আলাপন সাহা, নয়াদিল্লি: দিল্লিতে এখনও শীতের আমেজ আছে। জ্যাকেট কিংবা হালকা সোয়েটার রাখতেই হবে। রাতের দিকে তাপমাত্রা আরও একটু কমছে। শিরশিরানিভাব হালকা রয়েছে। কিন্তু চেতন শর্মা (Chetan Sharma) কাণ্ডে শীতের দিল্লিতেও উত্তাপটা ভালরকম ছড়িয়েছে। টেস্ট নিয়ে আলোচনার মাঝেও বারবারই চেতন প্রসঙ্গটা উঠে আসছিল। বলাবলি চলছিল, দিল্লি টেস্টের আগে এহেন ঘটনা আবার না ভারতীয় দলের ফোকাসটা নড়িয়ে দেয়! কিন্তু ওসব ভুল ভাবনা। টিম ইন্ডিয়াকে (Team India) দেখে কোথাও মনে হয়নি মঙ্গলবার ভারতীয় ক্রিকেটে শোরগোল ফেলে দেওয়া ওই ঘটনা তাদের ফোকাসে বিন্দুমাত্র চিড় ধরাতে পেরেছে বলে। রাহুল দ্রাবিড় এদিন প্রেস কনফারেন্স করতে এসেছিলেন। ষোলো মিনিটের লম্বা সাংবাদিক সম্মলনের পুরোটাই খোশমেজাজে লাগল রোহিত শর্মাদের হেডস্যরকে। আর বিরাটরা? আরও বেশি ফুরফুরে।
দিল্লি আবার কোহলির (Virat Kohli) ঘরের মাঠেও বটে। নিজের শহর। তাই প্রথামাফিক আর টিম বাসে এলেন না কোহলি। এলেন নিজের কালো পোর্সে চেপে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা স্টোরিও পোস্ট করেন-অনেক দিন পর আবার গাড়ি চালিয়ে স্টেডিয়ামের পথে। ভীষণ নস্ট্যালজিক লাগছে। তা অবশ্য লাগারই কথা। পাঁচ বছর পর আবার ঘরের মাঠে টেস্ট খেলতে নামছেন। কোহলির মতো পুরো দিল্লিও আবেগে ভাসছে। স্টেডিয়ামের দু’নম্বর গেট সাধারণত প্র্যাকটিসের দিন মিডিয়ার জন্য খোলা থাকে। গেটে বিশাল একটা বীরেন্দ্র শেহবাগের ছবি। পাশেই কেরিয়ারের পুরো পরিসংখ্যান দেওয়া। দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (DDCA) স্টেডিয়ামের গেটগুলো বিভিন্ন ক্রিকেটারের নামে করে দিয়েছে। শেহবাগের (Virender Sehwag) পাশের গেটটাই যেমন অঞ্জুম চোপড়া গেট। গেটগুলো এক-একটা পেল্লাই সাইজের। ভিতরে কি চলছে তা বোঝার কোনও উপায় নেই। দুপুর দু’টো থেকেই ওই গেটের বাইরে বেশ ভিড়। উৎসুক জনতা উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিল। যদি কোনওভাবে বিরাট-রোহিতদের (Rohit Sharma) একবার দর্শন পাওয়া যায়!
[আরও পড়ুন: ১০ কিমি যেতে সময় লাগে ২৯ মিনিট! পৃথিবীর ধীর গতির শহরের তালিকায় দ্বিতীয় বেঙ্গালুরু]
বিরাট সবার আগে নেটে ঢুকলেন। প্রায় আধঘণ্টা ব্যাটিং-পর্ব চলল। পাশের নেটেই শুভমান গিল। বাকি ভারতীয় টিম তখন মাঠে ফুটভলিতে ব্যস্ত। চোট সারিয়ে টিমের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার (Sreyash Iyer)। দিল্লি টেস্টে সম্ভবত খেলবেনও। রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) সেরকম ইঙ্গিতও দিয়ে গিয়েছেন। দ্রাবিড় বলেছেন, ‘‘শ্রেয়স সবে টিমের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সেটা দারুণ ব্যাপার একটু দেখে নিতে হবে। যদি দেখা যায় ও পাঁচদিনের লোড নেওয়ার মতো জায়গায় রয়েছে, তাহলে অবশ্যই খেলবে।’’ যা খবর, তাতে বৃহস্পতিবার প্র্যাকটিসে দেখার পর হয়তো শ্রেয়স নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
ভারতীয় টিমে বদল বলতে শুধু এটাই হতে পারে। বরং অস্ট্রেলিয়া টিমে বেশ কিছু বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যামেরুন গ্রিন আর মিচেল স্টার্ক ফিরতে পারেন। দু’জনেই চোট সারিয়ে পুরোপুরি ফিট হওয়ার পথে। এদিন অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের মেইন পিচের পাশের উইকেটগুলোতে দীর্ঘক্ষণ বোলিং করে গেলেন। যদিও তিন স্পিনার খেলানো হবে কি না, তা নিয়ে অজি টিম ম্যানেজমেন্ট ভালরকম ধন্দে রয়েছে। ট্রাভিস হেডকে (Travis Head) নাগপুরে না খেলানো নিয়ে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে ভালরকম প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়েছিল। হেডও সম্ভবত এই টেস্টে ফিরতে চলেছেন। তবে অস্ট্রেলিয়া প্র্যাকটিসে সবচেয়ে বেশি যেটা নজরে পড়ল, সেটা হল স্পিন খেলার জন্য বাড়তি অনুশীলন। অস্ট্রেলিয়া নেটে কোনও পেসার ছিল না। একটা নেটে শুধু কামিন্স (Pat Cummins) বল করছিলেন। বাকি সব নেটে শুধুই স্পিনার। এমনকী স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লাবুশানে পর্যন্ত স্পিনারের মতো বলে বল ছুঁড়ছিলেন। সঙ্গে ব্যাটিংয়ে চলছিল সুইপ আর রিভার্স সুইপের মহড়া। বোঝাই যাচ্ছিল নাগপুরের এক সেশনে অলআউটের দুঃস্বপ্ন কাটাতে সুইপ-আর রিভার্স সুইপকে অস্ত্র করতে চাইছেন রেনশরা।
[আরও পড়ুন: ত্রিপুরার ভোটে বিক্ষিপ্ত অশান্তি, ভোটারদের মারধরের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে, আক্রান্ত বামেরাও]
দিল্লিতে ভারতের রেকর্ড বেশ ভাল। সাতাশির পর থেকে এখানে টেস্ট হারেনি টিম ইন্ডিয়া। তবে ওসব পরিসংখ্যানে মনে হল না ভারতীয় দলের তেমন কোনও আগ্রহ রয়েছে বলে। বরং দ্রাবিড় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়ে গেলেন, নাগপুরের ম্যাচ এখন তাদের কাছে অতীত। আসলে রোহিতদের সামনে এখন একটাই মিশন-সব ম্যাচ জেতো আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলো।