সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘হায়দার’ ছবির কথা সবার মনে আছে। কিন্তু কিশোর সেই ছেলেটির কথা হয়তো আর কারোর মনে নেই। একটি দৃশ্যে শাহিদ কাপুরের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিল সে। সেখানে তাঁর অভিনয় মন কেড়েছিল সবার। সেই প্রণোচ্ছ্বল কিশোর যে লস্কর-ই-তইবার সদস্য, ভাবতে পেরেছিল কেউ? জওয়ানদের গুলিতে সম্প্রতি তার নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই জানা গিয়েছে ফিদাঁয়ে হামলায় জড়িত ছিল সে। তাই পুলিশের ওয়ান্টেড তালিকাতেও ছিল এই ‘চকোলেট বয়’-এর নাম।
আজাদির স্বপ্ন দেখেছিল ছেলেটি। আজাদ কাশ্মীরের স্বপ্ন। আসলে স্বপ্ন বা খোয়াব দেখাটা অপরাধ নয়। কিন্তু তা কার্যকর করতে গিয়ে সে যোগ দিয়েছিল লস্কর-ই-তইবায়। সেটাই মস্ত ভুল হয়েছিল তার। হাতে তুলে নিয়েছিল কালাশনিকভ। জেহাদ আর আজাদির তত্ত্ব মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল তার মনে। পুলিশের খাতাতেও ওয়ান্টেড ছিল সে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ঘরের ছেলে ‘সাকিব বিলাল’ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছে মানতে পারছেন না বান্দিপোরার মানুষ।
অত্যন্ত মেধাবী ছিল সাকিব। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বেছে নিয়েছিল বিজ্ঞানের নানা বিষয়। সে বলত, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। আর ছিল অভিনয়ের নেশা। স্থানীয় নাটকের দলও তৈরি করেছিল। বলিউড এবং সিনেমাপ্রেমীরা অবশ্য তাকে দেখেছে ‘হায়দার’ ছবিতে। যেহেতু সে স্থানীয় পড়ুয়াদের নিয়ে নাটক, অভিনয় করত। সেই সূত্রে ‘হায়দার’ ছবিতে সুযোগ পেয়েছিল সাকিব বিলাল। বিশাল ভরদ্বাজ তাঁর বিশাল টিম নিয়ে যখন কাশ্মীরে ‘হায়দার’ ছবির শুটিংয়ে এসেছিলেন তখন তিনি একস্ট্রার ভূমিকায় স্থানীয় কিশোরদের ও মহিলাদের নিয়েছিলেন। তখন সুযোগ পেয়েছিল সাকিবও। দুটি দৃশ্যে শাহিদ কাপুরের সহ-অভিনেতা ছিল সে।
[ ‘কোরাপ্ট মোদি’ গেমে বিজেপির চাপ বাড়াল কংগ্রেস ]
সেই ছেলেটিই আজাদির নেশায় চলতি বছরে নাম লেখায় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈইবায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে হিজবুল জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যু সাকিবের মনকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। আজাদির স্বপ্ন ফেরি করা বুরহান-সহ কাশ্মীরি যুবকরা ছিল সাকিবের আইকন। হিন্দুস্তানের হাত থেকে কাশ্মীরের আজাদি ছিনিয়ে নিতে তাই বুরহানের দেখানো পথেই নাম লিখিয়েছিল কিশোর সাকিব। স্বেচ্ছায় লস্করের দক্ষিণ কাশ্মীরের কমান্ডে যোগ দিয়েছিল সে।
গত ৯ ডিসেম্বর কাশ্মীরের মুজগুন্দে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় কয়েক জন লস্কর জঙ্গির। সেই দলে ছিল সাকিবও। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় গুলিযুদ্ধে এঁটে উঠতে পারেনি সে। নিহত হয় সাকিব। ওই সংঘর্ষে নিহত হয় লস্করের সঙ্গে যুক্ত ক্লাস নাইনের পড়ুয়া মুদাসির। অথচ সাকিবের পরিবার, আত্মীয়-স্বজনরা কিন্তু এই পরিণতি একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না।
গত ৩১ আগস্টের আগে পর্যন্ত সব ছিল স্বাভাবিক। পড়াশোনা, থিয়েটারে অভিনয়, ফুটবল-কবাডি-তাইকোন্ডোতে মেতে থাকা যে ছেলেটি গ্রামেও ছিল তুমুল জনপ্রিয় সে আজ শুধুই একটি লাশ। বান্দিপোরায় তার জানাজায় ছিল হাজার মানুষের ভিড়। বুক চাপড়ে কেঁদেছেন কয়েক শ’ নারী পুরুষ। সাকিবের বুলেটবিদ্ধ দেহ ময়না তদন্তের পর ‘দাফন’ করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে। মাটি চাপা দেওয়ার পর কবরের উপর উপচে পড়েছে ফুল আর চোখের জল।
গত ৯ ডিসেম্বর মুজগুন্দে সেনাবাহিনী ও লস্করের জেহাদিদের মধ্যে প্রায় ১১ ঘন্টা ধরে চলতে থাকা সংঘর্ষ নিহত হয় সাকিব ও তার বন্ধু।
[ মালিয়া চোর নয়, লিকার ব্যারনের পাশে দাঁড়ালেন গড়করি ]
The post লস্করের সঙ্গে যোগ, সেনার গুলিতে নিহত ‘হায়দার’ ছবির অভিনেতা appeared first on Sangbad Pratidin.