নব্যেন্দু হাজরা: দিনকয়েক আগের কথা। ধর্মতলায় (Esplanade) এসবিএসটিসির কাউন্টারে বসে টিকিট দিচ্ছিলেন সংস্থার কর্মী শঙ্খ অবস্তি। বাইরে তখন টিকিট কাটার জন্য যাত্রীদের লম্বা লাইন। কাজের ফাঁকে একটু ঘাড় ঘুরিয়ে জল খাচ্ছিলেন শঙ্খবাবু। মোবাইলটা ছিল তাঁর চেয়ারের পাশেই। জল খাওয়া শেষ হতেই দেখেন তাঁর সামনে থাকা নতুন মোবাইল ফোনটি উধাও! মোবাইল চুরি যাওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটি ধরাও পড়েছে কাউন্টারের সিসিটিভি ফুটেজে। ফুটেজ ময়দান থানায় জমা দিয়েছে নিগম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনও ফোনটি উদ্ধার হয়নি।
সম্প্রতি ধর্মতলা থেকেই আসানসোলগামী একটি বাসে এক যাত্রী উঠে সিটের উপর নিজের ব্যাগ রেখে বাইরে জল কিনতে নামেন। উঠে দেখেন ব্যাগটি উধাও। বাসের সিসিটিভিতে দেখা যায়, যাত্রী সেজে অন্য এক যুবক বাসে উঠেছিলেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তির ব্যাগটি নিয়ে চম্পট দেন (Snatching)।
[আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই করাতে হবে পুরভোট, দাবি বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের]
ধর্মতলা চত্বরের বাসস্ট্যান্ড থেকে একের পর এক চুরির ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বাসযাত্রী এবং সেখানকার কর্মীদের মধ্যে। অভিযোগ, যাত্রী সেজে স্ট্যান্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য চোর-ছিনতাইবাজ। যাত্রীদের এবং কর্মীদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়েই চলছে লুঠপাট। ল্যাপটপ, মোবাইল, জামাকাপড় সমেত ব্যাগ। কী নেই সেই তালিকায়! একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কাছে। যা পরবর্তী ক্ষেত্রে পুলিশকে জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু খুব একটা লাভ হচ্ছে না বলেই দাবি, সংস্থার কর্তাদের। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল, টিকিট কাউন্টারে বসা তাঁদের কর্মীরই ফোন চুরি হওয়ার ঘটনা।
সংস্থার কর্মীদের দাবি, টিকিট কাউন্টারের ভিতরে আছে সিসিটিভি। কিন্তু বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকায় কোথাও সিসিটিভি নেই। ফলে চুরি যাওয়া জিনিস পাওয়াও যায় না। চোরকেও ধরা যায় না। রাতের দিকে আলোও কমে যায়। ডিপোতে যে হাইমাস্ট আলোটা ছিল সেটাও দীর্ঘদিন ধরে খারাপ হয়ে গিয়েছে। ফলে রাতের দিকে ছিনতাইটা বাড়ছে। শুধু ধর্মতলার কাউন্টারই নয়। রানি রাসমণি রোডের দিকে এসবিএসটিসির যে কাউন্টার সেখানকারও এক অবস্থা।
[আরও পড়ুন: সব্যসাচী দত্তের বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় হাজির বিজেপি নেত্রী অঞ্জনা বসু, তুঙ্গে দলবদলের জল্পনা]
প্রায় সাড়ে তিনশো এসবিএসটিসির বাস ছাড়ে ধর্মতলা থেকে। অন্য নিগমের বাস ছাড়লেও তা সংখ্যায় কম। ডিপোর অধিকাংশ জায়গাতেই বসে গিয়েছে বেআইনি দখলদার। ফলে বাইরের মানুষজন ঘুরে বেড়ায় বেশি। বোঝা যায় না কে যাত্রী, আর কে বিনা কারণে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংস্থার কর্মীরা জানান, বছর আটেক আগে সুন্দর করে সেজেছিল এই ডিপোটা। কিন্তু তারপর আর এটাকে সাজানো হয়নি। একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। মানুষকে জল পেরিয়ে বাসে উঠতে হয়।
এসবের মধ্যেই সবথেকে আতঙ্কের যেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হল চোরেদের উৎপাত। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, ধর্মতলায় যেন অধর্ম চলছে। শুধু ডিপো থেকেই নয়। বাসের ভিতর থেকেও জিনিস চুরি যাচ্ছে। বাসের ভিতর সিসিটিভি লাগানো থাকায় ফুটেজ হাতে আসছে ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর জিনিস উদ্ধার হচ্ছে না।