রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বক্তা পাকিস্তানের জার্সিতে টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু তাঁর পরিচিতি দেশের হয়ে খেলা ক্রিকেট নয়। বরং রিয়াজ আফ্রিদিকে (Riaz Afridi) লোকে অনেক বেশি চেনে শাহিন শাহ আফ্রিদির (Shaheen Afridi) দাদা হিসাবে। যিনি আবার শাহিনের আশৈশব কোচও বটে। সেই রিয়াজ আফ্রিদি আগামী শনিবারের ভারত-পাক মহাযুদ্ধের আগে ওয়াঘার ওপার থেকে ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে ফোনে যা বললেন…।
…বিশ্বকাপের প্রথম দুটো ম্যাচে আমার ভাই আহামরি কিছু করতে পারেনি দেখে অনেকে অনেক কিছু বলছেন। সবই দেখছি, সব কিছুই কানে আসছে, কিন্তু উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। কারণ, যাঁরা শাহিন নিয়ে আজ বলছেন, না জেনে বলছেন। আমি আমার ভাইকে জানি-চিনি। আমি জানি কতটা ভয়ঙ্করভাবে ফিরে আসতে পারে ও।
[আরও পড়ুন: এ কোন অস্ট্রেলিয়া! দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও মুখ থুবড়ে পড়লেন স্মিথরা]
একটা গল্প বলি। বয়স তখন কত হবে শাহিনের? ষোলো-সতেরো। পাকিস্তান সুপার লিগ টিম লাহোর কালেন্দার্সের নাম শুনেছেন তো? শাহিনকে নিয়েছিল ওরা। এবারের বিশ্বকাপের মতো তখনও শাহিন প্রথম দু’-তিনটে ম্যাচে কিছু করতে পারেনি। মনে আছে, যার পর বিপর্যস্ত শাহিন সোজা চলে গিয়েছিল লাহোর কালেন্দার্স মালিকের কাছে। গিয়ে বলেছিল, ওকে প্রথম তিনটে ম্যাচের প্রাপ্য অর্থ না দিতে! বলেছিল, অর্থের জন্য খেলি না আমি। যে দিন পারফর্ম করব, সে দিন টাকা দেবেন! ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক বুঝিয়ে-সুজিয়ে ওকে শান্ত করেন। দুটো ম্যাচ পরে নামতে বলেন। আর তার পর নেমে আমার ভাই যে কী করেছিল, আজও ভুলিনি।
চার ওভারে চার বা পাঁচ রান দিয়ে পাঁচ-পাঁচটা উইকেট তুলেছিল!
তাই শাহিনকে প্রত্যাবর্তন শেখানোর প্রয়োজন নেই। আপনা লড়কা হ্যায় উয়ো! আমার কোলেপিঠে বড় হয়েছে, হাতে ধরে ওকে খেলা শিখিয়েছি, দশ বছর বয়স থেকে আমি ওর কোচিং করিয়েছি। জানেন, ছোট থেকে মহাতারকা হওয়ার দুর্দমনীয় বাসনা দেখতার ওর মধ্যে। শাহিনের সুইং, গতি সবই দেখার মতো ছিল। ষোলো বছর বয়সে ঘরোয়া ক্রিকেটে নেমে আট উইকেট নিয়েছিল আমার ভাই! পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের আটচল্লিশ বছরের রেকর্ড চুরমার করে দিয়েছিল! আর শুধুই বা সেটা কেন? পাকিস্তানি পেসারদের মধ্যে শাহিনই প্রথম, যে কি না আইসিসির সেরা বোলার হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ম্যাচ জিতিয়েছে। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে আমরা আঠাশ বছর কখনও বিশ্বকাপ ম্যাচ জিতিনি। না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, না ওয়ান ডে বিশ্বকাপে। কত বড়-বড় ক্রিকেটার এসেছেন, খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপে কেউ হিন্দুস্থানকে হারাতে পারেনি। আমি গর্বিত যে, আমার ভাই সেটা পেরেছে।
জানি, আমেদাবাদে শাহিনের কাজ সহজ হবে না। ভারতের রোহিত শর্মা আছে, বিরাট কোহলি আছে। বিরাট অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দারুণ খেলেছে। রোহিত আবার আফগানিস্তানকে ধ্বংস করে দিল। কিন্তু আমার ভাইও জানে, রোহিতের বিরুদ্ধে ওকে কী করতে হবে? শাহিন জানে, কোথায় বল করতে হবে রোহিতকে? অতীতে তো শাহিন সাফল্য পেয়েছে রোহিতের বিরুদ্ধে।
ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে শাহিনের। এখনও প্রায়ই হয়। শাহিনের স্বপ্ন ছিল, ভারতে গিয়ে খেলার। ভারতের আওয়ামের দিল জেতার। ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররাও শাহিনকে ভালবাসে। ও যখন চোট পেয়েছিল, বিরাটরা ওর খোঁজ নিয়েছিল। মাঝে আমি হারারেতে গিয়েছিলাম একবার। সেখানে ইরফান পাঠানের সঙ্গে দেখা হল। ইরফানও শাহিন নিয়ে জিজ্ঞাসা করল। কিন্তু একই সঙ্গে শাহিন জানে, এই বিশ্বকাপ ওর কেরিয়ারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচে ( ICC ODI World Cup 2023 IND vs PAK) পারফর্ম না করলে আর কোথায় করবে? ভারত-পাকিস্তানের পর আর অন্য কোনও ম্যাচের অস্তিত্ব পড়ে থাকে নাকি?
তাই বলব, ভাইজান বিরাটের সঙ্গে আরও একবার লড়ে নে। ব্যাক অফ লেংথ ডেলিভারির কথা ভাবতে পারিস। আর রোহিতকে আরও একবার আউট কর! তুই জানিস, রোহিত তোকে নিয়ে চাপে থাকে। প্রার্থনা করি, তুই যাতে ওর উইকেট আর একবার নিতে পারিস।
ইনশাল্লাহ।….