দুলাল দে: এই অস্ট্রেলিয়াকেই (Australia) একটা সময় ৭ গোলে হারাতে পারত ভারত ! শুনে বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠলেও তথ্য বলছে, এটাই সত্যি। কিন্তু সেসবই পৌরাণিক যুগের গল্প কথার মতো। কারণ, এখনকার অস্ট্রেলিয়ার কথা উঠলে হাত পা ঠকঠক করে কাঁপার মতোই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
১২ বছর আগে এই দোহার মাটিতেই খেলা হয়েছিল টিম কাহিলের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দল ও ভারতীয় দলের গোলকিপার সুব্রত পালের মধ্যে। যে ম্যাচের পর এশীয় সংবাদ মাধ্যম সুব্রত পালকে আখ্যা দিয়েছিল ‘স্প্যাইডার ম্যান’ হিসাবে। তারপর এই ১২ বছরে বিশ্ব ফুটবলে পালাবদল হয়েছে অনেক কিছুই, কিন্তু ভারতীয় ফুটবল যে মারাত্মক এগিয়ে তা বলা যায় না। যেটুকু বলার তা হল, পরপর দুটো টার্মে এশিয়ান কাপে খেলছে ভারতীয় দল যা ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি।
২০১১-য় বব হাউটনের কোচিংয়ে বাইচুংরা যখন এশিয়ান কাপ (AFC Asian Cup) খেলার সুযোগ পান, তার আগের ২৬ বছরে শুধুই খরা সেখানে গত এশিয়ান কাপে স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের অধীনে অধিনায়ক ছিলেন সুনীল ছেত্রী। এবারও তিনিই অধিনায়ক। ২০১১ এশিয়ান কাপ থেকে ২০২৪ ভারতীয় ফুটবলের তিনিই চলমান অশরীরী। কিন্তু, প্রবল শক্তিধর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে সুনীল ছেত্রীর বয়সের কথাটাও বিবেচনা করতে হবে। তিনি যেখানে ৪০ ছুঁই ছুঁই, প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া সেখানে এশীয় ফুটবলে সবথেকে ফিট টিম। আর এ শুধু কথার কথা নয়, শেষ কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগে ডেনমার্ক ও তিউনিশিয়াকে যেভাবে অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছে তা দেখার পর স্বীকার করে নেবেন সবাই।
[আরও পড়ুন: ব্রাত্য পূজারা, নেই শামি, কেমন হল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দুই টেস্টের ভারতীয় দল?]
সুনীল ছেত্রীকে (Sunil Chhetri) যদি ভারতীয় ফুটবলের চলমান অশরীরী বলা হয়, অস্ট্রেলিয়াতেও তার কাউন্টার পার্ট আছে। গোলকিপার ম্যাথু রিয়ান এই নিয়ে তিন-তিনবার এশিয়ান কাপে গোল পোস্টের নীচে দাঁড়াবেন। শুধু এশিয়ান কাপই নয়, তিন-তিনটে বিশ্বকাপও খেলে ফেলেছেন। এ হেন অভিজ্ঞ গোলকিপার যখন বারের নীচে দাঁড়াবেন গোল পেতে গেলে ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের কতটা কালঘাম ছুটতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। কিছুদিন আগেই চোয়ালে অস্ত্রপচার হয় আর্সেনালের এই গোলকিপারের। চোট সারিয়ে ফিটনেসের চূড়ান্ত জায়গায় রয়েছেন ম্যাথু রিয়ান। আর মিডফিল্ডার রিলে ম্যাকগ্রি কী করতে পারেন, তা কাতার বিশ্বকাপে দেখেছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ান আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। যে কারণে, এদিন দোহাতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ বলেন, “মাথায় রাখতে হবে ইউরোপিয়ান সার্কিটে খেলে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলাররা এশিয়ান কাপ খেলতে এসেছে। যারা ইউরোপিয়ান সার্কিটে প্রতি সপ্তাহে উন্নত মানের ম্যাচ খেলে। স্বাভাবিকভাবে অস্ট্রেলিয়া দলের ফিটনেসও চূড়ান্ত জায়গায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ”
শনিবার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে না এনে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল সুনীল ছেত্রীকে। নিয়ে আসা হয়েছিল আব্দুল সাহাল সামাদকে। যাঁকে স্টিমাচ শনিবারের ম্যাচে খেলাবেন কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এর একটাই কারণ সদ্য চোট থেকে সেরে উঠেছেন সাহাল। ইগরের সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গা ডিফেন্স। সাফে সন্দেশ-আনোয়ার জুটি ভারতীয় ডিফেন্সকে যে নির্ভরতা দিয়েছিল, আনোয়ারের অনুপস্থিতিতে ডিফেন্সের সেই জমাটভাব কোথায়? মাথায় রাখতে হবে এটা সাফ কাপ বা ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ নয়, এশিয়ান কাপ।
এক্ষেত্রে ভারতীয় দলের সবথেকে বড় সম্পদ মানসিকতা, টিম স্পিরিট। স্টিমাচ (Igor Stimac) যে কারণে, ম্যাচের আগের দিন সকালে দলের মনোবিদকে নিয়ে অনেকক্ষণ ক্লাস করালেন ফুটবলারদের। প্রথমে গ্রুপ সেশন তারপর ফুটবলার ধরে ধরে। ঠিক হয়েছে শনিবার ম্যাচের দিন সকালে ফুটবলারদের সঙ্গে ফের কথা বলবেন মনোবিদ। আর মেডিক্যাল টেস্ট নেবেন ফিটনেস কোচ। তারপরই ফুটবলারদের শারীরিক আর মানসিক গঠন দেখে চূড়ান্ত একাদশ তৈরি করবেন ইগর স্টিমাচ। তবে এদিন মিটিংয়ে ফুটবলারদের বলেছেন, চাপ না নিয়ে নিজেদের আনন্দে খেলতে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া দলের খেলা দেখে যতভাবে ব্যবচ্ছেদ করা যায়, স্টিমাচ ফুটবলারদের সামনে তাই করেছেন। আর পইপই করে বলেছেন তাঁর নির্দিষ্ট করে দেওয়া জোন ছেড়ে না যেতে। তাহলে কি তিনি ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলবেন? একদমই নয়, বরং ব্যালান্সড ফুটবল খেলতে চাইছেন স্টিমাচ। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটার নাম যে অস্ট্রেলিয়া। সারা বছর ইউরোপের সার্কিটে খেলে প্রতিপক্ষের এইসব স্ট্রাটেজি সব জলে গুলে
খেয়ে নিয়েছে।