সুকুমার সরকার, ঢাকা: দেশের পশ্চিম সীমান্ত জেলা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার আনোয়ারুলের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আনোয়ারুলের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এদিকে এই ঘটনার তদন্ত উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কলকাতায় তিনি নাকি একা যাননি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ব্যক্তি।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শোকবার্তা পাঠানো হয়। সেখানে হাসিনা আনোয়ারুলের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে ‘খুন’ হন আনোয়ারুল! বাবার হত্যার বিচার চেয়ে এই মেয়ে ডরিন এদিন বলেন, "আমাকে যারা পিতৃহারা করল আমি তাদের বিচার চাই।" এই খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার সন্দেহে ইতিমধ্যেই ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসবাদ করা হচ্ছে। এর মাঝেই তদন্তে উঠে এসেছে আরেক তথ্য। জানা গিয়েছে, আনোয়ারুল একা ভারতে গিয়েছেন বলে শুরু থেকে প্রচার করা হলেও আসলে তাঁর সঙ্গে নাকি আরও দুজন ছিলেন। তারাও বাংলাদেশি বলে খবর। ওই দুই ব্যক্তি সাংসদের দীর্ঘদিনের পরিচিত। তাঁদের বাড়িও আনোয়ারুলের এলাকায় বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এখন ওই দুজন কোথায় রয়েছেন তা জানা যায়নি।
[আরও পড়ুন: ‘মাদক সম্রাট’ থেকে বাংলাদেশের সাংসদ! কে এই কলকাতায় ‘খুন’ হওয়া আনোয়ারুল?]
এদিনের ভারতের কাছ থেকে ভারত খবর পাওয়ার পরই পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বসেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, “১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল ভারতে গিয়েছিলেন। তার দুদিন পর থেকে ওনার সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। উদ্বিগ্ন হয়ে আনোয়ারুলের পরিবার আমাদের কাছে সাহায্য চায়। তার পর থেকে আমাদের পুলিশ ভারতের পুলিশ সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। আজ আমাদের কাছে খবর আসে খুন করা হয়েছে আনোয়ারুলকে। ভারতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পুলিশ তদন্তে নামে। এই খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার সন্দেহে ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে। আপনারা জানেন ঝিনাইদহ এলাকাটি সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা। এইবারে তিনি সেখান থেকেই সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পরই চিকিৎসা করাতে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটে। এই ঘটনার তদন্তে ভারত আমাদের সবরকমভাবে সাহায্য করছে। আমরা এখন এইটুকুই বলতে পারি কলকাতার একটি বাড়িতে ওনাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। কী কারণে তাঁকে খুন করা হল তা জানতে ভারতের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি।” তবে এই ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: নিউটাউনে সাংসদকে ‘খুনে’র ষড়যন্ত্র বাংলাদেশেই! গ্রেপ্তার ৩]
আসাদুজ্জামান খানের দাবি, "এই কাণ্ডে ভারতের কেউ জড়িত নন, আমাদের বাংলাদেশের মানুষ জড়িত। আজ সকালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধাননগরের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে নিউটাউনের টেকনোসিটি থানার পুলিশ সংসদ সদস্য আনোয়ারুলের দেহ উদ্ধার করে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, যেদিন তিনি নিখোঁজ হয়েছেন, সেদিনই তাঁকে খুন করা হয়। হত্যার পর তাঁর মরদেহ সরিয়ে ফেলার জন্য চেষ্টা চলছিল। তাই তাঁর মোবাইলের লোকেশন বদল করে বিভ্রান্ত করা হচ্ছিল।" আনোয়ারুলের মৃত্যুর খবর জানার পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলিগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানি জানান, স্থানীয় কোনও শত্রু, রাজনৈতিক বিরোধ কিংবা ব্যবসায়িক কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।