সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পদে থাকলেও ঝালদা (Jhalda) থানার কাজ থেকে আপাতত ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হল সেই আইসি সঞ্জীব ঘোষকে। এখন পুরুলিয়ার ঝালদা থানার নজরদারিতে এসডিপিও সুব্রত দেবকে দায়িত্ব দিয়েছে জেলা পুলিশ। কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনায় ঝালদা থানার আইসির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ওঠায় তাঁকে ঝালদা থানার দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি আইসির পদেই রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন। বলেন, “এসডিপিও ওখানে ক্যাম্প করে রয়েছেন। পুরুলিয়া সদরে সবকিছু জিজ্ঞাসাবাদের কাজ চলছে।”
এদিকে বুধবার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে যায় ঝালদা পুর শহর। বুধবার ঝালদার মূল রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলি পথ কয়েকশো পোস্টার দেখা মেলে। গুলিতে নিহত ঝালদা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর ছবি দেওয়া ওই পোস্টারের ওপরে লেখা,”জাস্টিস ফর তপন কান্দু ।” নিচে দু’টি জ্বলন্ত প্রদীপের মাঝে জ্বলজ্বল করছে সিবিআই চাই। তবে এই পুর শহরে কারা, কখন এই পোস্টার লাগালো এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন ঝালদার মানুষজন। এদিকে এদিনই ঝালদা সত্যভামা বিদ্যাপিঠে কংগ্রেস কাউন্সিলরের স্মরণে একটি শোক সভা হয়। ওই সভা থেকে এই ঘটনায় বড়সড় আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। ঝালদা এক, ঝালদা দুই, বাঘমুন্ডি, আড়শা কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিয়ে এদিনের এই শোক সভা হয়। ৩০ মার্চ পুরুলিয়া এসপি অফিস অভিযান নিয়ে ওই শোক সভাতেই বিস্তারিত আলোচনা হয়।
[আরও পড়ুন: ২০০ কোটির ক্লাবে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, জানেন কত পারিশ্রমিক নিয়েছেন অনুপম খের ও মিঠুন?]
গত ১৩ মার্চ বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে ঝালদা- বাঘমুন্ডি সড়কপথে গোকুলনগরের কাছে আততায়ীদের ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারান এই কংগ্রেস কাউন্সিলর। তারপর থেকেই এই খুনের ঘটনায় ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষকে কাঠগড়ায় তোলেন এই শহরের মানুষজন। গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই কাউন্সিলরকে ঝালদা-১ নম্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হলে সেখানে আইসিকে দেখলে এই শহরের মানুষজন তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ওই দিন রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঝাড়খণ্ডের রাঁচি হাসপাতালে কাউন্সিলরের মৃত্যু হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে ঝালদা। নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু এই ঘটনায় সরাসরি আইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এরপরেই আইসির সঙ্গে নিহত কাউন্সিলরের ভাইপো মিঠুন কান্দুর একের পর এক অডিও ভাইরাল হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ের অডিওতে শোনা যায়, তপন কান্দু, তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু-সহ মোট তিনজন কংগ্রেস কাউন্সিলরকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য মিঠুনকে চাপ দেন আইসি। দ্বিতীয় পর্যায়ের অডিওতে অভিযোগের বয়ান বদলে দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায় আইসির মুখে। এ ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য ভাইপো মিঠুনের কাছে কাতর প্রার্থনা করতে শোনা যায় ওই আইসিকে। এমনকী, কাকার খুনের বদলা নিতে তাকে গুলি করে মারার কথাও বলেন আইসি।