রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বুধবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাতের দিন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কলকাতায় পরিষদীয় দলের কর্মসূচিতে নেই রাজ্য বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোমবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বিধায়কদের তরফে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাজ্য বিজেপি কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না এ বিষয়ে। মুখ্যমন্ত্রী দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এটা দিল্লির বিষয়। দিল্লিতে উনি (মমতা) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন।’’ অর্থাৎ দিল্লিতে মোদি-মমতা সাক্ষাতের দিন শুভেন্দুর নেতৃত্বে পরিষদীয় দল যে কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে রাজ্য বিজেপিতে। এর ফলে বঙ্গের পদ্ম শিবিরে আভ্যন্তরীন গোষ্ঠী কোন্দলই ফের সামনে এসে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে খবর, বিধায়কদের নিয়ে বিরোধী দলনেতার ওই একক কর্মসূচিতে সায় নেই রাজ্য বিজেপির। কেন্দ্রের কাছে বাংলার বকেয়া টাকা মেটানোর দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কাল বুধবার বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে যোগ দিতে রবিবারই মমতার সঙ্গে দিল্লি গিয়েছেন সাংসদ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, আগামিকাল বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করবেন তখন কলকাতায় পাল্টা কর্মসূচির ছক করেছে বিজেপি পরিষদীয় দল। মূলত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) একক উদ্যোগেই এই কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিধানসভা ভবন থেকে বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে মিছিল করতে পারেন শুভেন্দু। রাজভবন পর্যন্ত মিছিল করে গিয়ে রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দেওয়ার ভাবনাচিন্তাও রয়েছে। যদিও সিংহভাগ বিজেপি বিধায়কদের কাছে পুরোও কর্মসূচির বিষয়টি সোমবার রাত পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: বর্ধমানে তরুণীর রহস্যমৃত্যু, ছোট মেয়ের উসকানিতে বড় মেয়েকে পুড়িয়ে খুন বাবা-মায়ের?]
বিজেপির এক বিধায়ক জানালেন, ‘‘আমাদের ২০ তারিখ সকালে বিধানসভায় যেতে বলা হয়েছে। কী হবে এখনও জানানো হয়নি।’’ তবে বিধায়কদের একটি কর্মসূচি যে রয়েছে তা এদিন জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। এর আগেও রাজ্য বিজেপির সঙ্গে বিজেপি পরিষদীয় দলের দূরত্ব সামনে এসেছে। বিজেপির একাংশের অভিযোগ, পরিষদীয় দল রাজ্য পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে সেভাবে সমন্বয় রেখে চলে না। বিরোধী দলনেতা পরিষদীয় দলকে নিয়ে সমান্তরালভাবে আরেকটি বিজেপি চালান। আবার একাধিক বিধায়ক পাল্টা অভিযোগ করে আসছেন, জেলা বিজেপি নেতারা তাঁদের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রাখে না। কর্মসূচির খবর সেভাবে দেওয়া হয় না। এই পরিস্থিতি সামলাতে পার্টির সঙ্গে পরিষদীয় দলের সমন্বয় যাতে ঠিক থাকে সেজন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। আর মোদি-মমতা বৈঠকের দিন শুভেন্দুর বিজেপি পরিষদীয় দল যে কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে তা নিয়ে রাজ্য পার্টির যে দ্বিমত রয়েছে তা এদিন সুকান্ত মজুমদারের বক্তবে্যই স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি পার্টির মধ্যে সুকান্ত ও শুভেন্দুর ঠান্ডা লড়াই ও দূরত্ব আরেকবার সামনে এসে পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, মোদি-মমতার বৈঠকের দিল রাজ্যে পাল্টা কোনও কর্মসূচিতে রাজ্য বিজেপির আপত্তি থাকায় শেষমেশ বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে পরিষদীয় দল কর্মসূচি শেষ মুহূর্তে বাতিল করেন কী না। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, রাজ্যে দাবিদাওয়া নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। এটা নিয়ে পাল্টা রাজনীতি করা উচিত নয়। রাজ্য বকেয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে, এটা নিয়ে যদি পাল্টা প্রচার করা হয় বিজেপির তরফে তাহলে সেটা দলের পক্ষে খারাপ বার্তা যাবে।