গৌতম ব্রহ্ম: এক টাকাও বরাদ্দ নেই এই প্রকল্পের জন্য। মূলধন বলতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও আয়ুর্বেদের প্রতি ভালবাসা। তাতেই ভেষজ বিপ্লব ঘটে গেল কোচবিহারের (Cooch Behar) তুফানগঞ্জে। গত দশমাসে ছোট-বড় মিলিয়ে জন্ম নিল ১০২২ টি ভেষজ বাগান। যাতে পরম মমতায় লালিত হচ্ছে কালমেঘ, তুলসি, বাসক, কুলেখাড়া, ঘৃতকুমারীর মতো ভেষজ।
এই তুফানগঞ্জই রাজ্য তথা দেশকে উপহার দিয়েছে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত তুলসি গ্রাম। ফি বছর সর্দি–কাশিতে ভোগা একটি গ্রাম তুলসির কৃপায় এখন অনেক সুস্থ! সেই তুলসি গ্রামের রূপকার সিনিয়র আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. বাসবকান্তি দিন্দার উদ্যোগেই ২০১৯ সালের নভেম্বরে এই ভেষজ বিপ্লব শুরু হয় তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকে। বাসববাবু ব্লকের সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলগুলিকে বাগান করার জন্য উৎসাহিত করেন। স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের ভেষজের রোগ নিরাময় ক্ষমতা ও তার চাষ পদ্ধতি নিয়ে বোঝাতে থাকেন। তাতেই কাজ হয়। শুরু হয় ‘ভেষজ সুরক্ষা’ প্রকল্প। তাতে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামবাসী, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, ডাক্তার, নার্স ও আশাকর্মীরা শামিল হন। আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ করার ফাঁকে ভেষজ বাগান তৈরিতে উৎসাহিত করতে থাকেন গেরস্থদের। তাতে দারুণ কাজ হয়। বাসববাবু লকডাউনের সময় স্কুলের শিক্ষকদের ভেষজ বাগান তৈরির ব্যাপারে মোবাইলে অবহিত করেন, ওয়েবিনার করেন।
[আরও পড়ুন:আসানসোল পুরনিগম নিয়ে ভুয়ো পোস্ট, ধৃত বিজেপি নেতা, প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তার সাংসদ সৌমিত্র]
মাস্টারমশাইরা সেই মতো পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাগানের পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনও অসুবিধা হলে বাসববাবুর থেকে জেনে নিয়েছেন সমাধানের পথ। এই ভাবেই বাগানের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হাজার ছাড়িয়েছে। স্কুল ক্যাম্পাস বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ক্যাম্পাসে ভেষজ বাগান তো হয়েছেই। এতে খুশি বাসববাবু। জানালেন, “কাজটাকে একটা প্রকল্পের আকারে পরিকল্পনা করে নাম দিই ‘ভেষজ সুরক্ষা’ প্রকল্প। নাটাবাড়ি এলাকার একটি স্কুল ও স্বাস্থ্যকন্দ্রে ভেষজ বাগান তৈরির মধ্য দিয়ে প্রকল্পের শুরু।”
ভেষজ বাগান তৈরির উদ্দেশ্য? বাসববাবুর মতে, নতুন প্রজন্ম ভেষজ গাছ চেনে না। লোকালয় থেকে ভেষজ গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ কত কার্যকারিতা। এই প্রকল্প ভেষজের সঙ্গে আত্মীয়তা বাড়াবে। ডিস্ট্রিক্ট আয়ুশ মেডিক্যাল অফিসার ডা. দেবব্রত তা একধাপ এগিয়ে জানালেন, “সর্দিকাশি, জ্বর, পেট খারাপের মতো ছোটখাট রোগভোগ সারাতে ভেষজ খুবই কার্যকর। বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। নাটাবাড়ি বিপিএইচসি-র বিএমওএইচ ডা. সত্যেন্দ্র কুমারও প্রকল্পের প্রশংসা করেছেন। জানিয়েছেন, “আমাদের সাবসেন্টারগুলিতে ভেষজ বাগান তৈরি হয়েছে। আশাকার্মীদের উৎসাহে গ্রামবাসীরাও বাগান করছেন। একই বক্তব্য ভেলাপাটা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ দাসের। জানালেন, “হারানো গাছপালা ফিরে আসবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। আমাদের স্কুলেও বাগান হয়েছে।” বাগান হয়েছে ভেলাপেটা সাবসেন্টারেও।
[আরও পড়ুন: ঝলমলে রোদ নাকি বৃষ্টিতে ভিজবে বাংলা? জেনে নিন কী বলছে হাওয়া অফিস]
The post তুফানগঞ্জে ভেষজ বিপ্লব! দশমাসে জন্ম নিল ১০২২ টি বাগান appeared first on Sangbad Pratidin.