করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার পর কী কী পরিবর্তন হল শরীরে? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার শেয়ার করলেন কোভ্যাক্সিনের হিউম্যান ট্রায়ালের প্রাথমিক পর্যায়ের টিকা প্রাপক চিরঞ্জিত ধীবর।
আগে ছিলাম ৬২। এখন ৬৯। কোভিড টিকা নিয়ে আমার সাত কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছে। হাঁটাচলা করেছি। চিকিৎসকদের কথামতো প্রাণায়ামও। কেন ওজন বেড়ে গেল তা বুঝতে পারছি না। চিকিৎসকদের বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁরা অভয় দিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পর প্রথম ৩০ দিনই গুরুত্বপূর্ণ। রোজ নিজেকে জরিপ করতে হবে। চোখটা লাল হল কি না। শরীরে কোথাও কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না। তেমন কিছু হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকদের জানাতে হবে। ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গনগরের ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সাম হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমায় এমনটাই বলেছিলেন। জুলাইয়ের শেষে ওখানে আমি কোভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিই। তার আগে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চকে টিকা নেওয়ার আবেদন করে একটা চিঠি লিখেছিলাম। করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের (Covaxin) নিয়ম প্রথমে একটি, তারপর ১৪ দিন বাদে আরও একটি ডোজ নিতে হয়। সেই মতো আমার প্রথম ডোজ ২৯ জুলাই আর পরেরটা ১২ আগস্ট। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর স্বাভাবিকই ছিলাম।
[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় নির্মূল হতে পারে করোনা! মিলেছে মোক্ষম অস্ত্রের সন্ধান, দাবি মার্কিন গবেষকদের]
দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরই শুরু হল গা হাত পায়ে অসহ্য ব্যথা। সঙ্গে মারাত্মক মাথা যন্ত্রণা। একশো দুইয়ের কাছাকাছি জ্বরও এসেছিল। টানা দু’দিন ওই অবস্থা ছিল। ৪৮ ঘণ্টা শুয়েই ছিলাম। ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হল। প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খেতে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তারপর শুরু হল খুশখুশে কাশি। চিকিৎসকদের জানাতে ওঁরা একটা কাফসিরাপ খেতে বলেন। সাতদিন অন্তর অন্তর আমার চেকআপ হত। ২৮ দিন এভাবে চেকআপ চলার পর আমি দুর্গাপুরে নিজের বাড়ি চলে আসি। ১০৪ দিনের মাথায় নভেম্বরে ফের একবার ভুবনেশ্বরে যাই। এবার পালা রক্ত পরীক্ষার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ফলাফল অন্তত সন্তোষজনক। কোনও সমস্যা নেই। রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ চাহিদা অনুযায়ী রয়েছে। এর মানে আমি করোনাকে আটকাতে পারব।
টিকা নেওয়ার পর কিছু জিনিস মাথায় রাখবেন। টিকা নিলাম আর মনে করলাম এবার যা খুশি করতে পারি। বিষয়টা এমন নয়। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন, নিয়মিত যোগাসন, প্রাণায়াম করতে। বিশেষ করে অনুলোম, বিলোমের মতো শ্বাসের ব্যায়াম। সকালে অল্প হলেও হাঁটাহাঁটি করতে বলেছেন। টিকা নেওয়ার পর মদ্যপান এবং ধূমপান একদম বারণ। টানা ছ’মাস কোনওরকম নেশা করবেন না। খাবারদাবার সহজপাচ্য। রোজকার ডায়েটে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে বলছেন চিকিৎসকরা। টিকা নেওয়ার পর আমায় একটা ডায়েরি দিয়েছিল কোনওরকম শারীরিক অসুবিধে হলে সেখানে লিখে রাখাটাই উদ্দেশ্য। প্রথম একমাস শরীরের পরিবর্তনের রোজনামচা তাতেই লিখতাম। করোনা অসুখটা নতুন। তবে টিকা নেওয়ার সময় ভয় পাইনি। এখন আমার শরীরের করোনাকে প্রতিহত করার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, এটাই আসল।