রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: স্ত্রী সুজাতা নয়, উনিশের ভোটে তাঁকে বিষ্ণুপুর থেকে জিততে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary)। এমনই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি শোনা গেল বিজেপি সাংসদ তথা যুব মোর্চা সভাপতি সৌমিত্র খাঁ’র (Soumitra Khan) মুখে। বৃহস্পতিবার কাঁথিতে শুভেন্দুর দলবদলের পর বড় জনসভায় এই কথাই বললেন তিনি। আর তাতে সৌমিত্রর জয় নিয়ে উসকে উঠল আরও বেশ কিছু প্রশ্ন।
সেদিন ছিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা। লোকসভা ভোটের আগে দিনরাত এক করে রাজ্যের শাসকদলকে জেতানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন তমলুকের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু সদ্য দলবদল করা অনুজ দলীয় কর্মীকেও তিনি সাহায্য করতে পিছপা হননি। অন্তত বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ’র বক্তব্যে তেমনই বোঝা গেল। কাঁথির (Kanthi) জনসভায় বিষ্ণুপুরের সাংসদ বলেন, ”সেদিন আমি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ পর তৃণমূলের একজন নেতাকেই ফোন করেছিলাম – শুভেন্দুদা। বলেছিলাম, দাদা, আপনি বিষ্ণুপুরে প্রচার করতে আসবেন না। উনি আমার কথা শুনে আমার সংসদীয় এলাকায় প্রচার করতে আসেননি। তাই আমি জিততে পেরেছিলাম।” বিপক্ষীয় দলের প্রার্থীকে জিততে সাহায্য করায় সেদিনের অবদানের কথা জনসমক্ষে এনে শুভেন্দুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন সৌমিত্র খাঁ।
[আরও পড়ুন: আরও বিপাকে কয়লা মাফিয়া লালা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল সিবিআই আদালত]
কিন্তু তাঁর এই কৃতজ্ঞতা স্বীকার তুলে দিল বেশ কিছু প্রশ্ন। গত শনিবার মেদিনীপুর কলেজমাঠে দলবদলের মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন যে ২০১৪ সাল থেকেই তিনি অমিত শাহর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। এবার সৌমিত্র স্বীকারোক্তিতে স্পষ্ট, তৃণমূলের একজন সদস্য, জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি বিজেপিতে নতুন যোগ দেওয়া অনুজপ্রতিম সহকর্মীকেই সাহায্য করেছিলেন। নিজে বিষ্ণুপুরে প্রচার করতে না গিয়ে কিছুটা কণ্টকমুক্ত করেছিলেন সৌমিত্রর জয়ের পথ।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের বৈঠকে গরহাজির পুরুলিয়ার চার বিধায়ক, দলের অন্দরে তুমুল জল্পনা]
পাশাপাশি, আরেকটি প্রশ্নও উঠছে। সেদিন আদালতের নির্দেশে বিষ্ণুপুরে সৌমিত্রর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাঁর প্রচারের গোটা দায়িত্ব একা কাঁধেই সামলেছিলেন স্ত্রী সুজাতা খাঁ। সৌমিত্রর সাংসদ হওয়ার পিছনে কাণ্ডারী সুজাতাই, এই ছবিই স্পষ্ট হয়েছিল। এমনকী চলতি সপ্তাহে সুজাতা তৃণমূলে যোগদানের পর সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিবাহবিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করলেও স্ত্রীর অবদানের কথা স্বীকার করেছিলেন সাংসদ নিজে। কিন্তু তারপরই তিনি জয়ের নেপথ্য নায়কের গোটা কৃতিত্ব দিলেন শুভেন্দু অধিকারীকে। তাহলে কি স্রেফ দলবদলের কারণেই স্ত্রীর ভূমিকাকে এভাবে মুছে দিতে চাইলেন সৌমিত্র? এই প্রশ্ন উঠছেই। তবে শুভেন্দুর প্রতি তাঁর এই স্বীকারোক্তি শাসক শিবিরে তুরূপের তাস হবে, তেমনই ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের।