আলাপন সাহা: কলম্বো এয়ারপোর্ট থেকে পাল্লেকেলে মেরেকেটে ঘণ্টা তিনেক। কিন্তু বৃহস্পতিবার বৃষ্টি আর ট্রাফিকের জন্য মিনিট চল্লিশেক বেশি লাগল। ভারতবর্ষে যেমন বেশিরভাগ বিমানবন্দর শহর থেকে একটু বাইরের দিকে, কলম্বোয় তা নয়। ট্যাক্সি করে মিনিট পাঁচেক যেতে দেখা গেল স্কুলের ছেলে-মেয়েরা ব্যাগ নিয়ে হেঁটে ফিরছে। অর্থাৎ, কাছে-পিঠে স্কুল আছে। ঘণ্টাখানেক গেলে হাইওয়ে। রাস্তার দু’ধারে পাহাড়। শুনলাম, একটু দূরে নুয়ারাএলিয়া। পাহাড় এবং সবুজ সেখানে প্রেমিক-প্রেমিকার মতো হাত ধরাধরি করে হাঁটে, স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন শ্রীলঙ্কার ‘ইংল্যান্ড!’
ভেবে খারাপ লাগে যে, পিকাসোর ছবির মতো সুন্দর একটা দেশ, সমুদ্র-পাহাড় ঘেরা, শৈশব থেকে যাকে জেনে এসেছি ‘সোনার লঙ্কা’, আজ তার কী দুঃখী দশা! কোথায় আজ শ্রীলঙ্কার সেই পুরনো সোনার সাজ, কোথায় তার অতীতের চাকচিক্য। ট্যাক্সি চালাচ্ছিলেন যিনি, সেই ভদ্রলোক মাঝে মাঝেই দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন। হাহাকার করতে-করতে বলছিলেন, ‘‘কী নেই বলুন তো আমাদের? তবু…।’’ যন্ত্রণা হওয়া স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক সংকটে দেশটা দেউলিয়া হতে বসেছিল। পর্যটক-শূন্য হয়ে পড়েছিল। জ্বালানির জোগাড়ে একটা সময় দু’তিন দিন পেট্রল পাম্পে পড়ে থাকতে হত। তাতেও জ্বালানি পাওয়া নিয়ে নিশ্চয়তা ছিল না। সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা। গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বটে। বিদেশি পর্যটকের দল আবার আসছে। বিদেশি মুদ্রার অভাবও মিটেছে অনেকটা। কিন্তু লঙ্কার ‘শ্রী’ আজও পুরোপুরি ফেরেনি।
[আরও পড়ুন: অধিবেশন চলাকালীন বারবার মোবাইলে কথা, বিধায়কদের কড়া হুঁশিয়ারি স্পিকারের]
তা, ফেরাতে পারেন যাঁরা, সেই বিরাট কোহলি (Virat Kohli) কিংবা শাহিন শাহ আফ্রিদি- কেউই শ্রীলঙ্কান নন। প্রথমজন, ভারত ভাগ্যবিধাতা। দ্বিতীয় জন, ‘শান-এ-পাকিস্তান’! শনিবার এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান মহাযুদ্ধ যে, এই লঙ্কা ভূমিতে! ভারত থেকে অনেকেই আসছেন পাকিস্তান যুদ্ধ দেখতে। প্রায় এক বছর পর (শেষবার সম্মুখসমর হয়েছিল ২৩ অক্টোবর, ২০২২, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে) আবার দেখা হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের। আগ্রহের অমোষ আকর্ষণ দ্বীপরাষ্ট্রে টেনে আনবে না লোককে? শোনা গেল, দিল্লি থেকে এদিনের কলম্বোগামী বিমান অর্ধেকের বেশি ভারত সমর্থকে বোঝাই ছিল। আগামী কুড়ি দিনে তিন-তিনটে ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য ‘মেহফিল’ (দু’দল এশিয়া কাপ ফাইনালে উঠলে তিনবার লড়াই হবে) ছাড়ে নাকি কেউ? ক্যান্ডিতে এখন উৎসবের মরশুম। এখানকার সবচেয়ে বড় উৎসব ‘এসালা পেরেহারা’র শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। যেখানে লঙ্কার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘ডান্স ট্রুপ’ আসে। একশত হাতি আসে। কিন্তু মনে হচ্ছে, উৎসব শেষ নয়, এদিন থেকে তা শুরু হল মাত্র! যে উৎসবের নাম ক্রিকেট, যে উৎসবের নাম ভারত বনাম পাকিস্তান। ভারত এসে গিয়েছিল আগে। এদিন পাকিস্তান ঢুকে যাওয়ায় উৎসবের ষোলোকলা পূর্ণ বলা যায়।
দু’টো টিমই শুক্রবার প্র্যাকটিসে নামবে শোনা গেল। ভারত প্রথম দু’ম্যাচে পাচ্ছে না কেএল রাহুলকে। ঈশান কিষাণ খেলবেন। কিন্তু কত নম্বরে, সেটাই প্রশ্ন। বোলিংয়ে জশপ্রীত বুমরাহ ফিরে আসায় প্রশ্ন হল, তাঁর সঙ্গে নতুন বলে জুটি বাঁধবেন কে? কী হবে, বুমরাহ-শামি? নাকি বুমরাহ-সিরাজ? তিন পেসারে ভারত যাচ্ছে, প্রায় নিশ্চিত। যদিও শামি বলে দিয়েছেন, পুরনো-নতুন যে কোনও বলেই বোলিং করতে তিনি প্রস্তুত। যাক গে যাক। সে যা হবে, হবে। আসল হল, ভারত-পাকিস্তান হবে। বিরাট বনাম শাহিন হবে। রোহিত বনাম রউফ হবে। বুমরাহ বনাম বাবর হবে। সব শেষে, ‘দুঃখী’ লঙ্কা একটু হলেও সুখী হবে। দ্বীপরাষ্ট্রের ‘মন্দা’র বাজারে এটুকুও বা মন্দ কী?