সুশান্ত সিং রাজপুতের আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ তাঁর ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ ছবির সহ-অভিনেতা মৌমিতা চক্রবর্তী। ফিরে গেলেন সেই ছবির শুটিংয়ের দিনগুলোতে। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
সেটা২০১৪সাল। ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী’র শুটিং। আমার ৮-১০ দিনের শুটিং ছিল সেই ছবিতে সুশান্ত সিং রাজপুত ‘ব্যোমকেশ’। কলকাতায় দিবাকাকাই (দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়) আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন সুশান্ত-এর সঙ্গে। শুটিং শুরুর আগে আমরা দু’-তিনদিন ওয়ার্কশপ করেছিলাম। আমি ছিলাম ব্যোমকেশের প্রাক্তন বান্ধবী ‘লীলা’র চরিত্রে। আমি যেদিন ওয়ার্কশপে গেলাম সেদিন সুশান্ত সবে কলকাতায় ল্যান্ড করেছে। বালিগঞ্জের একটা হোটেলে প্রথম দেখায় আমি বুঝতেই পারিনি, আমার সামনে সুশান্ত সিং। মনে হয়েছিল খুব সুন্দর দেখতে হ্যান্ডসাম একটা ছেলে হেঁটে আসছে। টুপি পরেছিল। টুপি খোলার পর দিবাকাকা আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। খুব সুন্দর করে কথা বলেছিল। একবারও বুঝতে দেয়নি, যে ও এতবড় একজন সেলিব্রিটি।
আমি এর আগে কখনও বম্বের কাজও করিনি। ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ই আমার প্রথম বলিউডের কাজ ছিল। এতটুকু অহংকার নেই দেখলাম সুশান্তের। আমরা একসঙ্গে কফিও খেয়েছিলাম সেদিন।তারপর যখন শুটিংয়ে গেলাম, দেখলাম সেই মানুষটাই অন্যরকম। ভীষণ সিরিয়াস। আমি প্রচণ্ড নার্ভাস ছিলাম হাত-পা কাঁপছিল। সুশান্ত এসে সহজ করে দিল।বলল, চিন্তার কিছু নেই। শট দেওয়ার আগে বুঝেছিলাম, ও আমার সম্পর্কে অনেকটা জেনে গিয়েছে। একটু অবাক হয়েছিলাম। যে ও জানে, আমি ডান্সার। জিজ্ঞেস করেছিল, শ্যমক দাভর-এর কাছে কোরিওগ্রাফি শিখি কিনা!
প্রথম দিনের পর আমার ব্রেকডাউন হয়েছিল, যেহেতু ওটা ইমোশনাল সিকোয়েন্স ছিল। সেই সময় সুশান্ত খুব হেল্প করেছিল। দিবাকাকার স্ত্রী রিচাও খুব সাহায্য করেছিল তখন।পরদিন শুটিংয়ে আমার খুব জ্বর এসে গিয়েছিল। সেই খবর পেয়ে সুশান্ত নিজে আমার মেক-আপ রুমে এসেছিল এবং ওষুধের ব্যবস্থাও করেছিল।এখনও আমার মনে আছে, রীতিমতো আমাকে মোটিভেট করেছিল। তারপর ফোন নাম্বার দেওয়া-নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: ‘নভেম্বরেই বিয়ের কথা ছিল সুশান্তের!’, বিস্ফোরক মন্তব্য অভিনেতার তুতো ভাইয়ের]
পরে আমি যখন বম্বে শিফট করি, মাসে দু’-একবার করে কথাও হত। আমার খোঁজ নিত যে, কী কাজ করছি, না করছি? যেখানে আছি সেফ কিনা, এইরকম। কোথাও অডিশন দিতে গেলে সুশান্তকে জিজ্ঞেস করতাম, সেফ কিনা। ও আবার জিজ্ঞেস করত অডিশন কেমন হল? পরে আমি একটা বিজ্ঞাপন করেছিলাম, সেখানে কার্তিক আরিয়ানও ছিল। আমি লিঙ্কটা সুশান্তকে পাঠিয়েছিলাম। ও খুব প্রশংসা করেছিল। বলেছিল যে, কার্তিক ওর খুব ভাল বন্ধু।
পরে আমার আরও বিজ্ঞাপন দেখেও ও জানিয়েছিল। বলেছিল, ‘বম্বে থেকে চলে যাস না।’ ২০১৫-এ আমি কলকাতায় ফিরে আসি বাবা অসুস্থ হয়ে পড়াতে। তখন সুশান্তকে বলেছিলাম যে, আমি চলে যাচ্ছি। ওকে ব্যান্ডস্ট্যান্ড-এ মিটও করেছিলাম। ও বান্দ্রায় থাকত। সুশান্ত বলেছিল, ‘বম্বে কাউকে খালি হাতে ফেরায় না, ডোন্ট গো! এখানে কাজ পাচ্ছিস না, নাকি?’ ওকে বলেছিলাম, ‘কাজ পাচ্ছি না নয়, কিন্তু বাবার পাশে এইসময় থাকতেই হবে।’
আমি কোনও দিন মুহূর্তের জন্যও বুঝিনি ওইরকম হাসিখুশি মানুষটার এমন ডিপ্রেশন হতে পারে! আমার কাছে পুরোটা অকল্পনীয়! এখনও মানতে পারছি না এত কমবয়সে সুশান্তের চলে যাওয়া। ‘লীলা’ কোনও দিন মানতে পারবে না ব্যোমকেশের না থাকা।
[আরও পড়ুন: আজ হচ্ছে না ময়নাতদন্ত, সুশান্ত সিং রাজপুতের শেষকৃত্য হবে সোমবার]
The post ‘বালিগঞ্জের এক হোটেলে প্রথম দেখা’, সুশান্তের স্মৃতিচারণায় ‘ব্যোমকেশ’ ছবির সহ-অভিনেত্রী মৌমিতা appeared first on Sangbad Pratidin.