shono
Advertisement

দারিদ্র‌ চিরে আলোর রেখা

‘প্রশাসক’ তৃণমূলের কিছু ভাবনা একেবারে নিম্নবিত্তদের জন্য।
Posted: 02:03 PM Feb 16, 2023Updated: 02:05 PM Feb 16, 2023

আমাদের দেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ফারাক বাড়ছেই, ‘অক্সফ্যাম’-এর গবেষণায় তা স্পষ্ট। সেইখানে পুঁজিবাদী উন্নয়নের সংস্কারমুখী ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে, করের অতিরিক্ত বোঝা এড়িয়ে, এবারের রাজ্য বাজেট নিম্নবিত্তর সংসারে এনে দিল অন্নপূর্ণার হাসি। লিখলেন শুভময় মৈত্র

Advertisement

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর পেশ করা তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গের ৩.৩৯ লক্ষ কোটির বাজেটে অভাবের লক্ষণ সুস্পষ্ট। এত বেশি করে বিভিন্ন প্রকল্পে নিম্নবিত্তর কথা ভাবতে হচ্ছে, এর অর্থই হল, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা উজ্জ্বল নয়। তবে এর জন্য কিন্তু ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সিপিআইএম বা তৃণমূল শাসক হিসাবে এ রাজ্য প্রচুর ব্যঙ্গোক্তি শুনেছে এবং শুনছে। একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে, মাশুল সমীকরণের অতীত থেকে পণ্য এবং পরিষেবা করের (জিএসটি) বর্তমান বণ্টন– এখানে অসাম্যের উদাহরণও যথেষ্ট।

যদিও এই লেখায় দারিদ্রের মধ্যেও আলোর রেখা খুঁজে নিতে চাইব। ‘প্রশাসক’ হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু ভাবনা অবশ্যই একেবারে নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য। বিশেষ করে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে নেতিবাচক ফলের পর থেকে তৃণমূল সরকার সরাসরি পিছিয়ে পড়া মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এসেছে। সমালোচনা থাকবেই। এই টাকা পাঁচশো কিংবা হাজার থেকে কি আরও বাড়ানো যায় না? মনে করিয়ে দিতেই হয়, যেভাবে দুর্নীতির কথা উঠে আসছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, সেসব ছিদ্র সামাল দেওয়া গেলে হয়তো আরও বেশি পরিমাণে সহায়তা করা যেত নিম্নবিত্তকে।

[আরও পড়ুন: দেশকে বাঁচাতে আমজনতার উপর বিপুল করের বোঝা, নতুন বাজেট পাকিস্তানে]

অন্যদিকে সরকারকে কুর্নিশ জানাতে হয়, কৃষিক্ষেত্রে জলের উপর কর-মকুবের সিদ্ধান্তের জন‌্য। হয়তো তত গভীর ভাবনা নয়, তবুও মনে করিয়ে দেয়, বামফ্রন্ট সরকারের ভূমি-সংস্কারের কথা। নিম্নবিত্তর জন্য প্রকল্প ঘোষণা আদৌ কোনও যুগান্তকারী ভাবনা নয়, তবে ১৮-৪৫ বছর বয়সি ২ লক্ষ মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা করে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক একটি ভাবনা। ঋণ ফেরত হবে না ভাবলেও, গুণফল কষে এই অঙ্ক ১০ হাজার কোটি টাকার। প্রকল্প সঠিকভাবে রূপায়িত হলে ঋণ পেতে পারেন অভাবী মানুষরা, তাঁদের কিছুটা সুবিধা তো হবে!

এদিকে মাত্র সাতদিনে শেয়ার বাজারে আদানির সংস্থাগুলির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার যে ঋণ দিয়েছে, তা উদ্ধার করা রীতিমতো শক্ত। অর্থাৎ, পুঁজিবাদী পথে রাষ্ট্রের উন্নয়ন করতে গিয়ে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ানো বেশি ভাল, নাকি অল্প করে প্রচুর নিম্নবিত্তর মধ্যে সেই টাকা ভাগ করে দিলে মানুষের মঙ্গল: দ্বন্দ্ব এই দুই পথের। মাঝামাঝি কোনও একটি সঠিক জায়গা খুঁজে পাওয়া অবশ্যই রাষ্ট্র এবং তার অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে ভীষণ কঠিন, এবং সেখানে আবার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা আসে। সেই প্রসঙ্গেই, এবারের রাজ্য বাজেটে নতুন সড়ক নির্মাণ বা পুরনো রাস্তা সংস্কারের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব মনে করিয়ে দেয় অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে ‘স্বর্ণ চতুর্ভুজ’-এর কথা। যোগাযোগের অধিকতর সুবিধা অবশ্যই উন্নয়নের রাজপথ।

[আরও পড়ুন: ‘ভারতকে খাটো করার ষড়যন্ত্র’, বিবিসি বিতর্কের মাঝে সাদ্দাম প্রসঙ্গ টেনে সরব ধনকড়]

স্বাধীনতার আগে আমাদের আয় ছিল অনেক কম। ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর উপর কর চাপিয়ে সেই টাকা বিদেশে নিয়ে যেত। দেশ স্বাধীন হলে ব্রিটিশ সরকারের শোষণের বদলে আধা-সমাজবাদী ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করলেন নেহরু। গরিবের সামান্য মঙ্গল হল। এরপর নয়ের দশকের উদারীকরণ। স্বল্পসংখ্যক ধনীর সমৃদ্ধি বাড়ল অভূতপূর্ব হারে। মধ্যবিত্তর একটা অংশের সম্পদ বাড়ল, অন্য অংশ হাঁটল নিচের দিকে।

গরিবের আয়ও হয়তো সামান্য বাড়ল, যদিও তা ধনীর তুলনায় ভীষণ কম। ফলে, আমাদের দেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ফারাক বাড়ছেই, ‘অক্সফ্যাম’-এর গবেষণায় তা স্পষ্ট। সেইখানে পুঁজিবাদী উন্নয়নের সংস্কারমুখী ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে, করের অতিরিক্ত বোঝা এড়িয়ে, এবারের রাজ্য বাজেট অনেক বেশি করে অভাবীদের। চাকচিক্যহীন এই বাজেটে বিপুল উন্নয়ন হয়তো অনুপস্থিত। হয়তো বা আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই অঙ্ক কষেছে তৃণমূলের চিন্তন শিবির। সবশেষে বলি, ৩ শতাংশ মহার্ঘভাতা-সংক্রান্ত টিপ্পনী এই বাজেটের ঝাল নুন।

(মতামত নিজস্ব)
লেখক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট, কলকাতার অধ‌্যাপক

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement