অভিরূপ দাস: কালও খালি ছিল দু’গাল। আজ সেখানেই কুচকুচে ঘন কালো কেশ। মাথায় চুল গজানোর ইচ্ছা পুরনো। পুজোর আগে দু’গালে দাড়ি গজানোর ধুম শহর জুড়ে। পছন্দ মোটামুটি এক ধাঁচের। শর্ট বক্সড বিয়ার্ড। দুই গালের সীমারেখা বরাবর দাড়ি নেমে আসবে। মিলে যাবে গোঁফের সঙ্গে। যেমনটা ছিল ‘পাঠান’ শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan)।
তার জন্য হাসপাতালে আসতে হচ্ছে কেন? যাঁরা আসছেন তাঁদের সমস্যাটা অদ্ভুত। দু’গাল মাখনের মতো চকচকে। সেখানে চুলের কণামাত্র নেই। এদিকে সুপুরুষের সংজ্ঞায় নাকি দাড়িটা মাস্ট! এসএসকেএম হাসপাতালের প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. অরিন্দম সরকার গত কয়েক মাসে অগুনতি এমন কৃত্রিম দাড়ি তৈরি করেছেন। তাঁর কথায়, “সাধারণত বংশগত অথবা হরমোনজনিত কারণে গালে দাড়ি গজায় না। গজালেও অনেকেরই তা সুষ্ঠুভাবে সব জায়গায় থাকে। এমন রোগীরাই আসছেন।”
ডা. অরিন্দম সরকারের বলছেন, “টাকে চুল গজানোর মতো, দাড়ি গজানোর কোনও বিকল্প চিকিৎসা হয় না। ওষুধ খেলে দাড়ি গজানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে উপায় একটাই, ফলিকল প্রতিস্থাপন। যিনি দাড়ি চান, তাঁর কাছে প্রথমে জানতে চাওয়া হয়, কোন অংশে দাড়ি চান। চিকিৎসা পরিভাষায় এটাই টার্গেট ফিক্স।”
[আরও পড়ুন: স্বামীর পর টার্গেট স্ত্রী, একই পরিবারের সদস্যদের উপর পরপর অ্যাসিড হামলায় রহস্য]
যে অংশে দাড়ি গজাতে চান সেটা স্কেচপেন দিয়ে চিহ্নিত করে নিতে হয়। এরপরই শুরু হয় ‘হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইন বিয়ার্ড’। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অরিন্দম সরকারের জানাচ্ছেন, মাথার পিছনের দিক থেকে কিংবা গলার থেকে ফলিকলগুলো নিয়ে একটা একটা করে গালে পুঁতে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই বেরোয় নতুন দাড়ি। অস্ত্রোপচারের জন্য একদিনই যথেষ্ট। কিন্তু ওই ফলিকল থেকে সঠিকভাবে দাড়ি বেরোতে তিনমাস সময় লাগে।
সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রথম কয়েকদিন নরম খাবার খাওয়ার নিদান রয়েছে। শক্ত খাবার খেলে চিবোতে কষ্ট হয়। অস্ত্রোপচারের পর প্রথম প্রথম কয়েকদিন ব্যথা থাকে। সে সময় অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক ট্যাবলেট দেওয়া হয় নতুন দাড়ির মালিককে। ছ’মাস এই দাড়িতে হাত দেওয়া বারণ।
১৮০ দিন বাদে সাধারণ দাড়ির মতোই কাটা যাবে এই দাড়ি। ডা. অরিন্দম সরকারের কথায়, চাইলে শ্যাম্পুও করা যাবে এই দাড়িতে। ব্লিচ জাতীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করতে বারণ করা হয়। খরচ কেমন? ডা. অরিন্দম সরকারের কথায়, মোটামুটি পঞ্চাশ হাজার টাকাতেই স্থায়ী দাড়ি গজিয়ে উঠছে গালে। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে মিলছে স্বাস্থ্যসাথীর সুযোগও।