অভিরূপ দাস: টানা ১১ মাস বন্ধ থাকার পর ১২ ফেব্রুয়ারিতে খুলেছিল দরজা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই শিক্ষালয় নিয়ে কপালে ভাঁজ। নয়া স্ট্রেনে অল্পবয়সিদের আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এমতাবস্থায় কীভাবে ক্লাস চলছে তা নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যেই শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হিড়িক দেখে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে চিঠি দিয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
এদিকে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বুধবার বাতিল করা হয়েছে সিবিএসই দশম শ্রেণির পরীক্ষা। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ রূপা এস ভট্টাচার্য্য। তাঁর কথায়, “মারাত্মক এই অবস্থায় ঘরের মধ্যে থাকাই সঠিক সিদ্ধান্ত। সাউথ পয়েন্ট-সহ শহরের প্রথম সারির স্কুলগুলি অনলাইন মোডে পঠন পাঠনকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। ফলে ছাত্র ছাত্রীদের কোনও অসুবিধে হবে না।”
দিল্লির সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর। একই অবস্থা এ রাজ্যেরও। করোনার দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ছ’হাজার ছুঁই ছুঁই। দৈনিক মৃত্যু সংখ্যাও ফের পেরিয়ে গিয়েছে দু’ অঙ্ক। প্রশ্ন উঠছে, এমতাবস্থায় স্কুল কি খুলে রাখা উচিৎ? জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দোলুই জানিয়েছেন, পঠন পাঠনে বিঘ্ন ঘটুক এমনটা আমরা চাই না। কিন্তু স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব মানছে কি না তা স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতেই হবে। রাজ্যে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। কোনওভাবে এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর জীবন বিপন্ন হতে দেওয়া যাবে না। তাঁর পরামর্শ, প্রতিটি শ্রেণিতে ছ’ফুট দুরত্ব রেখেই বসাতে হবে ছাত্রদের। ডা. দোলুইয়ের অনুরোধ, স্কুলের সময়টুকু বাদ দিয়ে টিফিন পিরিয়ডেও যেন কোভিড বিধি মানা হয় সেদিকে কড়া নজর রাখুক স্কুল কর্তৃপক্ষ।
[আরও পড়ুন: ভোট মরশুমে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা গ্রাফ, রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত প্রায় ৬ হাজার]
২০২০-তে করোনার জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর টানা ১১ মাস বন্ধ ছিল স্কুল। প্রাথমিক বাদ দিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলে গিয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি। রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ লক্ষ। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তার চেয়েও বেশি। প্রশ্ন উঠছে সিবিএসই বোর্ডের পথেই কি হাঁটবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ? একে ঘোষ মেমোরিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ তুহিন গুহ জানিয়েছেন, কোনও নির্দেশ তো আসেনি। জুন মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা হতে পারে। তা চিন্তা করেই দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের টেস্ট পরীক্ষা ধাঁচের একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শ্রেণিতে ছাত্রসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয় তাঁর মন্তব্য, “আমাদের স্কুলে প্রতিটি শ্রেণির একেকটি বিভাগে চল্লিশ জন করে ছাত্র রয়েছে। কুড়িজন করে ছাত্র নিয়ে দু’টি ভাগে ক্লাস হচ্ছে। কোনওভাবে যাতে শ্রেণিকক্ষে ভিড় না হয় তা আমরা নজরে রেখেছি।” তবে কোভিডের বাড়বাড়ন্তে আতঙ্কে তিনিও।
শিশু কিশোরদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার বাড়বাড়ন্তে প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্স নামক চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের কাছে পৌঁছে গিয়েছে চিঠি। সেই চিঠিতে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার হার মারাত্মক। অল্পবয়সিদের মধ্যে ডায়েরিয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, বমি এমন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। তাঁদের দাবি, “পেডিয়াট্রিক কোভিড ম্যানেজমেন্টকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে পেডিয়াট্রিক কোভিড সেন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। করোনা আক্রান্ত হয়ে অবস্থা সঙ্গীন হলে আইআভিআইজি বা ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিন ইঞ্জেকশন প্রয়োজন শিশুদের। যথেষ্ট পরিমাণে তা মজুত রাখতে হবে সরকারী বেসরকারি ক্ষেত্রে।