স্টাফ রিপোর্টার : মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলের একতলার ঘরে বসে সবাই তখন তাঁর কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন।তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)।সৌরভের কথার শেষে মজা করে একজন বলছিলেন, তিনি যেরকম কথা বলছেন, তাতে সপ্তাহে একদিন যদি মোটিভেশনাল ক্লাস শুরু করেন, কলকাতার নামজাদা ডাক্তারদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবেন। প্রশ্ন করা হয়, এটা তো ব্যাট-বলের লড়াই নয়। সম্পূর্ণ আলাদা একটা প্ল্যাটফর্ম। সেখানে আপনি এতটা সাবলীল কী করে?
শুনে সৌরভ হাসলেন। তারপর বললেন, ‘‘আমি জীবনে একটা জিনিস মনে করি, কেউ না কেউ সুযোগটা দেয়। এবার সুযোগ পাওয়ার পর আপনি পুরো ব্যাপারটা কীভাবে দেখছেন, সেটাই আসল। দুটো অপশন থাকে। একটা হল ভাবা যে, এত কিছু করতে পারব? আর একটা অপশন হল, এত সুযোগ তো কেউ পায় না। এটা চেষ্টা করে দেখতে পারি। আমি কিন্তু দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পড়ি। ক্রিকেট এতদিন খেলেছি। তারপর পাঁচ বছর সিএবি (CAB) প্রেসিডেন্ট। এখন প্রায় তিন বছর হয়ে গেল বিসিসিআইয়ের (BCCI) দায়িত্ব সামলাচ্ছি। তারপর টেলিভিশনে কাজ করছি। এনডোরসমেন্ট আছে। আমার যখন যে কাজটা থাকে, তখন সেটা করি। তারপর আবার যখন অন্য কিছু, তখন সেটা নিয়ে ভাবি। জীবনে আমি মনে করি, কোনও কিছুতে ‘না’ বলে দেওয়াটা খুব সহজ। কঠিন হল ‘হ্যাঁ’ বলাটা। দেখছি কত কম বয়সে অনেকে মারা যাচ্ছে। শেন ওয়ার্নের কথাই ভাবুন। ওয়ার্ন আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। আমরা মাঠে বহু সময় কাটিয়েছি। মাঠে আমাদের মধ্যে তীব্র লড়াই হলেও মাঠের বাইরে আমাদের সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। ও হঠাৎ করে চলে গেল। তাই আমি মনে করি জীবন একটাই। তাই মন যেটা চাইবে সেটা করে যেতে হবে।’’
[আরও পড়ুন: দুমকায় অস্ত্র কারখানায় হানা কলকাতা পুলিশের এসটিএফের, উদ্ধার প্রচুর অস্ত্র, ধৃত ৬]
গত দু’বছরে গোটা বিশ্বে প্রচুর কিছু ঘটে গিয়েছে। করোনার দাপট। আচমকা ডিন জোন্সের মৃত্যু। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫২ বছরে শেন ওয়ার্নের (Shane Warne) আকস্মিক প্রয়াণ। এই ঘটনাগুলো তাহলে কি আপনার জীবনদর্শনও কিছুটা বদলেছে? সৌরভ বললেন, ‘‘কিছুটা হয়তো। কিন্তু শরীরের মধ্যে কী ঘটছে, সেটা কেউ জানে না। কয়েকদিন আগে টেলিভিশন প্রোগ্রামে একজনের সঙ্গে আলাপ হল। বলছিলেন উনি স্ত্রীকে হারিয়েছেন। ওঁর ব্লাড ক্যানসার ছিল। ব্রেন ক্যানসার ছিল। একই সঙ্গে ব্রেন টিউমারও ছিল। আমি কোনও উত্তর দিতে পারিনি। শুধু মনে হচ্ছিল আর কী হওয়া বাকি ছিল! কেউ জানে না জীবন আপনাকে কোথায় নিয়ে যাবে। আমার মা বলেন, সবার সময় লেখা আছে। জানি না আমার হয়তো বেশি বিশ্বাস করেন এই ব্যাপারে। আমি হয়তো অতটা বিশ্বাস করি না। কিন্তু শুনি। তাই বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে কী ঘটবে, সেটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। যেটা হওয়ার সেটা হবেই। তারচেয়ে বরং বর্তমান নিয়ে আমরা বাঁচি।’’
তিনি যে কাজটাই করেন একদম নিখুঁত করার চেষ্টা করেন। তাঁর কাছে কোনও কাজই ছোট নয়। সৌরভ বললেন, ‘‘আমার খুব পছন্দের এক অভিনেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি বলেছিলেন, আজ তিনি এত বিখ্যাত হতেই পারতেন না, যদি অন্য কেউ ওই চরিত্রগুলোর অফার রিজেক্ট না করত। আমার কাছে কোনও রোলই ছোট নয়। আমিও এটা মানি। আমি সিএবি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটাই প্রথম ইডেনে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি নামল। আমি কিন্তু মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভিজতে ভিজতে কাজ করেছি। মাঠ ঠিক করার দায়িত্ব মাঠকর্মীদের। আমি তো প্রেসিডেন্ট ছিলাম, চাইলেই নিজের এসি ঘরে বসে থাকতে পারতাম। আমি কিন্তু সেটা করিনি। কারণ, আমার কাছে কোনও কাজই ছোট নয়। যেটাই করি না সেরা করার চেষ্টা করি।’’
ভারতীয় দলের প্রসঙ্গও উঠল। একটা সময় রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) তাঁর সতীর্থ ছিলেন। এখন রাহুল ভারতীয় দলের কোচ। দ্রাবিড়ের সাফল্য পাওয়া নিয়ে সৌরভকে প্রচণ্ড আশাবাদী শোনাল। বলছিলেন, ‘‘রাহুল সফল হবেই। ও প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে।’’ কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কোচ রাহুলের তুলনা চলে এল। সৌরভ বললেন, ‘‘সবাই এরকম হয় না। সবার কাজের ধরন আলাদা। ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি যেরকম, সেরকম কি ক্যাপ্টেন ধোনি? আবার বিরাটের কাজের ধরন একরকম। রোহিতের কাজের ধরন আরেকরকম। ফলে ওইভাবে তুলনা ঠিক চলে না।’’