অরিঞ্জয় বোস: রাতের ইডেনে নাচল কে? শাহরুখ খান আবার কে! বিরাট কোহলিকে নাচালেন কে? শাহরুখ খান আবার কে!
কলকাতা-আরসিবি (RCB) ম্যাচের স্লোগান যদি কিছু থেকে থাকে তবে এটাই। কিং খানের স্টেপে পা মেলাচ্ছেন কিং কোহলি। আর গ্যালারি নাচছে ‘ঝুমে জো পাঠান’-এর ছন্দে। এমন একটা মুহূর্তের জন্যই বোধহয় অপেক্ষা করে ছিল গোটা ইডেন। বাঙালির ঘরে ফিরেছে পাঠান। বছর চারেক পর আবার তাঁর ছুড়ে দেওয়া ভালবাসার চুম্বন প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ইডেনের গ্যালারিতে। পরনে কালো সোয়েটশার্ট আর চোখে সানগ্লাস। সেই চেনা চেহারা। সেই চিরচেনা অভিব্যক্তি। ভালবাসার অদৃশ্য এক জাদুদণ্ড হাতে তিনি এসে দাঁড়াতেই মুহূর্তে যেন সম্মোহিত হল কলকাতা। রং বদলানোর বাজিগর তিনি। বলিউড হোক বা ইডেন। তিনি যেখানে দাঁড়ান পার্টি তো সেখানে হবেই। হলও তাই। ‘ঝুমে জো পাঠান’ মোডে তাই শেষমেশ চলে গেল ইডেনের (Eden Gardens) গ্যালারি।
নাইট বনাম বিরাট সমীকরণ কখন যেন বদলে গিয়েছিল পাঠান বনাম বিরাট দ্বৈরথে। তবে ম্যাচের সেরা মুহূর্তটা তো এল ম্যাচের পরেই। যখন কিং খান জড়িয়ে ধরলেন কিং কোহলিকে। আর পাঠানের ডান্স স্টেপে পা মেলালেন বিরাট (Virat Kohli)। বোঝা গেল দ্বৈরথ নয়, বরং হাতে হাত রেখেই খেলার হার-জিত পেরিয়ে ভরা ইডেনের হৃদয় জিতে নিতেই এসেছেন ভালবাসার দুই অপূর্ব ফেরিওয়ালা।
[আরও পড়ুন: গান্ধীর পরিচয় ও উত্তরাধিকার চিরদিনই RSS-BJP’র অস্বস্তির কারণ, তোপ মহাত্মার প্রপৌত্রের]
আর খেলার মতো মুহুর্মুহু বদলে গেল ইডেনের দুই নায়কের আবেগের ছবিও। ফিল্ডিং যখন করছিলেন বিরাট, বাউন্ডারি লাইনের ধারে যত বার এসেছেন, আবেগে দুলে গিয়েছে ইডেন। বাদশাহও তো। মাঠে আসার পর প্রিয় কলকাতার উদ্দেশ্য অবাধ হাতনাড়া আর সহস্র উড়ন্ত চুম্বনের পর আচমকা আবিষ্কার করলেন যে, টিম গভীর চাপে। পাঁচ উইকেট চলে গিয়েছে। রাসেল যে রাসেল, নাইটদের আশা-আকাঙ্খার ড্রে রাস, তিনি পর্যন্ত প্রথম বলে ওড়াতে গিয়ে সটান প্যাভিলিয়নে। বিষণ্ণ কিং খানকে (King Khan) দেখা গেল, অসহায় চোখমুখ নিয়ে বক্সের অন্তরালে অদৃশ্য হয়ে যেতে। বেরোলেন পরে আবার, ঠিক যখন শার্দূল রোষে জেগে উঠেছে কেকেআর। ইডেনের ‘লাল দুর্গে’ ততক্ষণে অস্তরাগের রং ধরতে শুরু করে দিয়েছে। হাজার-হাজার লাল জার্সির দল বুঝে গিয়েছে, দু’শো তুলে জিততে হলে বিরাট বিক্রম লাগবে। আর সেটাও লাগবে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।
নাইটদের ঘরে-ফেরা স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজনের অন্ত ছিল না। ইডেন তো সেজেইছিল, সেজেছে গোটা তিলোত্তমাও। বেগুনি আলোর উদ্ভাস কলকাতার চোখে-মুখে। তবে সেই উজ্জ্বল আলোতেও ঢাকা পড়ল না সমর্থকদের অনুরাগের লালচে আভা। আসলে মানুষটা যে বিরাট কোহলি। যাঁর ব্যাটের ভর করে স্বপ্ন দেখে গোটা দেশ। এমনকী ভিনদেশও সম্ভ্রমে নতজানু এই ব্যাটেরই শিল্পের ঔদ্ধত্যে। তাঁকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিতে কি কার্পণ্য করবে কলকাতা! মোটেও না। বরং বৃহস্পতিবারের ইডেন দেখে বিরাট নিজে যদি চিন্নাস্বামী বলে ভুল করে ফেলেন তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু পারলেন কোথায় বিরাট? পারলেন কোথায় কলকাতা নামক ‘হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম’-এর আবেগ-কুণ্ডকে যথাযথ মর্যাদা দিতে? শুরুটা করেছিলেন বিরাটোচিত মেজাজে। স্পর্ধার স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে, প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে। কিন্তু ২১ রানের বেশি আর এগোতে পারলেন কোথায়?
[আরও পড়ুন: ‘দেশের জনবিন্যাস বদলে গেলে সংবিধানের অস্তিত্বই থাকবে না’, আশঙ্কা মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিচারপতির]
আর তাই ইডেনের মায়া-রাতের শেষটা হয়ে থাকল পাঠানের, বিরাটের দুর্বার টানে ছুটে আসা ‘লাল-দুর্গে’ নিজস্ব জ্যোতি ছড়িয়ে তিনিই থেকে গেলেন ‘বাদশাহ।’ বাজিগরের ইন্দ্রজালে শেষ দিকে সম্মোহিত হয়ে গেল শহর, তাঁর ভিকট্রি ল্যাপে অদৃশ্য ভাবে হাঁটতে শুরু করে দিল একই সঙ্গে, হাতে হাত ধরে। আর দু’হাত প্রসারিত করে তিনি নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলে দাঁড়াতে ফেটে পড়ল সোল্লাসে। আর বিরাট-সমর্থকদের খারাপ লাগার তো কথা নয়। হেরে গেলেও হল তো রাতের ইডেনে বিরাট-বরণ। একটু না হয় অন্য ভাবে, যা করে গেলেন শাহরুখ স্বয়ং।
বিরাটকে জড়িয়ে। গালে আদর করে। পাঠানের নাচে দু’পা নাচিয়ে। কলকাতা, দুই পারফর্মারের এমন সোনালি আবেগ মোহনা তুমি ভেবেছিলে তো?