shono
Advertisement

উলটপুরাণ! চিৎকার নয়, কুকুরের নীরবতাই ধরিয়ে দিল ডাকাতদের

কীভাবে ঘটল এমন কাণ্ড?
Posted: 04:34 PM Jul 05, 2021Updated: 05:05 PM Jul 05, 2021

অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: বাড়িতে ডাকাত পড়ার সময় ঘরের মধ্যেই ছিল পোষা ল্যাব্রাডর (Pet Dog) ‘জিমি’। কিন্তু ডাকাতদের দেখে একবারের জন্যও ডাকেনি। জিমি-র এই ‘স্বভাববিরুদ্ধ’ ব্যবহারেই হাওড়ার (Howrah) ব্যাঁটরায় ডাকাতির কিনারা করে ফেলল গোয়েন্দারা। ধরা পড়েছে ডাকাতির দুই মূল পান্ডা। ধৃত ধর্মেন্দ্র দাস (৩৪) ও শুভজিৎ সামন্ত (২৬), দু’জনই বাড়ির মালিকের পারিবারিক ব্যবসা প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবেরটরির কর্মী।

Advertisement

গত ২৫ জুন ভর বিকেলে ব্যাঁটরার হৃদয়কৃষ্ণ ব্যানার্জি লেনে গৌতম পালের বাড়িতে হানা দেয় ডাকাতদল। তিনতলা বাড়িতে তখন একাই ছিলেন গৌতমবাবুর স্ত্রী সান্ত্বনাদেবী। দোতলার ঘরে একাই বসে টিভি দেখছিলেন তিনি। বাড়ির মধ্যেই ছিল পোষা ল্যাব্রাডর জিমি। গৌতমবাবু ও তাঁর ছেলে সম্রাট ছিলেন ক্ষীরেরতলায় প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে। দুই দুষ্কৃতী সটান দোতলায় গিয়ে সান্ত্বনাদেবীকে পিছমোড়া করে বেঁধে গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে আলমারি ভেঙে লক্ষাধিক টাকার গয়না ও কয়েক হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। এত কিছু যখন হচ্ছে, তখন একবারের জন্যও জিমি কেন ডাকাতদের হাঁকডাক করেনি, ডাকাতির তদন্তে নেমে সেটাই আশ্চর্য লেগেছিল পুলিশের।

[আরও পড়ুন: ফের রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া, সোদপুরে ৭ দিন স্বামীর দেহ আগলে বসে রইলেন স্ত্রী]

তদন্তকারী গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বাড়িতে অপরিচিত কেউ এলে সাধারণত বাড়ির কুকুর চিৎকার করে তা জানান দেয়। বিপদ বুঝলে তেড়েও যায়। তবে পরিচিত কাউকে দেখলে চুপ থাকে। এটাই নিয়ম। তদন্ত চলাকালীন জানা যায়, শুধু চুপ থাকাই নয়, দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে ডাকাতির সময় জিমিকে নাম ধরেও ডেকেছিল। জিমি না চেঁচিয়ে উলটে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এক দুষ্কৃতীর হাতে আদরও খেয়েছিল।
এখানেই প্রথম খটকা লাগে গোয়েন্দাদের! প্রশ্ন জাগে, দুষ্কৃতীরা বাড়ির কুকুরের নাম জেনেছিল কী করে? কেনই-বা কুকুরটি দুষ্কৃতীর হাতে আদর খেয়েছিল? এই দুই সূত্র থেকেই পুলিশের সন্দেহ হয়, দুষ্কৃতীরা বাড়ির লোকের পরিচিত। অবশেষে তদন্ত এগোতেই সেই সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হয়। বিভিন্ন সূত্র মারফত পুলিশ জানতে পারে, ওই ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত পরিচিতরাই। এরপরই তদন্তের সুতো ধরে গ্রেপ্তার করা হয় প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবের গাড়ির চালক ধর্মেন্দ্র দাস ও ল্যাবেরই কর্মচারী শুভজিৎ সামন্তকে। সৌজন্যে, পোষা ল্যাব্রাডর জিমির ‘অস্বাভাবিক’ ব্যবহার। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ধর্মেন্দ্র দাসের আরও দুই আত্মীয় এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তারা থাকে ওড়িশার বালেশ্বরে। তাদের খোঁজও করছে ব্যাঁটরা থানা।

[আরও পড়ুন: ছাত্রবিক্ষোভের জের, নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ বিশ্বভারতীর সামনের রাস্তা, বিপাকে পথচারীরা]

ধৃত শুভজিৎ সামন্তর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেই ব্যাঁটরা থানায় সিটি স্ক্যানের নামে মহিলাদের শ্লীলতাহানি করার পুরনো অভিযোগ রয়েছে। ধৃত ধর্মেন্দ্র ও শুভজিতের ৮দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। দু’জনকে জেরা করে ইতিমধ্যেই বেশকিছু সোনার গয়না উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাকি গয়না ও টাকাপয়সা উদ্ধারে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ডাকাতির আগে বেশ কিছুদিন ব্যাঁটরার ওই বাড়িটি রেইকি করে দুষ্কৃতীরা। এমনকী বাড়ির মালিক গৌতম পালের প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবে কাজ করার দরুন ধর্মেন্দ্র বাকি তিন জনকে বাড়ির সব খবরাখবর দেয়। বাড়ির সদর দরজা ভিতর থেকে আটকানো থাকলেও কীভাবে খুলতে হয় কিংবা কোন ঘরের আলমারিতে গয়না আছে, কখন গৌতমবাবুর স্ত্রী সান্ত্বনাদেবী একা থাকেন, এসব কিছুই সে জানিয়ে দেয় দলের বাকিদের। এসব তথ্য হাতে আাসর পরই সব আঁটঘাট বেঁধে অপারেশন চালায় দুষ্কৃতীরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement