সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডিসেম্বর মাসটা ক্রমেই যেন শোকের মরশুম হয়ে উঠছে স্যান্টোস এফসি-র (Santos FC) জন্য। এক বছর আগে এমনই এক ডিসেম্বরে প্রয়াত হয়েছিলেন স্যান্টোসের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার এডসন আরান্টেস ডো নাসিমেন্টো। ফুটবলবিশ্ব যাঁকে চেনে পেলে নামে। আর এবার সেই ডিসেম্বর মাসেই ব্রাজিলিয়ান সিরি এ থেকে অবনমন হল স্যান্টোসের। ১১১ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলবে তারা।
শুধু পেলে (Pele) নয়, সেলেকাও ক্যানারিনহো ব্রিগেডে বহু তারকা উপহার দিয়েছে স্যান্টোস। সেই তালিকায় রয়েছে বর্তমান সময়ের অন্যতম মহাতারকা নেইমার জুনিয়র। এই স্যান্টোসের জার্সিতে তাঁর মায়াবী ফুটবলে মুগ্ধ হয়েই তো নেইমারকে (Neymar) বিপুল অর্থের বিনিময়ে সই করিয়েছিল বার্সেলোনা। রয়েছেন ’৭০-এর বিশ্বজয়ী অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তো, যাঁকে বলা হয় ব্রাজিলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। রয়েছেন গিলমার ডস স্যান্টোস, ক্লোডোয়াল্ডো সান্তানা, জোনাস এডুয়ার্ডো, লুইস ‘মুলার’ কোস্তার মতো বিশ্বজয়ী সাম্বা তারকারা। এমনকী হাল আমলে রোবিনহো, গ্যাব্রিয়েল বা রড্রিগোর মতো সফল স্ট্রাইকাররাও উঠে এসেছেন ভিলা বেলমিরোর এই ক্লাব থেকেই।
বৃহস্পতিবার সেই ক্লাবই নাম লিখিয়েছে অবনমনের তালিকায়। ৩৮ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে ১৭ নম্বরে শেষ করে স্যান্টোস। শেষ রাউন্ডে ঘরের মাঠে ফোর্টালেজাকে হারাতে পারলেই অবনমন এড়ানো যেত। কিন্তু শেষবেলায় গোল খেয়ে ১-২ ব্যবধানে ম্যাচটা হেরে যায় শতাব্দীপ্রাচীন এই ব্রাজিলিয়ান ক্লাব। অবশ্য তারপরও একটা আশার আলো ছিল। বাহিয়া বা ভাস্কো ডা গামা তাদের শেষ ম্যাচে হেরে গেল এ যাত্রায় রক্ষা পেত স্যান্টোস। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে ভাস্কো ডা গামা (৪৫ পয়েন্ট) আর বাহিয়া (৪৪ পয়েন্ট) শেষ করল যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ নম্বরে। তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় এবারের মতো স্যান্টোসের অবনমন।
[আরও পড়ুন: মাত্র ৫ বছরে ৪০৩ ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যু বিদেশে, অধিকাংশই কানাডায়!]
চলতি লিগে মাত্র ১১ ম্যাচ জিতেছে স্যান্টোস, হেরেছে ১৭ ম্যাচ। এবছর তারা যে শুধু লিগেই ব্যর্থ হয়েছে, এমন নয়। ক্যাম্পেনাতো পাউলিস্তা (সাও পাওলো লিগ), কোপা ডে ব্রাজিল বা কোপা সুদামেরিকানার মতো প্রতিযোগিতায় শুরুর দিকেই শেষ হয়েছে স্যান্টোসের অভিযান। চ্যাম্পিয়নশিপে ১-৭ গোলের ব্যবধানে লজ্জার হার এসেছে ইন্টারন্যাশিওনালের বিরুদ্ধে। আর দলের এই দুর্দশার জন্য আঙুল উঠছে ক্লাব সভাপতি আন্দ্রেস রুয়েদার দিকে। তাঁর আমলে মাঠ এবং মাঠের বাইরে ক্রমেই খারাপ হয়েছে স্যান্টোসের পারফরম্যান্স। ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৯ জন কোচকে দেখা গিয়েছে স্যান্টোসের দায়িত্ব নিতে। পাশাপাশি শেষ ত্রৈমাসিকে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ রয়েছে ক্লাবের মাথায়। আর এই আর্থিক সমস্যার কারণ হিসাবে উঠে আসছে ক্লাবের দীর্ঘকালীন ট্রফি খরা। প্রায় দু’দশক সিরি এ জেতেনি স্যান্টোস, শেষ বড় খেতাব কোপা লিবার্তাদোর্স জয়ের পরও কেটে গিয়েছে এক যুগ। নেইমার পরবর্তী সময়ে তেমন কোনও বড় ফুটবলারও আসেনি ক্লাবে। ফলে ক্রমেই টানা দু’বারের লিগজয়ী পামেইরাস, অ্যাটলেটিকো মিনেইরোর মতো ক্লাবের সঙ্গে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছে তারা।
সবমিলিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন ক্লাব সমর্থকরা। ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে স্যান্টোস ম্যাচ হারতেই সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। ম্যাচ শেষে মাঠেই হতাশায় লুটিয়ে পড়েন কয়েকজন ফুটবলার। তা উপেক্ষা করেই গ্যালারি থেকে বিভিন্ন বস্তু ছুঁড়ে মারার পাশাপাশি মাঠে নেমে পড়েন বহু সমর্থক। স্টেডিয়ামের রক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তাঁরা। স্টেডিয়ামের বাইরেও রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ হয় পুলিশ ও সমর্থকদের। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় আগেই এই ম্যাচের জন্য এলাকায় মিলিটারি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তার আগেই অবশ্য বেশ কয়েকটি গাড়ি ও বাসে আগুন ধরিয়ে দেন উত্তেজিত সমর্থকরা। যার মধ্যে স্যান্টোসের ফুটবলার স্টিভন মেন্ডোজার এক আত্মীয়র গাড়িও ছিল। কলম্বিয়ান এই ফরোয়ার্ড অতীতে খেলে গিয়েছেন আইএসএলে। স্যান্টোসের অবনমনের পর শোকস্তব্ধ নেমার সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লাব লোগোর ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘আমরা আবার হাসব…!’ এই পরিস্থিতিতে স্যান্টোসের সদস্য-সমর্থকরা তাকিয়ে আছেন শনিবারের দিকে। সভাপতি হিসাবে রুয়েদার উত্তরসূরি নির্বাচন হবে সেদিন।