শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দেশের কর্মসংস্থানের ছবি। এমনকী আইআইটি থেকে পাশ করেও বহু পড়ুয়া চাকরি পাচ্ছেন না।
দেশজুড়ে চাকরির বাজার মন্দা। কর্মসংস্থানের বিবর্ণ চিত্র বেশ কিছু দিন ধরেই সামনে আসছে। চলতি ভোটের আবহে কর্মংসংস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও বটে। তার মধ্যেই আরও হতাশাজনক, ভয়ের ছবি নজরে আসছে। দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ (আইআইটি)। সমগ্র দেশে ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের ২৩টি ক্যাম্পাস। দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের গন্তব্য।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামী সংস্থায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন তঁারা। এটাই দস্তুর। মনে করা হয়, চাকরি এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে ‘জলভাত’। পাশ করেই বিরাট প্যাকেজ-সহ চাকরির নিশ্চয়তা আইআইটি-র ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: ৫ দিনের মধ্যে খুনের হুমকি! সোশাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক দাবি অর্জুন সিংয়ের]
কিন্তু সেই ছবিতেও আচমকা ছন্দপতন। চলতি বছরে আইআইটি (IIT) থেকে পাশ করেও বহু পড়ুয়া চাকরি পাচ্ছেন না। ধীরজ সিং নামে আইআইটি কানপুরের এক প্রাক্তন ছাত্র তথ্য জানার অধিকার আইনে আইআইটিগুলির ছাত্রছাত্রীদের চাকরির পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। জানা গিয়েছে, এই বছর দেশের ২৩টি আইআইটি-র প্রায় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থীই এখনও পর্যন্ত কোনও চাকরি পায়নি। এই অবস্থায় দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো বেশ কয়েকটি আইআইটি প্রাক্তনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা যদি কোনওভাবে, বর্তমানে পাশ করা শিক্ষার্থীদের, চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
মূলত কোভিড অতিমারীর জেরে বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে যে-মন্দা দেখা দিয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে এখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসা যায়নি। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’ (সিএমআইই) জানিয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে ভারতে বেকারত্বের হার ছিল ৬.৮ শতাংশ। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, তার আগের বছর শেষ ত্রৈমাসিকে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের বেকারত্বর হার ছিল ৪৪.৪৯ শতাংশ!
[আরও পড়ুন: ‘আমার জন্ম জৈবিক প্রক্রিয়ায় নয়’, মোদির মন্তব্যে মমতার পালটা, ‘আমাদের তো মা-বাবা আছে’]
মোদ্দায়, শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। অভিজ্ঞরা হয়তো কোনও-না-কোনওভাবে ক্ষুণ্ণিবৃত্তির ব্যবস্থা করে নিতে পারছে। কিন্তু শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের উন্নততর ভবিষ্যতের স্বপ্ন ধাক্কা খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোভিডের সময় লকডাউন, নোটবন্দি, জিএসটি চালু, মুদ্রাস্ফীতির চাপ ভারতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
কিন্তু সরকার শেয়ার বাজারের উজ্জ্বল ছবি দেখিয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির রঙিন ছবি ফেরি করতে চাইছে। যা বাস্তবের থেকে কয়েক যোজন দূরে। ধনী ও মধ্যবিত্ত-প্রান্তিক মানুষের আর্থিক বৈষম্য আকাশছেঁায়া। কর্মসংস্থানের হার বাড়াতে উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেখানে সরকারি উদ্যম ও নীতির অভাবে কাজের বাজারের পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হবে, সন্দেহ নেই।