সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চালু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণেশ্বরের নজরকাড়া স্কাইওয়াক কলঙ্কিত হয়েছিল পান-গুটখার পিকে। কদর্য সেই দাগ রীতিমতো রাঙিয়ে দিয়েছিল স্কাইওয়াকের ঝকঝকে রেলিং। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল হয়ে ওঠা যে ছবি দেখে ভিরমি খেয়েছে আমজনতা। তারপর থেকেই ওঠে সমালোচনার ঝড়। প্রত্যেকের প্রশ্ন, যাঁদের সুবিধার্থে স্কাইওয়াক করা হল, তাঁদেরই কেউ কেউ কী করে এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারেন? সেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবার আসরে নামল খোদ প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, পান-গুটখার পিক ফেলার সময় ধরা পড়লে, সেই ব্যক্তি বা মহিলার ১০০১ টাকা জরিমানা হবে। স্কাইওয়াকের মধ্যে লাউড স্পিকারে সে কথা ঘোষণাও করা হচ্ছে সর্বক্ষণ। তবে এদিন এই ঘোষণার পরও গুটখার পিক ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েন এক ব্যক্তি। যাঁকে ইতিমধ্যেই জরিমানা দিতে হয়েছে। নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, “আমি জানতাম না, বুঝতে পারিনি এখানে পিক ফেলা নিষিদ্ধ। তাই ভুলবশত করে ফেলেছি। তবে নিজে সে জায়গা পরিষ্কারও করে দিয়েছি।” প্রশাসনের আশা, জরিমানার মাধ্যমেই মানুষকে সচেতন করা সম্ভব।
আড়াই বছর ধরে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি স্কাইওয়াকটি ৩৪০ মিটার দীর্ঘ এবং ১২ মিটার চওড়া। স্কাইওয়াকে ১২টি গেট ও ১৪টি এসকালেটর ও চারটি লিফট থাকছে। এর মধ্যে দু’টি লিফট প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। স্কাইওয়াকটি দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের কাছে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে মন্দিরের সিংহদুয়ারের কাছে। দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মায়ের গর্ভগৃহে পুণ্যার্থীরা যাতে বিনা বাধায় সরাসরি চলে যেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মাথা তুলেছে স্কাইওয়াক। এটি প্রাযুক্তিক দক্ষতার বড় নিদর্শনও বটে। বস্তুত গোটা ভারতেই এমন উড়ালপথ বিরল। সোমবার, কালীপুজোর আগের সন্ধ্যায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে সেটির উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বাংলার এহেন গর্বের গায়ে গুটখা মাখা থুতুর দাগ দেখে নেটিজেনরা যেমন বিরক্ত, তেমন প্রমাদ গুণছেন নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা। “শুধু দৃশ্যদূষণ নয়। গুটখার পিক ক্রমাগত পড়তে থাকলে যে কোনও ব্রিজেই যে কোটিং থাকে তা সরে যায়। তারপর জং ধরা শুরু হয়। ফলে ক্ষয় হয়। ব্রিজ, ফ্লাইওভার যে কোনওকিছুরই কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ ব্রিজের জয়েন্টের কোটিং বাইরের জলীয় বাষ্পের থেকে লোহা, স্টিলকে রক্ষা করে।” জানান এক ব্রিজ বিশেষজ্ঞ। তাই সবদিক বিচার করেই জরিমানার ব্যবস্থা। তবে এতেও জনতার হুঁশ ফিরবে কিনা, সেটাই দেখার।