shono
Advertisement
Voyager

সৌরজগৎ পেরিয়ে ভেসে চলেছে ভয়েজার! ভিনগ্রহীদের কোন বার্তা দেবে মানুষের স্বপ্নযান

গত পাঁচ দশক ধরে মানুষের এই দুই স্বপ্নযান ভেসে চলেছে।
Published By: Biswadip DeyPosted: 06:22 PM Aug 16, 2025Updated: 06:22 PM Aug 16, 2025

বিশ্বদীপ দে: 'উই আর লাইক বাটারফ্লাইজ হু ফ্লাটার ফর আ ডে অ্যান্ড থিঙ্ক ইট ইজ ফরএভার।' চিত্রবিচিত্র বর্ণের প্রজাপতিরা একটি দিন কাটিয়েই ভাবে আমি এমন করেই চিরকাল রয়েছি। মানুষের অবস্থাও তেমন। সে যাকে অসীম ভাবে তা আসলে হয়তো একটি দিন। এমনটাই মনে করতেন কার্ল সাগান। বিশ্ববিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানীর এই কথাটির মধ্যে মানুষ ও কসমসের মধ্যে সম্পর্ককে ধরা আছে নিপুণ ভাবে। আদিম যুগ থেকে আকাশে নক্ষত্রমালা দেখে মানুষ ভেবে এসেছে কত কিছু! কিন্তু পরবর্তী সময়ে জানা গিয়েছে, এই দূরত্ব আমাদের কল্পনারও বাইরে। ব্রহ্মাণ্ডের কথা বাদই থাক। কেবল সৌরজগতের ওপারে কী আছে তা বুঝতে গেলে শক্তিশালী দূরবিনে চোখ রাখাটুকুই একমাত্র উপায়। তবে ভয়েজার ১ ও ভয়েজার ২ মানুষের পাঠানো মহাকাশের দূত। তারা সংকেত পাঠিয়ে চলেছে সেই সুদূর থেকে। সৌরজগতের একেবারে সীমান্তে পৌঁছে তারা এখন ইন্টারস্টেলার ফেজে। গত পাঁচ দশক ধরে মানুষের এই স্বপ্নযান দু'টি ভেসে চলেছে ভিনগ্রহীদের কাছে মানুষের খবর পৌঁছে দেবে বলে। কী রয়েছে তাদের সঙ্গে? সত্যিই কি তারা দেখা পাবে অন্য গ্রহের বাসিন্দাদের?

Advertisement

২০১২ সালে ভয়েজার ১ ইন্টারস্টেলার স্পেসে ঢুকে পড়েছিল। ভয়েজার ২ আরও কয়েক বছর পরে ২০১৮ সালে সেই জগতে প্রবেশ করে। তারাদের সেই রাজ্যে ভেসে বেড়ায় লক্ষ লক্ষ বছর আগে মৃত নক্ষত্র থেকে নির্গত মহাজাগতিক পদার্থ। সেই আশ্চর্য জগতের খবর তারা পাঠিয়ে চলেছে মানুষকে। ১৯৭৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করেছিল ভয়েজার ২ ও ভয়েজার ১। তবে এখন ভয়েজার ১ এগিয়ে রয়েছে তার থেকে। এই মহাকাশযানই পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো দূরতম বস্তু। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেব ধরলে আমাদের নীল রঙের গ্রহ থেকে সে চলে এসেছে ২৪.৯ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ ২৪৯০ কোটি কিলোমিটার!

তবে মাঝেমধ্যে বিগড়েও যেতে দেখা গিয়েছে ভয়েজার ১-কে। ২০২৩ সালে আচমকাই 'ভুল বকা' শুরু করেছিল সে। তবে পৃথিবী থেকে পাঠানো সংকেত কিন্তু দিব্যি ‘রিসিভ’ করছিল যানটি। কিন্তু পাঠাচ্ছিল অর্থহীন তথ্য। ভাবিক ভাবেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল নাসার বিজ্ঞানীদের কপালে। তাঁরা খুঁজতে শুরু করেছিলেন ভয়েজারের ‘অসুখ’। অবশেষে দেখা যায় যানের একটি মাত্র চিপেই যত গোলমাল! শেষে সেটা সারিয়ে তুলতেই ফের কর্মক্ষম হয়ে ওঠে ভয়েজার ১। হাঁফ ছাড়েন বিজ্ঞানীরা।

তবে 'চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।' ভয়েজারেরও থাকবে না। এই বছরের পর আর বিজ্ঞানের তথ্য সে সংগ্রহ করতে পারবে না। ভয়েজারের পাওয়ার ব্যাঙ্ক থেমে যাবে। তবে তার সংগৃহীত তথ্য এরপরও জমা হতে থাকবে পৃথিবীর রিসিভারে! মোটামুটি ২০৩৬ সালের মধ্যেই আর ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাবে তারা। তবে এরপরও তারা ভেসে চলবে অন্তরীক্ষে। ভিনগ্রহীদের সঙ্গে দেখা 'খবর' দেবে অতিকায় আকাশের বুকে জেগে থাকা 'পেল ব্লু ডট'-এর। ভয়েজার ১ ১৯৯০ সালে তুলেছিল এক ছবি। পৃথিবী থেকে সেই মহাকাশযান তখন ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে। সেই ছবিতে মহাকাশের কৃষ্ণশরীরে দেখা যায় একটা বিবর্ণ নীল বিন্দুকে। একেই ডাকা হয় ‘পেল ব্লু ডট’ নামে। পরবর্তী সময়ে কার্ল সাগান একই নামের বইয়ে সেই ছবির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, এই ছবি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এই ব্রহ্মাণ্ডে মানুষের অবস্থান কতটা ক্ষুদ্র! কিন্তু যতই ক্ষুদ্র হোক, অমৃতের পুত্রকন্যারা আজও তারে চেতনায় মিলিত হতে চায় বাকি মহাজগতের সঙ্গে। আর তাদের দূত হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে ভয়েজার। তাদের শরীরে রয়েছে 'টাইম ক্যাপসুল'। অর্থাৎ এককথায় মানুষের ইতিহাস, চেতনা, দর্শনের এক সমষ্টি। যা অন্য কোনও জগতের জীবদের সংস্পর্শে এলে তারা জানতে পারবে আমাদের কথা।

কী আছে ওই দুই মহাকাশযানে। দুটি যানেই রয়েছে এক খণ্ড ইউরেনিয়াম যার ভিতরে অবস্থিত তেজস্ক্রিয় ঘড়ি। যে ঘড়ি দেখলে যানটির উৎক্ষেপণের সময়টা জানা যাবে। রয়েছে সোনার রেকর্ড। ১২ ইঞ্চির ওই রেকর্ডগুলিতে রয়েছে সৌরজগতের মানচিত্র। রয়েছে সারা বিশ্বের সুরের নমুনা-সহ (বিঠোভেন থেকে মোৎজার্ট) মানুষের পাঁচহাজার বছরের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান। রয়েছে তিমির ডাক, পাখির ডাক এবং আরও কত জন্তুজানোয়ারের ডাক!

সাড়ে তিন দশক আগেই আমাদের নীল রঙের গ্রহটা ভয়েজারের কাছে হয়ে উঠেছিল একটা বিবর্ণ নীল বিন্দুবৎ। একদিন সে তার নাগালটুকুও আর পায় না। কিন্তু তার শরীরে রাখা মানুষের 'চিঠি' থাকবে অন্তরীক্ষের পথে 'চকমকি পাথর' হয়ে। অন্য কোনও জগতের বাসিন্দারা হয়তো সেই সংকেত পড়ে জানতে পারবে এক মাঝারি মানের নক্ষত্রের পরিবারের এক সাধারণ গ্রহের কথা। জানবে আমাদের কথা। জানবে এখানে বসবাসকারী না-মানুষদের কথাও। আর ভয়েজার? মহাকাশের বুকে ভাসতে ভাসতে কতদূরে পৌঁছবে সে? দেখা না গেলেও সভ্যতার হৃদয়ে একটা স্বপ্নের ভিতরে জারি থাকবে ভয়েজারের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন পেরিয়ে সভ্যতা এগিয়ে গিয়েছে পঞ্চাশ বছর। সাতাত্তরের পৃথিবী এখনই কেমন 'অলীক' মনে হয়। সেই হারানো পৃথিবীকে ফেলে ভয়েজার এগিয়ে চলেছে বহু দূরে। যেখানে স্বপ্নই কেবল পৌঁছতে পারে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement