অরিঞ্জয় বোস: আগামী ৬ জুন যুবভারতী স্টেডিয়ামে কুয়েতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ রয়েছে ভারতের। ওই দিন একটি যুগের অবসান হবে ভারতীয় ফুটবলে। অবসর নেবেন সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)। ১৯ বছরের ফুটবল পরিক্রমার মহাবৃত্ত সম্পূর্ণ হবে। কিংবদন্তি 'সুনীলের অবসরকে স্মরণীয় করে তুলতে হবে', সংবাদ প্রতিদিনকে এক্সক্লুসিভ প্রতিক্রিয়ায় বললেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রশিক্ষক ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। অন্যদিকে সুনীলের প্রাক্তন কোচ এবং শ্বশুর মশাই ভারতীয় ফুটবলের আরেক কিংবদন্তি সুব্রত ভট্টাচার্য (Subrata Bhattacharya) বললেন, 'সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছে'।
দীর্ঘ কেরিয়ারে কত ফুলই না ফুটিয়েছেন সুনীল ছেত্রী। দেশের জার্সিতে গোলসংখ্যার দিক থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসির সঙ্গে একই নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হত ভারতের সুনীলের নাম। ১৫০ ম্যাচে ৯৪ গোলের অবিশ্বাস্য রেকর্ড রয়েছে তাঁর। অভিষেক ম্যাচে গোল করেছিলেন। প্রতিটি মাইলস্টোনের ম্যাচে গোল রয়েছে সুনীলের। দেড়শো-তম ম্যাচেও গোল করেন। দিন যত এগিয়েছে সুনীল ততই পরিণত হয়েছেন। কেরিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে পেনাল্টি কিক-কে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। শেষের দিকে নিন্দুকদের সমালোচনা ধেয়ে আসতে শুরু করে। সুনীল ছেত্রী পেনাল্টি ছাড়া আর গোল করতে পারছেন না। আজকের এই মহাঘোষণার পরে সুনীলের দিকে ধেয়ে আসবে না সমালোচনার ঝড়। ভক্ত-অনুরাগীরা সোচ্চারে হয়তো বলবেন, দিনের পথিক মনে রেখো, আমি চলেছিলেম রাতে সন্ধ্যাপ্রদীপ নিয়ে হাতে। বাইচুং ভুটিয়া ভারতীয় ফুটবল থেকে সরে যাওয়ার পরে সুনীল ছে্ত্রীই তো হয়ে উঠেছিলেন বনস্পতি। তিনি ফুল দিতেন, ফল দিতেন, তাঁর ছায়ায় আশ্রয় নিত ভারতীয় ফুটবল।
[আরও পড়ুন: স্বাতীকে হেনস্তায় তদন্ত কমিটি গড়ছে আপ! অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার আশ্বাস]
সেই সুনীল ছে্ত্রীই লক্ষ্মীবার জানিয়ে দিলেন তিনি বুট জোড়া তুলে রাখবেন কুয়েত ম্যাচের পরে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন বহু স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। ৬ জুন আরও একটি স্মরণীয় মুহূর্ত লেখা থাকবে সবুজ ঘাসে। সুনীলের অবসর ঘোষণার পরে গোটা দেশ আবেগমথিত। কোচ ইগর স্টিমাচ নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে জানালেন, "এমন প্রতিভাকে কুর্নিশ। সুনীল ছেত্রীর মতো প্রতিভা বারবার আসে না। ওর অবসর ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে হবে।"
বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ভারত-কুয়েত ম্যাচটার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু এই ম্যাচটাই হয়ে যাচ্ছে সুনীল ছেত্রীর ফেয়রওয়েল ম্যাচ। দেশের জার্সিতে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তাও আবার কলকাতায়। যে শহর একসময়ে দেখেছিল তাঁর প্রথম সবকিছু। ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে এই মাঠেই গোল রয়েছে সুনীলের। মোহনবাগান জার্সিতে কে ভুলতে পারবে সুনীল ছেত্রীকে। আই লিগের মোহনবাগান-ডেম্পো ম্যাচের কথা ভুলবে কী করে ভক্ত-অনুরাগীরা!
[আরও পড়ুন: ফুটবলকে বিদায় কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রীর, ৬ জুন কলকাতায় খেলবেন শেষ ম্যাচ!]
শ্বশুরমশাই দিকপাল ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যও তাঁর কোচ ছিলেন ক্লাবপর্বে। কলকাতা ময়দানের পরিচিত 'বাবলুদা' জামাইয়ের শেষ ম্যাচ প্রসঙ্গে বলছেন, ''সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'' এতদিন পর্যন্ত গোটা দেশ বলতো, আমাদেরও একটা সুনীল ছেত্রী রয়েছে। কুয়েত ম্যাচের পর থেকে বিশাল এক শূন্যতা তৈরি হবে ভারতীয় ফুটবলে, তা বলাই বাহুল্য। ইগর স্টিমাচ ঠিকই বলেছেন, সুনীল ছেত্রীরা বারবার আসেন না। তাঁর মতো প্রতিভা একবারই আসে। ওই এক ফুটবলজীবনেই ছাপ ফেলে যান তাঁরা। বুট জোড়া তুলে রাখলেও তাঁর ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে ধরা দেয়!