সৌরভ মাজি, বর্ধমান: যুবক বয়সে মনের কোণে চেপে বসেছিল জেদটা। শিক্ষার আলোয় সমাজের প্রতিটি কোণের অন্ধকারকে মুছে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন। চাকরিতে অবসর হয়ে গিয়েছে। তবে শিক্ষকতা ছাড়তে পারেননি। তাই তো আজও মাত্র একটাকা বেতন নিয়ে হাজার হাজার কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা দিয়ে চলেছেন ‘ফকির মাস্টার’ ওরফে ‘সদাই ফকির’। পদ্মশ্রী (Padmashree Award) সম্মানে ভূষিত হয়ে আপ্লুত মাস্টারমশাই।
তাঁর আসল নাম সুজিত চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের উত্তর রামনগর গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলায় সুজিতবাবুর পড়াশোনা গ্রামেরই রামনগর জুনিয়র হাই স্কুলে। তারপর বোলপুরের বাঁধগড়া হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে স্নাতক হন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। জলপাইগুড়ি থেকে বিটি পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। শিক্ষকতা শুরু হয় রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে। চল্লিশ বছর ধরে করেন চাকরি। ২০০৪ সালে স্কুলের চাকরিতে অবসর নেন।
[আরও পড়ুন: কাটআউটে মোদির পায়ের কাছে মনীষীদের ছবি! তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ বিজেপির]
অবসরের পর স্কুলেরই একটি ঘরে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। ভেঙে পড়েননি। এলাকার দুঃস্থ পরিবারের অনেক ছাত্রছাত্রী তাঁর বাড়িতে চলে আসে প্রাইভেট টিউশন পড়ার জন্য। সেই শুরু ‘সদাই ফকিরে’র পাঠশালা। মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে সারা বছর শিক্ষাদান করেন তিনি। পাশাপাশি জেলার জঙ্গলমহল বলে পরিচিত এই এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছেন। পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়ায় আনন্দ ধরে রাখতে পারছেন না পরিজন-পরিচিতরা।
খুশি সুজিতবাবুও। তিনি বলেন, “সকালে খবরটা পেলাম। খুবই খুশির খবর। ২০-২২ কিলোমিটার দূর থেকে পড়ুয়ারা পড়তে আসে। যাদের বেশিরভাগই তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের। তবে আমি মনে করি এমন কিছু মহৎ কাজ করিনি।” অত্যন্ত খুশি ‘সদাই ফকির’-এর ছাত্রছাত্রীরাও।