সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়: ভাল বাজার, মন্দ বাজার, এ এক অদ্ভুত বাজার। চূড়ান্ত উথাল-পাথাল। একদিন পড়ে যায়, পরের দিন বেড়ে যায়। আবার তার পরের দিন পড়ে যায়। এর একটা বড় কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং ঊর্ধ্বমুখী তেলের দামে অর্থনীতির উপর খরচের বোঝা চাপে এবং তার সঙ্গে পাল্লা দেয় টাকার মূল্যহ্রাস। এই সব নিয়েই গত সপ্তাহে শেয়ার বাজার বন্ধ হল। আজ, সোমবার। শেয়ার বাজার বন্ধ। কেননা, মুম্বইতে ভোট। মঙ্গলবার খোলা। আবার বুধবার বন্ধ। কারণ, মে দিবস। অর্থাৎ তিনদিন মাত্র বাজার খোলা। এতে বাজারের চালচিত্র বোঝা সম্ভব নয়। সুতরাং বাজার কোনদিকে যাবে সেটা বোঝা মুশকিল।
[SBI সেভিংস অ্যাকাউন্টে কমছে সুদের হার, জেনে রাখুন পাঁচটি তথ্য]
এপ্রিল মাসটা শেষ হল। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যে সমস্ত শেয়ার নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল আইনক্স। তখন দাম ছিল ৩৩০ টাকা। এখন দাম ৩১০ টাকা। দামে তেমন হেরফের নেই। কারণ মার্চের মাঝামাঝি দাম ছিল ২৮০ টাকা। যা এপ্রিলের গোড়ায় পৌঁছে যায় ৩৪০-এ। ওই সপ্তাহেই পিভিআর সম্পর্কে বলা ছিল। একই ব্যবসা। তখন দাম ছিল ১৬০০। এখন ১৭০০। এইক্ষেত্রে শেয়ারের দাম কিছুটা বেড়েছে। দুটো শেয়ারেই লগ্নি চলতে পারে।
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইনফোসিসের দাম ছিল ৭৬০। এবং টিসিএসের দাম ছিল ২০৫০। এবার ইনফোসিসের ফলাফল অতটা মনের মতো হয়নি। ফলাফল ছাড়াও ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কোম্পানি ইতিবাচক কিছু দেয়নি। ফলে দাম থিতিয়ে আছে। দাম এখন ৭৪০-৭৫০ টাকার মতো। ওদিকে টিসিএসে খুব ভাল গিয়েছে।
এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে এলঅ্যান্ডটি ইনফোটেকের দাম ছিল ১৬৫০। দাম এখন পৌঁছে গিয়েছে ১৭১০ টাকায়। লগ্নি থাকলে সেটা চলতে থাকুক। লগ্নি করাও যেতে পারে। দামটা সস্তা পেলেই করবেন। মারুতির বেহাল অবস্থা চলছিল। ফলাফলেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। দাম এখন ৬৮০০। ম্যানেজমেন্ট এখনই খুব একটা আশাবাদী নয়। দামে তার প্রতিফলন যথেষ্ট দেখা যাচ্ছে। শেয়ার বাজারের ভাষায় এটাকে বলা হয় দাম ডিসকাউন্ট করে বসে আছে। অল্প অল্প করে এখন থেকে কেনা যেতে পারে। হাতে টাকা রাখতে হবে কেনার জন্য।
গত সপ্তাহের শুরুতে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের দাম ছিল ৪০৪। সপ্তাহের মধে্য দাম নিচে আসে ৩৯৩। আবার সপ্তাহের শেষে দাম পৌঁছে যায় ৪০৭ টাকায়। লজিকটা ছিল যে বিদেশি লগ্নিকারীরা যেখানে কেনাকাটা করে সেখানে আমাদের কেনাকাটাটাও থাকা উচিত। বিষয়টা হচ্ছে যে দাম নিচে পেলে কিনবেন। আগামিদিনে কোন কোন কারণে সেটা পেলেও পেতে পারেন। সেটা পেলে যেন হাত গুটিয়ে বসে না থাকেন।
এই সপ্তাহে যে শেয়ারটি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা যায় তা হল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি। দাম ঐতিহাসিক উচ্চতায়। এই সপ্তাহে পাওয়া যাচ্ছিল ১৩৪০। এই সপ্তাহের মধে্য দাম ১৪০০-র উপর পৌঁছে গিয়েছে। জিও এবং রিলায়েন্স রিটেল যেভাবে ব্যবসা সাজিয়েছে তাতে ভবিষ্যতের প্রথম সারির রিটেল কোম্পানি হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যাবে। সুতরাং কত বড় মাপের কোম্পানি বুঝতেই পারছেন। আমি মনে করি যে এই কোম্পানির ব্যবসা আরও বাড়বে। কোন দামে
কিনলে কী হবে সেটা অন্য বিষয়। তবে অল্প অল্প করে কিনতে থাকুন। বর্তমান দামটা যদি উঁচু মনে করেন তাহলে হয়তো কেনা হবে না। কারণ ভবিষ্যতের উঁচু দামটা তো আমরা কেউ জানি না। যদি ভবিষ্যতের দাম অনেক উঁচুতে হয় তখন মনে হবে বর্তমান দামটা অনেক সস্তা ছিল।
সূচক নিফটি বর্তমানে ১১৮০৮-তে। চারদিকের পরিস্থিতি এরকম একটা মনে হচ্ছে যে সূচক ১২০০০ হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে। কেন ১২০০০ হবে সেটা জানি না। কিন্তু ধরনধারণ সেরকমই বলছে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে যে ১২০০০ যদি হয় তাহলে কারা বৃদ্ধি পাবে। এই বিশ্লেষণ করতে অনেক সময় লাগবে। এই মাসেই ভোটের ফল।
সুতরাং ১২০০০ হতে হতে উল্টোদিক চলেও যেতে পারে কারণ ফলাফলে যদি বাজার আশাহত হয়। সুতরাং নিফটি নিয়ে খেলতে গেলে বিপদের মাত্রাটা খুব উঁচু। কিন্তু কিছু লোক আছে যারা বিপদকে ভয় পায় না। আলোচনাটা তাদের জন্যই করছি।
আসলে নিফটিতে যে উত্তেজনা আছে শেয়ারে সেই উত্তেজনাটা অনুভব করা যায় না। এই লেনদেনে অপশন আছে। যা প্রতি বৃহস্পতিবার এক্সপায়ার করে। কল অপশন নামে একটা অপশন হয়। যাঁরা করেন তাঁদের বক্তব্য, আগামিদিনে নিফটি সূচক উপরের দিকে যাবে। সেই অপশন কিনতে হলে একটা প্রিমিয়াম দিতে হয়।
নিফটি সূচক যদি বাড়ে তাহলে প্রিমিয়াম বাড়ে। নিফটি সূচক যদি না বাড়ে তাহলে প্রিমিয়াম কমতে থাকে। এই যে ১২০০০-এর কথা বলছিলাম সেখানকার কল অপশন মে মাসে যা এক্সপায়ার করবে তার দাম ২০০ টাকা। অর্থাৎ মে মাসের মধ্যে যদি ১২০০০ পৌঁছে যায় তাহলে বর্তমান দাম দেখে কল অপশন অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। সেদিন দেখছিলাম এই কল অপশনে খুব লেনদেন হচ্ছে। দামটা বেশি এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তার একটা কারণ হচ্ছে যে ২৩ মে নির্বাচনের ফলাফল। সেই জন্য দামটা বেশি। কিন্তু এই অপশন দিনের দিনও খেলা যায়। আপনি কিনে বসে থাকবেন সেরকম ব্যাপার নয়। এখন আপনি যদি মনে করেন ভোটের ফলাফল বাজারের মন চাঙ্গা করে দেবে তাহলে এই অপশন কিনে রাখতে পারেন। এই মুহূর্তে আশার বাজার। বর্তমান সরকার কে গঠন করবে তা নিয়ে আশাবাদী বাজার। তাই শেয়ার চাঙ্গা। এবার আপনি যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে অপশন কিনবেন না। এই সব ফাটকাবাজি চলার দিন চলছে। লগ্নিকারীদের জন্য নয়। আমি নিজেও মনে করি এখানে হাত পোড়ানোর কোনও মানে নেই। লোভটাকে সামলে রাখতে হবে। তবে যাঁরা লোভ করেন তাঁদের জন্যই এই পরামর্শটা।
[জিতলেই দেওয়া হবে বাড়ি, মুম্বইয়ের বসতিবাসীদের প্রতিশ্রুতি রাহুলের]
The post বাজারের চালচিত্র অনিশ্চিত, এড়িয়ে চলুন ফাটকার ফাঁদ appeared first on Sangbad Pratidin.