shono
Advertisement

‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর উদ্যোগে ‘চিকিৎসা জ্যোতি সম্মান’-এ ভূষিত হবেন চিকিৎসকরা

চিকিৎসা জ্যোতি সম্মান অনুষ্ঠানটি আগামী বুধবার, ৬ জানুয়ারি বিকেল ৫ টায় অনুষ্ঠিত হবে।
Posted: 06:25 PM Jan 05, 2021Updated: 06:25 PM Jan 05, 2021

চিকিৎসকের (Doctor) প্রতি আমাদের আস্থা ও সদ্ভাব চিরন্তন। নিজের অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম উজাড় করে একজন চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। ফিরিয়ে আনেন মৃত্যুর মুখ থেকে। স্টেথোধারীদের সম্মান জানাতেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর এই চিকিৎসা জ্যোতি সম্মান (Chikitsya Jyoti Award)। তৃতীয় বছরে পা দেওয়া এই অনুষ্ঠানের এবারের থিম একদম অন্যরকম। করোনার (Coronavirus) ছোবলে বিষাক্ত গোটা পৃথিবী। এই ক্রান্তিকালে যে চিকিৎসক-নার্সরা নিজের জীবন বিপন্ন করে কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাঁদের সম্মান জানানোই এবারের উদ্দেশ্য।

Advertisement

টিকাকরণ শুরু হলেও সার্স-কোভ-২ কে পর্যুদস্ত করার কোনও চিকিৎসা এখনও নাগালে আসেনি। অথচ রোজ নতুন নতুন রূপে জিন কাঠামো বদলে হাজির হচ্ছে এই আরএনএ ভাইরাস। সম্প্রতি ব্রিটেন জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে নয়া স্ট্রেন। যা ভারতেও ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। এমন ভয়াল পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ভিত নড়ে গিয়েছে। তবুও লড়াকু চিকিৎসকরা নিজের জীবনকে বাজি রেখে অনুজীবের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। শত শত মানুষকে অবধারিত মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ঘরবন্দি হয়ে থাকেননি। অনেকেই শহিদ হয়েছেন। এঁরাই তো আসল যোদ্ধা। আমাদের বেঁচে থাকার আলো। ছোঁয়াচে অসুখ থেকে বিপন্ন রোগীদের মুক্তি দিতে কর্তব্য পালনে অনড় চিকিৎসকদের সম্মানিত করতে বিচারকমণ্ডলী কয়েকজন অনন্য কৃতী চিকিৎসক, নার্স ও সহযোদ্ধাদের নির্বাচিত করেছেন। কারা রয়েছেন এই তালিকায়?

(ধন্বন্তরি সম্মান)
ডা. অবিচল চট্টোপাধ্যায়, শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ: কোভিড মোকাবিলায় বড় ভূমিকা নিয়েছে আয়ুর্বেদ। বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন এই সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে। স্বদেশী এই চিকিৎসা পদ্ধতি মান্যতা পেয়েছে বিশ্বের দরবারে। প্রচলিত ওষুধ নিয়ে ভারতে গ্লোবাল সেন্টার গড়ছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) (WHO)। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিল-সহ একাধিক দেশ ভারতীয় আয়ুশ প্রোটোকল মেনে ট্রায়াল শুরু করেছে। এই প্রোটোকল তৈরির অন্যতম কাণ্ডারি বাংলার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডা. অবিচল চট্টোপাধ্যায়।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. পিনাকী রায়, বহরমপুর কোভিড হাসপাতাল: পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন লকডাউনের (Lockdown) তিনমাস পর দলে দলে ফিরছিলেন, মুর্শিদাবাদে তখন করোনা সংক্রমণ এক ঝটকায় অনেকটা বেড়ে যায়। রীতমতো ত্রাহি রব ওঠে। বহরমপুর কোভিড হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে উপচে পড়া ভিড় ও অপ্রতুল চিকিৎসা পরিকাঠামো। ওই শোচনীয় পরস্থিতিতে নিজের টিম নিয়ে সমস্তটা সামাল দিয়েছেন ডা. রায়।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ: বালুরঘাট, মালদহ, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, জলপাইগুড়ি। করোনা বিপজ্জনকভাবে ডালপালা মেলেছে উত্তরেও। জেলার কোভিড রোগীরা সবাই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এসে ভিড় করেছেন। ভিড় সামলে অসাধারণ দক্ষতায় আমজনতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন দীপাঞ্জনবাবু।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. রাজা রায়, এসএসকেএম: সংক্রমণের প্রথম পর্বে পরীক্ষার ক্ষেত্রে বহু সীমাবদ্ধতা ছিল। আরটিপিসিআর যন্ত্রের আকাল। কিটের অপ্রতুলতা। প্রশিক্ষিত ল্যাব টেকনিশিয়ানদের অভাব। এর মধ্যেই ডাক্তারি পড়ুয়াদের নিয়ে টিম তৈরি করে অসাধারণ দক্ষতায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েছেন ডা. রায়। তিনিই প্রথম ট্রু-ন্যাটের উপর আলোকপাত করেন। যা পরে দেশজুড়ে মান্যতা পায়।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. শাশ্বতী সিনহা, এএমআরআই হসপিটাল: বাহাত্তরের বৃদ্ধ, কোভিড পজিটিভ বাঁচার আশা ছিল না। ফুসফুসে ভয়ংকর সংক্রমণ। ৪৯ দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর বৃদ্ধের নবজন্ম। ডা. শাশ্বতী সিনহার অনবদ্য চিকিৎসায় এই মিরাকেল। কোভিডকালে টানা ৩০০ দিনে তিনি মাত্র একদিন ছুটি নিয়েছেন। বহু মানুষকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. চন্দ্রমৌলি ভট্টাচার্য, পিয়ারলেস হাসপাতাল: সম্পূর্ণ নতুন একটা ভাইরাস, যার চরিত্র নিয়ে চিকিৎসক মহলে নানা প্রশ্ন। কীভাবে কোভিড রোগীর চিকিৎসা হবে তাও অজানা। ডাক্তারবাবু তাঁর অভিজ্ঞতা, অধ্যাবসায় ও গবেষণা দিয়ে কোভিড চিকিৎসার রণকৌশল সাজিয়েছিলেন। যা বেসরকারি কোভিড চিকিৎসার শিরদাঁড়াকে শক্ত করেছিল।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. দেবাশিস ঘোষ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল: ভাবুন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো ব্যস্ত হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের উপর কেমন চাপ! ভিতরে যত রোগী বাইরে তার তিন-চার গুণ। অধিকাংশের প্রয়োজন ক্রিটিক্যাল কেয়ার। বেশিরভাগ কোভিড রোগীকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সংক্রমণ মুক্ত করে বাড়ি পাঠিয়েছেন ডা. ঘোষ।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. শুভব্রত পাল, এম আর বাঙুর: বহু মৃতপ্রায় করোনা রোগীকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছেন ডা. শুভব্রত পাল ও তাঁর টিম। এম আর বাঙুর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক নিজের স্ত্রীর সঙ্গে জোট বেঁধে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন। সেখানেও নিজেদের সাধ্যমতো পরামর্শ দিয়েছেন। আক্রান্তদের বাড়িতে ওষুধ, অক্সিমিটার পাঠিয়েছেন।

(চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান)
ডা. যোগীরাজ রায়, ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন:
যার প্রথম পরিচয় সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ। ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার গতিবিধি নিয়েই তাঁর কর্মজগৎ। মহামারীর শুরু থেকেই সার্স-কোভ-টু কে জব্দ করতে তিনি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। হয়ে উঠেছেন রাজ্যের করোনা চিকিৎসার অন্যতম মুখ। করোনা চিকিৎসার অন্যতম সেরা হাসপাতাল হিসাবে বেলেঘাটা আইডি-কে তুলে ধরেছেন। তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই কোভিড রোগীরা জটিলতা কাটিয়ে সুস্থ হয়েছেন।

(সেবাব্রতী)
নীলিমা দাস: মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে নাগাড়ে ডিউটি করেছেন। সংক্রণের ভয়ে যখন অনেকেই কোভিড রোগীর কাছে যেতে ভয় পেয়েছেন, তখন তিনিই হয়ে উঠেছিলেন সংক্রমিত রোগীদের ‘দিদি’। হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি ব্লকে নিত্য ডিউটি করে যাচ্ছেন নীলিমাদেবী। পিপিই কিট (PPE Kit) পরে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীকে পরিষেবা দিয়েছেন।

(সেবাব্রতী)
তাবাস্সুম আরা: মহামারীর শুরু থেকেই নিজের জীবনকে বাজি রেখে সেবিকার মহান আদর্শ একনিষ্ঠভাবে পালন করেছেন। একটা সময় নিজেও করোনা পজিটিভ হয়েছেন। সেরে উঠে আবার ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রোগীর সেবায়। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তৈরি করেছেন এক অসাধারণ পরিবেশের।

মরণোত্তর চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান
ডা. বিপ্লব কান্তি দাশগুপ্ত: কাজপাগল। কোভিড আবহে প্রতিদিন টানা ১১ ঘণ্টা অফিস, একদিনও ছুটি নেননি। বাড়ির লোক তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন ছুটি নিতে। তাঁর দীর্ঘদিন ধরে সুগারের সমস্যা ছিল, কিন্তু তেমন গুরুত্ব দিতেন না। স্ত্রী জানিয়েছেন, কাজেই ডুবে থাকতেন বিপ্লববাবু। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলেও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বই নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন। চলতি বছরের অক্টোবরেই ছিল অবসর। তার আগেই কোভিডের কাছে হেরে গেলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিপ্লব কান্তি দাশগুপ্ত।

সমাজবন্ধু সম্মান
কলকাতা পুলিশ: সংক্রমিত মানুষদের থেকে পরিবার-আত্মিয়জন যখন দূরে সরে গিয়েছেন তখন সমস্ত রকম সাহায্য নিয়ে পাশে এসেছেন কলকাতা পুলিশ। লকডাউন (Lockdown) কালে বন্ধুর মতো সকলকে সাহায্য করে গিয়েছেন। অক্সিজেন, খাবার, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেছেন। একদিকে শক্ত হাতে সংক্রমণ রোধ করেছেন, অন্যদিকে মানুষকে সচেতনতার পাঠ দিয়েছেন। রাস্তায় নেমে গান পর্যন্ত গেয়েছেন। পুলিশ সমাজবন্ধু হয়ে উঠেছে বলেই সহজেই সংক্রমণ বাগে এসেছে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ভুলে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে বহু পুলিশকর্মী বলি হয়েছেন করোনায়। দৃষ্টান্তমূলক মানবিক কর্তব্য পালনের জন্য কলকাতা পুলিশ টিমকে স্যালুট। চিকিৎসাজ্যোতি সম্মান অনুষ্ঠানটি আগামী বুধবার, ৬ জানুয়ারি বিকেল ৫ টায় অনুষ্ঠিত হবে আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে।

চিকিৎসাজ্যোতি সম্মানের প্রথম দিন থেকেই সংবাদ প্রতিদিন-এর সঙ্গী ‘জেআইএস’ গ্রুপ। গ্রুপের কর্ণধার তরণজিৎ সিং প্রতিবার পুরষ্কার প্রাপকদের নিজে হাতে সম্মানিত করেন। আমাদের সঙ্গী আরও একটি সংস্থা ‘ক্রেডেল ফার্টিলিটি সেন্টার’। সংস্থার কর্ণধার তথা বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম রহমানকে আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমাদের সমগ্র অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হবে নিউজ ১৮ চ্যানেলে। ধন্যবাদ ফিভার এফএম, ‘বলরাম মল্লিক অ্যান্ড রাধারমণ মল্লিক’ এবং ‘স্পাইসেস অ্যান্ড সসেস’কে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement