shono
Advertisement

Breaking News

ডেঙ্গু আর স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ প্রায় এক, সতর্ক থাকুন, বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া শুরু করবেন না।
Posted: 08:17 PM Oct 07, 2023Updated: 08:17 PM Oct 07, 2023

দাগ, র‌্যাশ, হাই টেমপারেচার? এই মরশুমে বেশ বেড়েছে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই হচ্ছে। কীভাবে বুঝবেন আপনিও সংক্রমিত? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সৌম্যকান্তি পন্ডা জানালেন সতর্ক হতে কী করবেন ও কী করবেন না।

Advertisement

সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে এখন স্ক্রাব টাইফাসের (Scrub Typhus) নাম অনেকেই শুনে ফেলেছেন। অথচ, কয়েক বছর আগেও, এই রোগের নাম জনসাধারণ তো বটেই, চিকিৎসকদেরও একটা বড় অংশের কাছে বেশ অপরিচিত ছিল। প্রতি বছরই বর্ষার সময় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এ বছরও প্রচুর সংখ্যক স্ক্রাব টাইফাসের রোগী দেখা যাচ্ছে। অনেক বাচ্চাই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হচ্ছে। যদিও ডেঙ্গু নিয়ে যতখানি আলোচনা হয়, স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে সেরকম সচেতনতা এখনও গড়ে ওঠেনি।

স্ক্রাব টাইফাস কি খুব নতুন রোগ?
না, একেবারেই তা নয়। চলুন, ইতিহাসের পাতায় চোখ রেখে একটু পিছিয়ে যাই। এই রোগের প্রথম বর্ণনা পাওয়া যায় চিনে। যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও ৩১৩ বছর আগে। নেপোলিয়নের বাহিনীর একটা বড় অংশ এই টাইফাস জ্বরে ধ্বংস হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় আঠারো হাজার সৈন্য এই রোগের কবলে পড়েন। এখন বছরে প্রায় একশো কোটি মানুষ এই জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হন এবং একশো কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। ভারত, নেপাল, চিন, তিব্বত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি দেশ মিলে এই রোগের সাথে সম্পর্কিত কুখ্যাত ‘শুশুগামুশি ত্রিভুজ’ গঠন করে।

ঠিক কী রকম অসুখ
ওরিয়েন্সিয়া শুশুগামুশি নামে এক ধরনের অন্তঃকোষীয় পরজীবী সংক্রমণে এই রোগ হয়। এক ধরনের ‘মাইট’ এই রোগ ছড়ায়। মাইটের লার্ভা রোগ বয়ে নিয়ে যায়। মাইট চোখে দেখা মুশকিল। আকারে মাত্র ০.২-০.৪ মিমি। জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে মাইট ডিম পাড়ে। এই সময়েই রোগের বাড়বাড়ন্ত হয়।

মাইটের লার্ভা কামড়ানোর ৬-২০ দিন (গড়ে ১০ দিন) পরে রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়। কামড়ানোর জায়গায় প্রথমে একটু উঁচু গুটিমতো র‍্যাশ, পরে পোড়া ঘায়ের মতো ‘এস্কার’ তৈরি হয়। আমাদের বাদামি বা কালো চামড়ায় অনেক সময়ই এস্কার লুকিয়ে থাকে, বোঝা যায় না। সব ক্ষেত্রে এস্কার হয়ও না। জীবাণু শরীরে প্রবেশের পরে সংশ্লিষ্ট রোগলক্ষণগুলি দেখা যায়– উচ্চ তাপমাত্রা, মাথাব্যথা, র‍্যাশ, গায়ে ও পেটে ব্যথা, বমি, যকৃৎ ও প্লীহা বৃদ্ধি, ফুসফুস, হৃৎযন্ত্র ও মস্তিষ্কের প্রদাহ, বুকে-পেটে জল জমে যাওয়া, লসিকা গ্রন্থি (মূলত কুঁচকির) ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।

[আরও পড়ুন: শৈশবের জ্বালা যৌবনে! বাচ্চার ইউরিন ট্র্যাক্ট ইনফেকশনকে মোটেও হালকাভাবে নেবেন না]

কীভাবে রোগ নির্ণয়?
মূল রোগ নির্ণয় স্ক্রাব টাইফাস আইজিএম এবং ওয়েল-ফেলিক্স এই দুটি পরীক্ষা দিয়ে করা হয়। পিসিআর পরীক্ষাতেও ধরা পড়তে পারে। তাছাড়া অন্যান্য রক্ত পরীক্ষায় অ্যালবুমিন কমে যাওয়া, যকৃতের উৎসেচকের পরিমাণ বাড়া, অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়া ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসার থেকে অনেক বেশি জটিল রোগ নির্ণয়। রোগ ধরা পড়তেই অনেক দেরি হয়ে যায়। মূল চিকিৎসা ডক্সিসাইক্লিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ক্লোরামফেনিকল, রিফামপিসিন ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করে করা যায়। সঙ্গে শরীরের যে অঙ্গ আক্রান্ত হচ্ছে, তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা লাগবে। যদিও যত্রতত্র এবং যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে চিকিৎসা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

প্রতিরোধ করতে
মূলত ঝোপঝাড়পূর্ণ এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। বন্য ইঁদুর বা অন্য বন্য জন্তু থেকে রোগ ছড়ায়। পারলে ঝোপঝাড় এড়িয়ে চলুন। জীবিকার প্রয়োজনে যদি যেতেই হয় পুরো হাতা জামা, গ্লাভস ব্যবহার করুন। কীটপতঙ্গ দূর করার রাসায়নিক স্প্রে করুন। শিশুদের জঙ্গলপূর্ণ এলাকায় খেলতে বা ঘুরতে নিয়ে না যাওয়াই উচিত।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
পোকা কাটার মতো দাগ, র‍্যাশ, সেই সঙ্গে উচ্চ-তাপমাত্রা দেখলেই সতর্ক হোন। যে কোনও জ্বর বেশ কিছুদিন প্রাথমিক চিকিৎসায় সাড়া না দিলে স্ক্রাব টাইফাসের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। এই মরশুমে এমনিতেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। স্ক্রাব টাইফাসের সঙ্গে অনেক সময়েই ডেঙ্গুকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া
নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া শুরু করবেন না।

[আরও পড়ুন: হু হু করে কমছে প্লেটলেট, হিমোগ্লোবিন, উৎসবের মরশুমে আতঙ্ক ভাইরাল ফিভার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement