দেব গোস্বামী, বোলপুর: ৪০০ পারের ডাক দিয়ে ২৯২-এ থামতে হয়েছে এনডিএ-কে। হিন্দুত্বের 'গড়' উত্তরপ্রদেশে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। অযোধ্যায় রামমন্দির গড়েও ফৈজাবাদে হেরেছে গেরুয়া প্রার্থী। এই প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি, যোগী আদিত্যনাথ ও বিজেপিকে একহাত নিলেন পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। তাঁর কথায়, "প্রধানমন্ত্রীর রামমন্দির উদ্বোধন করা উচিত হয়নি, অয্যোধ্যাবাসী বিজেপিকে সঠিক জবাব দিয়েছেন। বিজেপির ভরাডুবি রামকে নিয়ে রাজনীতির পরিনাম।"
তিনদিনের ঠাসা কর্মসূচিতে বোলপুরে এসেছেন পুরীর ১৪৫তম শঙ্করাচার্য। বুধবার থেকে ৭ জুন পর্যন্ত গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে তাঁর নানান কর্মসূচি ছাড়াও রাষ্ট্রোৎকর্ষ সম্মেলন, শীর্ষক প্রবচন, পূজা অর্চনা,দীক্ষা দেওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এদিন শ্রোতা, ভক্ত, শিষ্যদের উদ্দেশ্যে প্রবচনের মাঝে তিনি বলেন,"প্রধানমন্ত্রীর রামমন্দির উদ্বোধন করা উচিত হয়নি। অয্যোধ্যাবাসী-সহ দেশের মানুষ বিজেপিকে সঠিক জবাব দিয়েছেন।" তাঁর সংযোজন, "আমার সঙ্গে যারা টক্কর নেওয়ার চেষ্টা করেছে শেষ হয়ে গিয়েছে। মোদিজর উচিত আমার সঙ্গে টক্কর না নেওয়া।" প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনে যোগ দেননি পুরীর এই শঙ্করাচার্য। বিরোধিতা করে তিনি জানিয়েছিলেন, সঠিক বিধি মেনে রাম মন্দিরের উদ্বোধন হয়নি।
[আরও পড়ুন: দেবতার গ্রাস! উত্তরকাশীতে প্রকৃতির রুদ্ররোষে প্রাণ হারালেন ৯ ট্রেকার, চলছে উদ্ধারকাজ]
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিশ্চলানন্দ সরস্বতী বলেন, "অযোধ্যায় মানুষ বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়ে জবাব দিয়ে দিয়েছেন। রামমন্দির উদ্বোধনে যদি ভালো প্রভাব পড়ত তাহলে বিজেপির অযোধ্যায় জিত নিশ্চিত ছিল। অযোধ্যাবাসী যে সহমত নয়, তা বুঝিয়ে দিল এই ভোটের রায়৷" তাঁর কথায়, "অলৌকিক আচার না মানলে গণতন্ত্র থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর রাজনেতা হওয়ার কারণে তাঁর রামমন্দির উদ্বোধন করা ঠিক হয়নি।" পুরীর শঙ্করাচার্যের মতে, প্রধানমন্ত্রী ভেবেছিলেন, যদি দেশে কংগ্রেসের শাসন হয়। রামমন্দির সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। এই ভাবনা থেকেই তড়িঘড়ি রামমন্দির উদ্বোধন করে দিয়েছেন। মোদিজি কংগ্রেসকে দুর্বল মনে করতেন বলেই মত তাঁর। কিন্তু নির্বাচনের পরে আর তা মনে করবে না।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর কথা, "এই পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতি বসু আমার সঙ্গে টক্কর নিয়েছিল শেষ হয়ে গিয়েছে। লালুপ্রসাদ যাদব টক্কর নিয়েছিল। মুলায়ম সিং যাদব টক্কর নিয়েছিল শেষ হয়ে গিয়েছে। মোদিজির উচিত আমার সঙ্গে টক্কর না নেওয়া। আকাশকে কি ঘুষি মারা যায়! আমরা সেই জায়গায় বিচরণ করি। যোগী আদিত্যনাথ আমাকে ছোট করার জন্য একটা আতঙ্কবাদীকে শঙ্করাচার্য বানিয়ে ঘোরাচ্ছিল। তবে 'মুঝ সে জো টকরায়েঙ্গে চুর চুর হো জায়েগেঙ্গে এইরকম কথা আছে এটা মান্যতা দেওয়া উচিত।" তবে এমন প্রবচনের পর গুঞ্জন ছড়িয়েছে রাজনৈতিক অন্দরে।