সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ। প্রভাব খাটিয়ে ফৌজদারি তদন্তে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৬৪ বছরের এক স্বামীহারা মহিলা ও তাঁর কন্যা। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখেছে শীর্ষ আদালত। সোমবার রাজ্যের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কোনওরকম চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে। কোনওরকম প্রভাব খাটানো হয়েছে কি না, তা-ও জানাতে হবে শীর্ষ আদালতকে। পাশাপাশি, আগামী ডিসেম্বরে পরবর্তী শুনানির আগে রাজ্য সরকারকে মুখবন্ধ খামে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ।
জানা গিয়েছে, বিষয়টির মূলে রয়েছে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে আইনি লড়াই। অভিযোগকারী এক বিধবা মহিলার দাবি, ওই সম্পত্তির একটি অংশ তাঁর পিতার মৃত্যুর পরে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর বড় ভাই এবং তাঁর পরিবার তাঁকে সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। বহুবার তাঁর অংশ ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, এমনকী, শারীরিক নিগ্রহও করা হয়েছে। সেই ঘটনা ধরা পড়েছে সিসিটিভি ফুটেজে। যার জেরে আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী দু’টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।
[আরও পড়ুন: ভারচুয়াল নয়, সশরীরেই কালীপুজোর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী]
একটিতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, আঘাত, প্রতারণা, জালিয়াতি এবং অন্যায়ভাবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে অপরাধমূলক খুনের চেষ্টা, একজন মহিলার শালীনতা ক্ষুণ্ণ করা, গৃহে প্রবেশ করা, আঘাত করা এবং ভয় দেখানোর পাশাপাশি ২০০৭ সালের প্রবীণ নাগরিক আইনের ২৫ নম্বর ধারায় অভিযোগ করা রয়েছে। অভিযোগকারিণীর দাবি, তাঁর আত্মীয়রা বিচারপতি সিনহার স্বামী আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে-কে নিয়োগ করেন মামলা লড়ার জন্য। তিনি স্ত্রীর পদমর্যাদা কাজে লাগিয়ে তদন্তকারীদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে সঠিক পথে তদন্ত প্রক্রিয়া এগনো না যায়। যার জেরে তদন্ত থমকে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন স্বামীহারা বৃদ্ধা। তাই ওই আইনজীবী বা তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে যাতে সঠিক তদন্ত হয়, সেই আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। এমনকী, বিচারপতি নিজের চেম্বারে ডেকে তদন্তকারী অফিসারকে তিরস্কার করে ফৌজদারি তদন্ত বন্ধ করতে নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ ওই মহিলার।
যদিও মূল বিতর্ক দেওয়ানি বিষয় নিয়ে। শীর্ষ আদালতে আবেদনকারীরা জানান, তাঁরা কখনও শোনেননি বা কল্পনাও করেননি যে, হাই কোর্টের একজন বর্তমান মাননীয় বিচারপতি তাঁর স্বামীর ব্যক্তিগত ও পেশাগত লাভের জন্য মামলায় জড়িয়ে পড়বেন। আইনজীবী দে এবং বিচারপতি সিনহার পদক্ষেপ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে আবেদন করেন তাঁরা। আবেদনকারীদের পর্যাপ্ত পুলিশ সুরক্ষা বাড়াতে শীর্ষ আদালতকে নির্দেশ দিতেও আবেদন করা হয়েছে। এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকার জানিয়েছে যে, তদন্তের পর্যায়, অবস্থা এবং অভিযোগগুলি সম্পর্কে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আগে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। রাজ্য সরকার যুক্তি দিয়েছে যে, সিআইডি সঠিকভাবে তদন্ত করছে এবং আবেদনকারীদের অভিযোগগুলি বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।