাই উচিত নয়। ও যা করেছে, তার অর্ধেকও আমি করতে পারিনি। তবে হ্যাঁ, এটা বলব যে দীর্ঘমেয়াদি কেরিয়ার গড়তে গেলে প্রয়োজন হয় অফুরান আত্মবিশ্বাসের। আর এটা মেনে নিতে হয় যে, তুমি অজেয় নয়। তুমিও হারবে। ভুল করবে। শচীন জানে যে, পারফেকশনের সন্ধানে নেমেছে ও। চিরকাল সে ভাবেই ও চলবে। প্রতিটা পারফরম্যান্সেই ও পারফেকশন খুঁজবে। এটা ঠিক যে, সময় সময় ব্যর্থ হবে শচীন। সেটা কে না হয়? সেরারাও ব্যর্থ হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল, শেখার ইচ্ছেটা বাঁচিয়ে রেখে পরের সুযোগে নিজের উন্নতি করা। সেটাই শচীন চব্বিশ বছর ধরে করে এসেছে। শচীন সেরা হয়েও জানে যে, ব্যর্থ ও-ও হবে। কিন্তু একই সঙ্গে শচীন এটাও জানে যে, ভুলভ্রান্তি থেকে শিখে নিজেকে আরও উন্নতভাবে পেশ করতে পারবে ও। আর সেটাই ওর এত দিন ধরে খেলতে পারার কারণ।
শচীনকে কী ভাবে মনে রাখবে লোকে? আমার মনে হয়, ওর পরম্পরাকে লোকে মনে রাখবে এটা ভেবে যে, লোকটা এক্সেলেন্সের সমনামী ছিল। সাফল্যের শেষ কথা শচীন, নিজের মানদণ্ড সে ভাবেই তৈরি করেছে ও। প্রতিটা ভারতীয় চাইবে জীবনের নানা ক্ষেত্রে শচীন হতে। সবচেয়ে বড় কথা, দীর্ঘ সময় ধরে নিজের এক্সেলেন্সকে ধরে রেখেছে ও। যা মোটেই সহজ নয়। শচীনের জন্মদিনে, ওকে অনেক, অনেক শুভেচ্ছা। যা কিনা স্বয়ং একটা মাইলস্টোনও বটে!